১৯ বছর পর ফিরছে ব্ল্যাক: অ্যাডভেন্টরের আয়োজনে ‘ব্যাক টু স্কুল’
সময়টা ২০০২ সাল। ‘আমার পৃথিবী’ অ্যালবাম নিয়ে হাজির হলো ব্যান্ড ব্ল্যাক। সেই থেকে ‘ছায়ারা সরে যাবে, জানি সূর্য উঠবে’ গানের কথা মানুষের মুখে মুখে। বাংলাদেশের রক মিউজিকের পালাবদলের সময়ে ব্ল্যাক জায়গা করে নেয় সেরার তালিকায়। তাহসান খান, জন কবির, টনিরা হয়ে উঠেন পোস্টারবয়।
২০০২ সালে ব্যান্ডটির ‘আমার পৃথিবী’ অ্যালবাম প্রকাশিত হয়। ২০০৩ সালে বের হয় দ্বিতীয় অ্যালবাম ‘উৎসবের পর’। ২০০৮ সালে ‘আবার’। দাপুটে কয়েক বছরের পথচলার পর হঠাৎ-ই বদলে যায় পথ। চেনা ব্ল্যাক হয়ে যায় অচেনা। মনে দাগ কেটে নেওয়া সেই ব্যান্ড দলকে নিয়ে এক আকাশ আক্ষেপ কাজ করতো শ্রোতাদের। কবে তারা আবার একসঙ্গে হবেন? কবে তারা মঞ্চে উঠে সুর তুলবেন? ২০০৫ সালে ডি জুস কনসার্ট ছিল তাদের শেষ কনসার্ট। তারপর সময় পেরিয়ে গেছে, এক-দুটো নয়, ১৯টি বছর।
অপেক্ষার পালা এবার শেষ হতে চলল। ব্ল্যাক আবার ফিরছে স্টেজ শোতে, পুরোনো লাইনআপে। পাশাপাশি দাঁড়িয়ে গান গাইবেন তাহসান, জন। ড্রামসে থাকবেন টনি। জাহান গিটার ও মিরাজ বেসে। তাদের পথ মিলিয়ে দিয়েছে অ্যাডভেন্টর কমিউনিকেশনস। ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানটির ‘রক অ্যান্ড রিদম ৪.0’ আয়োজনে ব্যাক পারফর্ম করবে আগামী ১০ মে। জানা গেছে, ২ ঘণ্টা পারফর্ম করবে রক ব্যান্ডটি।
অ্যাডভেন্টর কমিউনিকেশনের চেয়ারম্যান জনি রাইজিংবিডিকে বলেছেন, ‘এক বছর ধরে আমাদের পরিকল্পনা বাংলাদেশের ব্যান্ড মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে ভিন্ন কিছু করার। ওই জায়গা থেকে আমাদের পরিকল্পনা ছিল নব্বই দশকের দর্শকদের মুখে মুখে থাকা ‘এবিসি’ লাইনআপ- আর্টসেল, ব্ল্যাক ও ক্রিপটিক ফেইট; তাদেরকে নিয়ে একটা আয়োজন করার। দূর্ভাগ্যবশত এবার আর্টসেলকে পাচ্ছি না। উনাদের দেশের বাইরে ওই সময়ে ট্যুর আছে। কিন্তু আমরা ব্ল্যাক ও ক্রিপটিক ফেইটকে পেয়েছি।’
‘সাথে অনি হাসান প্রায় ১১ বছর পর আবার স্টেজ শো করবেন। ওল্ড স্কুল আছে। তারা অনেক দিন আড়ালে ছিল। এখন আবার ফিরবেন স্টেজে। রিকল বাংলাদেশে কখনো শো করেনি। উনারা কানাডায় থাকেন। তাদের এবার প্রথম অভিজ্ঞতা হতে যাচ্ছে। পোপায়ে বাংলাদেশ আমাদেরই একটা শো করেছিল গত বছর। উনাদের একটা ভালো ফ্যানবেজ আছে। আমাদের এই শো এবার পুরোটাই ওল্ড স্কুল থিমে করা। আমরা হ্যাশট্যাগও ব্যবহার করছি, “ব্যাক টু স্কুল”। ওভাবেই আমাদের পরিকল্পনা করা।’ বলেন জনি।
ব্যান্ড মিউজিকের সঙ্গে থাকে ভাঙা-গড়ার খেলা, মান-অভিমানের এক আকাশ গল্প। ব্ল্যাকের ক্ষেত্রেও তা পাল্টায়নি। তবে জনপ্রিয় ব্যান্ডের সদস্যরা দলছুট হবার পরও নিজেদের আঙিনায় সফল। তাহসান গানের পাশাপাশি অভিনয় করছেন নিয়মিত। জন কবিরও সংগীতের সঙ্গে স্ক্রিনে হাজির হয়েছেন। ইদানীং নিজের পডকাস্টও করছেন। টনি দেশের বাইরে রয়েছেন। জাহান কেবল টিকিয়ে রেখেছেন ব্যান্ডটি। তার একাগ্র প্রচেষ্টাতেই ব্ল্যাক এখন নানা জায়গায় কনসার্ট করছে নতুন লাইনআপে।
চিরচেনা ব্ল্যাকের সবাইকে এক ছাতার নিচে আনার কাজটা সহজ ছিল না। তা উল্লেখ করে জনি বলেন, ‘ব্ল্যাককে ম্যানেজ করা বলতে পারেন এখন পর্যন্ত আমাদের করা সবচেয়ে কঠিন কাজগুলোর একটি। কারণ ব্ল্যাকের এই কনসার্ট দিয়ে ফেরাটা অনেক বড় ব্যান্ড, অনেক বড় কোম্পানি চেয়েছিল। কিন্তু কোনো না কোনো কারণে হয়ে উঠছিল না। সবাইকে একসঙ্গে ম্যানেজ করা। তাহসান ভাইয়ের সোলো ক্যারিয়ার। জন ভাইয়ের মিউজিকের আলাদা ক্যারিয়ার। জাহান ভাই ব্ল্যাককে নিয়ে আছেন। টনি ভাই দেশের বাইরে। মিরাজ ভাই তো মিউজিকের বাইরে।’
‘যার যার ব্র্যান্ড ভ্যালু আছে নিজস্ব জায়গায়। এখানে তাদের সম্মানীর ব্যাপার আছে, সময়ের ব্যাপার আছে…। সবকিছু মিলিয়ে তাদের সবাইকে একসঙ্গে ম্যানেজ করা…। এত বছর পর ব্ল্যাকের কনসার্ট, মানুষদের তাদের থেকে প্রত্যাশা… এটা ম্যাচ করে কনসার্টটি করা, উনাদের রাজি করানো এটা নিশ্চিতভাবেই কঠিন কাজ ছিল। তারাও আমাদের ওপর বিশ্বাস রেখেছে বলে কনসার্টটি করছেন। এই উদ্যোগ কিন্তু আগেও অনেকে নিয়েছিল। ফাইনালি আমরা পেরেছি। আশা করছি, ফ্রুটফুল একটা আয়োজন থাকবে।’
এই আয়োজনে নব্বইয়ের দর্শকদের আবার কনসার্টে হাজির করতে চায় অ্যাডভেন্টর কমিউনিকেশন। এজন্য হ্যাশট্যাগে ব্যবহার করেছে, “ব্যাক টু স্কুল”। এমন ভাবনার পেছনের কারণ জানাতে গিয়ে জনি বলেন, “নব্বইয়ের যারা দর্শক আছেন কিংবা তারও পরবর্তী সময়ে অনেকেই এই বর্তমান প্রজন্মের ব্র্যান্ডগুলোর সঙ্গে অ্যাটাচ হতে পারেন না। এর কারণও আছে, ব্যান্ডগুলো নতুন লাইনআপে শো করে। পুরোনো অনেকেই থাকে না। তাই হৃদয়ের মেলবন্ধনটা হয় না। আমরা সেই সব দর্শকদের কথা চিন্তা করেছি তারা যেন কনসার্টে আসে। তারা যেন বাংলাদেশের ব্যান্ড মিউজিক থেকে মুখ ফিরিয়ে না নেন। এজন্য এই কনসার্টটা শুধু ব্যান্ডগুলোর মিউজিক রি-ইউনিয়ন না, আমি বলব দর্শকদের রি-ইউনিয়নও।”
‘ব্ল্যাক এখনও কন্টিনিউ করছে। কিন্তু মানুষজনের ব্ল্যাক থেকে যে প্রত্যাশা, যে লাইনআপ সবসময় মানুষের মাথায় ঘুরে, সেই নব্বই দশকের ছেলে-মেয়েদের কথাই বলব আবার। ওরা যেই ব্ল্যাক দেখে এসেছে সেটা কিন্তু ছিল না। ব্ল্যাক মিসিং ছিল। এখন পুরোনো ব্ল্যাক আবার লাইমলাইটে।’ বলেন জনি।
টিকিটের দাম প্রকাশ করেছেন আয়োজকরা। চলছে প্রি-রেজিস্ট্রেশন। তাদের ইচ্ছা, টিকিটের দাম নাগালেই রাখা; যেন সবাই এই আয়োজনে সম্পৃক্ত হতে পারেন। দর্শকদের থেকে ভালো সাড়া পাচ্ছেন। এসব তথ্য উল্লেখ করে জনি বলেন, ‘আমাদের প্রতিটি আয়োজনে দর্শকদের একটা আগ্রহ থাকে। কিন্তু এই কনসার্টে দর্শকদের একটা অনুভূতি জড়িয়ে গেছে। যারা যোগাযোগ করছেন, তারা প্রত্যেকেই বেশ খুশি। আমরা নিজেরাও খুব উদ্বেলিত। মনে হচ্ছে, দায়িত্বটা বেড়ে গেছে। শুনলে অবাক হবেন দেশের বাইরে থেকেও অনেকে যোগাযোগ করছেন। তারা শুধু এই কনসার্টটির জন্য দেশে আসবেন। এটা আসলে হৃদয়ের ডাকে সাড়া দেওয়ার মতো। পুরোনো দিনগুলো ফিরিয়ে আনার আয়োজন। ইন্ডাস্ট্রির অনেক সিনিয়র সদস্যরা আমাদের সঙ্গে নিজেদের আগ্রহে যোগাযোগ করে জড়িত হচ্ছেন। এটা আমাদের জন্য বড় সম্মানের।’
ঢাকা/শান্ত