কানে পুরস্কার জয়: পরিচালক পায়েলকে কতটা জানেন
পায়েল কাপাডিয়া
পর্দা নেমেছে ৭৭তম কান চলচ্চিত্র উৎসবের। সমাপনী দিনে পুরস্কার বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়। চলতি বছর কান চলচ্চিত্র উৎসবের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পুরস্কার গ্রাঁ প্রিঁ জিতেছে ভারতীয় পরিচালক পায়েল কাপাডিয়ার ‘অল উই ইমাজিন অ্যাস লাইট’। কানে প্রদর্শনীর পর ৮ মিনিটের স্ট্যান্ডিং ওভেশন পেয়েছে এই সিনেমা। ৩০ বছরের মধ্যে প্রথম ভারতীয় সিনেমা, যা কান চলচ্চিত্র উৎসবের প্রধান প্রতিযোগিতা বিভাগে নিজের জায়গা করে নিয়েই জিতে নিয়েছে পুরস্কার।
‘অল উই ইমাজিন অ্যাস লাইট’ সিনেমা পুরস্কার জেতার পর হইচই পড়ে গিয়েছে সিনেমাটির পরিচালক পায়েল কাপাডিয়াকে নিয়ে। বলিউডের অনেক তারকা যেমন তাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন, তেমনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও শুভেচ্ছা বার্তা দিয়েছেন পায়েলকে। কানের মঞ্চে তাক লাগিয়ে দেওয়া পায়েলকে কতটা জানেন?
পায়েল কাপাডিয়া
১৯৮৬ সালে মুম্বাইয়ে জন্মগ্রহণ করেন পায়েল কাপাডিয়া। তার মা নলিনি একজন ভিডিও আর্টিস্ট। উচ্চ শিক্ষার জন্য পায়েল ভর্তি হন পুণের ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউটে। এখানে পড়াশোনা করার সময়ে বিভিন্ন কারণে খবরের শিরোনাম হয়েছেন তিনি। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধেই প্রতিবাদী হয়ে উঠেছিলেন পায়েল। আর এ কারণে তাকে অনুদান দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল সরকারি প্রতিষ্ঠানটি। ২০১৫ সালে পায়েল কাপাডিয়া ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউটের ছাত্রী। ওই সময়ে বিজেপি ঘনিষ্ঠ অভিনেতা গজেন্দ্র চৌহান প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান পদে নিযুক্ত হন। গজেন্দ্র মহাভারতের যুধিষ্ঠির চরিত্রের জন্য বেশ জনপ্রিয়। সেসময় সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গজেন্দ্র চৌহানের নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তুলছিলেন বেশ ক’জন ছাত্রছাত্রী। প্রায় ৪ মাসব্যাপী বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছিলেন তারা। সেই বিক্ষোভের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য পায়েলের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি।
কানের মঞ্চে পায়েল ও অন্যান্য
এক জটিলতা শেষ হওয়ার পর একই বছর পরিচালক প্রশান্ত পাঠরাবেকে বন্দি করে রাখার জন্য ৩৫জন ছাত্রছাত্রীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছিল। এ মামলায়ও নাম ছিল পায়েলের। মোট সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছিল স্থানীয় পুলিশ। এ ঘটনায় অভিনেতা রাজকুমার রাও, নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকী, অনুপম খেরসহ অনেকে ফিল্ম ইনস্টিটিউটে বিক্ষোভের প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। তবে সৌমিত্র চট্রোপাধ্যায়, ঝানু বড়ুয়াসহ কয়েকজন উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। যাহোক, ছাত্রছাত্রীদের বিক্ষোভের জেরে সেই সময় ইস্তফা দিতে বাধ্য হন গজেন্দ্র চৌহান। তবে এসবের জন্য পায়েলকে হোস্টেল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল।
এ ঘটনার দুই বছর পর অর্থাৎ ২০১৭ সালে ফিল্ম ইনস্টিটিউট পায়েলকে ফের সমর্থন করার সিদ্ধান্ত নেয়। যখন পায়েল নির্মিত ‘আফটারনুন ক্লাউডস’ সিনেমাটি কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের জন্য নির্বাচিত হয়। ওই বছর স্টুডেন্ট ফিল্ম বিভাগে সেরা ১৬টি সিনেমার মধ্যে পায়েলের স্বল্পদৈর্ঘ্য এই চলচ্চিত্রও ছিল।
‘অল উই ইমাজিন অ্যাস লাইট’ সিনেমার দৃশ্য
২০১৭ সালে ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউটের পরিচালক ছিলেন ভূপেন্দ্র কাইন্থোলা। পায়েলকে সমর্থন দেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেছিলেন, ‘পরে পায়েল কাপাডিয়া ক্যাম্পাসে শৃঙ্খলা মেনে চলেছিল। তাই আমরা তাকে সমর্থন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যারা বিক্ষোভ করেছিল, তাদের মধ্যে অনেক ছাত্রছাত্রী নিজের কাজের জন্য অনুতপ্ত, তাদের মধ্যে কেউ কেউ পরে এসে কান্নাকাটিও করেছে।’
পায়েল নির্মিত ‘অল উই ইমাজিন অ্যাস লাইট’ সিনেমার বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন কানি কুশ্রুতি, দিব্যা প্রভা, ছায়া কদম, ঋধু হারুন।
ঢাকা/শান্ত