ঢাকা     শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ||  অগ্রহায়ণ ৯ ১৪৩১

ছুটে গিয়ে দেখি, জয়ার দু’চোখ বেয়ে জল পড়ছে: অরিন্দম শীল

বিনোদন ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:০৬, ১ জুলাই ২০২৪   আপডেট: ১৩:৫৬, ১ জুলাই ২০২৪
ছুটে গিয়ে দেখি, জয়ার দু’চোখ বেয়ে জল পড়ছে: অরিন্দম শীল

বাংলাদেশের সীমানা পেরিয়ে ওপার বাংলায় নিজের খ্যাতি ছড়িয়েছেন অভিনেত্রী জয়া আহসান। বেশ ক’টি ভারতীয় বাংলা সিনেমা উপহার দিয়েছেন তিনি। গত বছর হিন্দি সিনেমায়ও অভিষেক হয়েছে এই গুণী অভিনেত্রীর।

২০১৩ সালে ‘আবর্ত’ সিনেমার মাধ্যমে ভারতীয় বাংলা সিনেমায় অভিষেক ঘটে জয়া আহসানের। এটি পরিচালনা করেন কলকাতার অভিনেতা-নির্মাতা অরিন্দম শীল। আজ জয়ার জন্মদিন। বিশেষ এই দিনে জয়াকে নিয়ে ভারতীয় একটি গণমাধ্যমে কলম ধরেছেন অরিন্দম শীল। চলুন এই অভিনেতা-নির্মাতার চোখে জয়া আহসানকে দেখে নিই—

১ জুলাই জয়ার জন্মদিন। অভিনেত্রী হিসেবে ও অনেকটা পথ পেরিয়ে এলো, ভেবেই আমার ভালো লাগছে। অনেকেই জানেন, এপার বাংলায় জয়ার প্রথম সিনেমা (আবর্ত) আমার পরিচালনায়। তাই আজ ওর জন্মদিন উপলক্ষে লিখতে বসে অনেক পুরোনো কথা পর পর মনে পড়ছে। অভিনেত্রী জয়া এপার বাংলার দর্শকদের কাছে এখন পরিচিত মুখ। কিন্তু আজকের এই লেখায় আমি ওকে কীভাবে খুঁজে পাই, সেই অজানা গল্প দিয়ে শুরু করতে চাই।

আরো পড়ুন:

আমি শুরু থেকেই তারকা নয়, চরিত্রের কথা ভেবে অভিনেতা নির্বাচনের চেষ্টা করি। সেভাবেই ‘আবর্ত’ সিনেমায় জয়াকে নির্বাচন করা। এপার বাংলায় তখন ‘চারু’ চরিত্রের জন্য অভিনেত্রীর খোঁজ করছি। অথচ চরিত্রটির জন্য একাকিত্ব, নিষ্পাপ, শান্ত একটা মুখ কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না। তখন বাংলাদেশের কয়েকজন বন্ধু আমাকে জয়ার কথা বলেন। সেটি ২০১০ সাল। মনে আছে, আমার বাড়ির বারান্দায় দাঁড়িয়ে জয়াকে ফোন করেছিলাম। তখন মোবাইলে আইএসডি খুব খরচসাপেক্ষ ছিল। জয়া আমাকে বলল, ‘দাদা আমি ঢাকা থেকে অনেক দূরে শুটিং করছি। আপনাকে আমার কাজের কিছু নমুনা পাঠাচ্ছি। আপনি দেখে নিন। তারপর আমরা কথা বলব।’

‘আবর্ত’ সিনেমার চিত্রনাট্য তৈরি হয়েছিল প্রায় আড়াই বছর ধরে। সিনেমাটি মুক্তি পায় ২০১৩ সালে। তো, যে কথা বলছিলাম, জয়ার সঙ্গে সেই ফোনাফুনির পর বেশ কিছু দিন কেটে গেল। ততদিনে আমি বাংলাদেশে ওর অভিনীত কিছু নাটক দেখে ফেলেছি। সিনেমায় ওকে নেওয়ার জন্য আমার সিদ্ধান্ত তখন চূড়ান্ত।

‘আবর্ত’ সিনেমার শুটিং সেটে জয়া-অরিন্দম শীল

জয়া আর আমি এরপর নিয়মিত ফোনে ‘সিন’ পড়তাম। আলোচনা করতাম। ও ওর মতামত জানাতো। ওই দু’বছরে আমাদের ফোনের আইএসডি খরচ যে কত হয়েছিল! সব হয়ে যাওয়ার পর ঢাকায় ওর সঙ্গে আমার প্রথম দেখা ও আলাপ। ঢাকারই এক প্রযোজক ও পরিচালকের অফিসে বসে জয়াকে সিনেমাটির গোটা চিত্রনাট্য পড়ে শুনিয়েছিলাম।

মনে আছে, সে সময় বাংলাদেশের একজন অভিনেত্রীকে সিনেমাটিতে ‘কাস্ট’ করার জন্য আমাকে অনেক সমালোচনা সহ্য করতে হয়েছিল। তখন ওটিটি ছিল না। কথায় কথায় দুই বাংলার শিল্পীরা একসঙ্গে কাজ করতেন না। সেখানে জয়া নতুন মুখ। কিন্তু আমি আমার ‘ইনস্টিংক্ট’ থেকে কিছু বিষয় বুঝে এগিয়েছিলাম। পরে সিনেমা মুক্তির পর আমার সিদ্ধান্ত যে সঠিক ছিল, তা প্রমাণিত হয়েছিল।

পরবর্তী সময়ের একটি ঘটনা মনে পড়ে। সেটি নিয়েও খুব তর্ক-বিতর্ক হয়। ‘ঈগলের চোখ’ সিনেমায় অনির্বাণের (অনির্বাণ ভট্টাচার্য) সঙ্গে ওর চুম্বন দৃশ্য! আমি দেখতাম, জয়া সেসব কিছুকে পাত্তা না দিয়ে অভিনয়ে মন দিতে পারে বার বার।

জয়া প্রসঙ্গে একটি ঘটনা না বললেই নয়। ‘আবর্ত’ সিনেমার শেষ দিনের শুটিং। লোকেশনের ফ্ল্যাটটি আমার বন্ধু হর্ষ নেওটিয়ার। লাঞ্চ ব্রেকের পর কাজ শুরু হবে। হঠাৎ আমার একজন সহকারী এসে বললেন, ‘দাদা, জলদি আসুন। জয়াদি খুব কান্নাকাটি করছেন!’ আমি ছুটে যেতেই দেখলাম, জয়ার দু’চোখ বেয়ে জল পড়ছে। করুণ মুখে বলল, ‘দাদা, বাবা আর নেই!’

আমি সঙ্গে সঙ্গে ওকে ঢাকা ফিরে যেতে বললাম। কিন্তু জয়া আমাকে যা বলেছিল, আজও আমার স্পষ্ট মনে আছে। ও বলেছিল, ‘দাদা, আজকে শুটিং শেষ করতে না পারলে তো অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে। আমি সিনটা করি।’

আমি ওর কথা শুনে হতবাক। কী বলব, বুঝতে পারছি না, কিছুক্ষণ চুপ থেকে আমি ওকে তা-ও কাজ করতে বারণ করেছিলাম। তৎক্ষণাৎ ওর ঢাকা ফেরার ব্যবস্থা করলাম। হর্ষকে জানাতেই ও বলল, ‘বাড়িটা রাখাই থাকবে।’ সবকিছু মিটিয়ে জয়া কলকাতায় আসার পর আমরা সিনেমার শুটিং শেষ করেছিলাম। এই হচ্ছে জয়া আহসান।

‘আবর্ত’ সিনেমার পর টলিপাড়ার প্রায় প্রতিটি ভালো পরিচালকের সঙ্গে জয়া কাজ করেছে। চরিত্রের জন্য ও প্রচুর পরিশ্রম করতে পারে। আর অভিনয় করতে গিয়ে ওর একটা দৃষ্টিভঙ্গি আমাকে মুগ্ধ করে। সেটি হলো, সব সময় প্রশ্ন করে, “দাদা, অভিনয় রিনি তো? ‘বিহেভ’ করেছি তো?”

জয়া হল আক্ষরিক অর্থেই ‘ডিরেক্টরস অ্যাক্টর’। মন দিয়ে কাজ করে। কাজের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। শুটিং ফ্লোরে থাকলে, তখন বাইরের পৃথিবীতে কী চলছে, সেটি ও ভুলে যায়। তখন অভিনয়, অভিনয় এবং অভিনয়ই ওর শেষ কথা!

বাংলাদেশে গেলে আমার শপিং গাইড জয়া। কোথায় ভালো শাড়ি ও পোশাক পাওয়া যায়, সেখানে জয়া আমাকে সঙ্গে করে নিয়ে যায়। ওর মায়ের হাতের রান্না অসাধারণ। ও জানে, আমি কী কী খেতে পছন্দ করি। তাই কলকাতায় এলে মায়ের হাতের লঙ্কার আচার ও ভুনা গোস্ত আমার জন্য নিয়ে আসে জয়া। সে স্বাদ ভোলা কঠিন।

জয়ার সঙ্গে মাত্র দুটি কাজ করেছি। প্রায় ১২ বছর হয়ে গেল। আমি ওর সঙ্গে আবার কাজ করতে চাই। জয়াও আমার সঙ্গে আবার কাজ করতে ইচ্ছুক। কিন্তু পরিচালক হিসেবে যত দিন কোনো শক্তিশালী মুখ্যচরিত্র ওর জন্য তৈরি করতে না পারব, তত দিন আমিও অপেক্ষা করতে চাই।

জয়াকে নিয়ে আমি খুবই গর্বিত। অভিনেত্রী হিসেবে ও বার বার আমাদের চমকে দিয়েছে। আরো অনেকটা পথ ওকে অতিক্রম করত হবে। জন্মদিনে আমার কামনা, জয়া যেন ওর পারিবারিক জীবনে সুখে শান্তিতে থাকে। ভবিষ্যতে যেন ও আরো ভালো কাজ করে, সেটাই চাই। ওর সঙ্গেও খুব দ্রুত একটা নতুন কাজ শুরু করার অপেক্ষায় রয়েছি।

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়