ঢাকা     শনিবার   ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  ভাদ্র ২৩ ১৪৩১

এই আন্দোলন নাগরিকের সমমর্যাদার জন্য: মোস্তফা সরয়ার ফারুকী

বিনোদন ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:১৯, ১৭ জুলাই ২০২৪   আপডেট: ১৩:২৮, ১৭ জুলাই ২০২৪
এই আন্দোলন নাগরিকের সমমর্যাদার জন্য: মোস্তফা সরয়ার ফারুকী

জনপ্রিয় নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। নির্মাণ ক্যারিয়ারে বেশ কিছু দর্শকপ্রিয় নাটক-চলচ্চিত্র উপহার দিয়েছেন। পলিট্রিক্যাল গল্প নিয়ে নির্মাণ করেছেন ‘৪২০’-এর মতো দীর্ঘ ধারাবাহিক। কাজের বাইরেও সমসাময়িক নানা বিষয় নিয়েও কথা বলতে দেখা যায় তাকে। নিজের এসব ভাবনা প্রকাশের জন্য বেছে নেন সোশ্যাল মিডিয়া।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সহিংসতা ছড়িয়েছে। এবার এ নিয়ে নিজের ভাবনা তুলে ধরলেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। বুধবার (১৭ জুলাই) দুপুরে নিজের ফেসবুকে দীর্ঘ একটি স্ট্যাটাস দিয়ে বেশ কিছু বিষয়ে আলোকপাত করেন। এ লেখার শুরুতে ফারুকী বলেন, ‘আপনারা যারা ভাবছেন আন্দোলনটা স্রেফ একটা চাকরির জন্য, তারা বোকার স্বর্গে আছেন। আপনারা এর সবগুলা স্লোগান খেয়াল করেন। দেখবেন, এই আন্দোলন নাগরিকের সমমর্যাদার জন্য। এই আন্দোলন নিজের দেশে তৃতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে না বাঁচার জন্য।’

রাষ্ট্র জনগণকে পাত্তা দেয় না, চলমান আন্দোলন সেই বার্তা দিচ্ছে বলে মনে করেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। তার ভাষায়— ‘এই আন্দোলন রাষ্ট্রক্ষমতায় যারা আছেন তাদের মনে করিয়ে দেয়ার জন্য যে, দেশের মালিক তারা না। আসল মালিক জনগণ। সেই জনগণকে রাষ্ট্র যে পাত্তা দেয় না, এই আন্দোলন সেটার বিরুদ্ধেও একটা বার্তা। রাষ্ট্র জনগণকে কেন পাত্তা দেয় না এই আন্দোলনকারীরা সেটাও বোঝে। যে কারণে ভোটের বিষয়টাও স্লোগান আকারে শুনেছি। আমি এটাকে এইভাবেই পাঠ করছি।

সরকারি বেতনভুক্ত ব্যক্তিকে ‘পাবলিক সারভেন্ট’ ডাকা উচিত বলে মনে করেন ফারুকী। তার মতে, ‘পাবলিক সারভেন্ট শব্দটা বেশ ভালো। নির্বাচিত (!) প্রতিনিধি বা যেকোনো সরকারি বেতনভুক্ত ব্যক্তিকে এই শব্দেই ডাকা উচিত সবসময়। এই আন্দোলন সেই পাবলিক সারভেন্টদের মনে করিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে, আপনি আমার কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য।’

শহিদের রক্ত বিফলে যায় না, তা উল্লেখ করে ফারুকী বলেন, ‘অল পাওয়ার টু দ্য পিপল। অল পাওয়ার টু দ্য ইয়ুথ। প্রেয়ারস ফর মাই ফেলো সিটিজেনস। শহিদের রক্ত কখনো বিফলে যায় না।’

ফুটনোট বেশ কিছু বিষয় ব্যাখ্যা করেন ফারুকী। এর শুরুতে তিনি বলেন, ‘ব্যক্তিগত কৈফিয়ত! এই যে এত লম্বা লেখাটা লিখলাম, এটা আসলে আমি লিখিনি। আমি মুখে বলেছি একজন ট্রান্সক্রাইব করে দিয়েছে। যারা আমার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানেন, তারা জানেন যে; আমি শারীরিকভাবে এখনো পুরোপুরি সুস্থ না! ফলে আমার সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার সীমিত।’

কিছু দিন আগে কোটা আন্দোলন নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে তা মুছে ফেলেন ফারুকী। তার কারণ ব্যাখ্যা করে এই পরিচালক বলেন, ‘কোটা আন্দোলন নিয়ে আমি কিছুদিন আগে একটা স্ট্যাটাস দিয়ে সরিয়ে ফেলেছি। কারণ, একটা স্ট্যাটাস দিলে আমার মাথার মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়! পরবর্তীতে আরেকটা কথা লিখতে ইচ্ছা হয় এবং লিখতে থাকলে যত বেশি এংগেজড হই সেটা আমার শারীরিক অবস্থার জন্য ভালো না।’

‘আমার শরীর সুস্থ করার জন্য যে লড়াইটা সেটা এক দীর্ঘ লড়াই। সেই লড়াইটা করার অনুমতি নিশ্চয়ই পেতে পারি? কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হচ্ছে, আমার স্ট্যাটাসটা সরিয়ে ফেলার পর থেকে আজকে পর্যন্ত বিভিন্ন অনলাইন এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকে লিখেছেন যে, আমি দালাল হয়ে গেছি এই কারণে চুপ হয়ে আছি। এখন সোশ্যাল মিডিয়ার বিপদ হচ্ছে, আপনাকে প্রতিদিন প্রমাণ করতে হবে আপনি কে!’ বলেন ফারুকী।

ফারুকী মনে করেন তাকে নিয়ে গবেষণা না করেই ‘দালাল’ তকমা দেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আজকে রাষ্ট্র যে অবস্থায় এসেছে এ অবস্থায় আসার শুরু যখন হয়েছিল তখন থেকে তারা যদি আমার ফেসবুকের লেখাগুলো একটু গবেষণা করে দেখতো, তাহলে বুঝতে পারত আমি কে, আমি কি বলেছি এবং কি বলার কারণে আমি বারবার বিপদে পড়ি! কোনো রিসার্চ নাই, জাস্ট ঢালাওভাবে দালাল বলে দাও।’

শাহবাগ আন্দোলনের ঘটনা স্মরণ করে ফারুকী বলেন, “আজকে যে বাইনারি চলছে, হয় তুমি আমার পক্ষে না হয় তুমি আমার বিপক্ষে। এই বাইনারির বিপক্ষে আমি ২০১৪ সালে একটা লেখা লিখেছিলাম ‘কিন্তু এবং যদির খোঁজে’ বাংলাদেশ প্রতিদিনে ছাপা হয়েছিল। মনে রাখতে হবে ওই সময় ছিল শাহবাগের সময়। ২০১৩ সালে যখন শাহবাগে আন্দোলন শুরু হলো, তখন বাইনারি এমন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল যে, বলতে শুরু হলো ‘কিন্তু এবং যদি’ যে বলবে সেই রাজাকার। সেই ছাগু। সেই ছাগু ট্যাগটাকে আমি গলার মালা হিসেবে নিয়ে লিখেছিলাম ‘কিন্তু এবং যদির খোঁজে’। কিছুদিন আগেও আমি বলেছি, স্বাধীনতাকে প্রশ্ন করতে পারাটাই স্বাধীনতা!”

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত বিষয়:

ঘটনাপ্রবাহ

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়