শুটিংয়ের অজানা গল্প বললেন শাকিব-চঞ্চল-নাবিলা
জ্যেষ্ঠ বিনোদন প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম
শাকিব খান অভিনীত আলোচিত সিনেমা ‘তুফান’। প্রেক্ষাগৃহে মুক্তির পর বক্স অফিসে দারুণ সাড়া ফেলে এটি। গত ১৯ সেপ্টেম্বর দুটি ওটিটি প্ল্যাটফর্মে একযোগে মুক্তি পেয়েছে সুপারহিট সিনেমা ‘তুফান’। সিনেমাটি নিয়ে আগ্রহ-উন্মাদনা এখনো কমেনি। অন স্ক্রিন সিনেমা দেখার পর দর্শকের আগ্রহ অফ স্ক্রিনের গল্প শোনার। সেই আগ্রহের কথা মাথায় রেখে সিনেমাটির কেন্দ্রীয় তিন অভিনয়শিল্পী শাকিব খান, নাবিলা ও চঞ্চল চৌধুরী জানিয়েছেন বেশ কিছু অজানা গল্প।
‘তুফান’ সিনেমার মাধ্যমে দীর্ঘদিন পর বড় পর্দায় ফিরেছেন মাসুমা রহমান নাবিলা। তিনি বলেন, ‘‘তুফান’-এ আমি যাদের সঙ্গে কাজ করেছি, কর্মক্ষেত্রে তাদের অভিজ্ঞতা আমার চেয়ে অনেক বেশি। তাই আমি বেশি নার্ভাস ছিলাম।’’
‘‘এর আগে চঞ্চল ভাইয়ের (চঞ্চল চৌধুরী) সঙ্গে ‘আয়নাবাজি’ সিনেমায় আমার কাজের অভিজ্ঞতা আছে, তাই তার সঙ্গে নার্ভাসনেসটা কম ছিল। তবে শাকিব খানের সঙ্গে প্রথম দিন কাজ করতে গিয়ে খুব নার্ভাস ছিলাম। মিমির (মিমি চক্রবর্তী) সঙ্গে প্রথম শটের দিন আমি দূর থেকে তাকে দেখছিলাম। প্রথম দেখাতেই মিমি আমাকে হাত নেড়ে সম্বোধন করে। সেটা আমার কাছে ওয়েলকামিং ছিল এবং নার্ভাসনেস কমিয়ে দিয়েছিল।” বলেন নাবিলা।
শাকিব খানের সঙ্গে শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা জানিয়ে নাবিলা বলেন, ‘শাকিব খানের সঙ্গে প্রথম শটের আগে ভালো প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। কারণ সে সুপারস্টার। সিনেমায় আমাদের দুজনের লাস্ট সিনটাই ছিল শুটিং সেটে আমাদের প্রথম সিন। আমি খুব নার্ভাস ছিলাম। তবে ধীরে ধীরে শাকিব খান আমাকে অনেক বেশি ইজি করে ফেলেন। তিনি লাভলি কো স্টার এবং তিনি তার কাজটা সুন্দর করে করে ফেলন।’
নার্ভাস হওয়ার কথা এখন বললেও শুটিং সেটে নাবিলাকে দেখে তা মনে হয়নি শাকিবের। তার ভাষায়— ‘ইনফ্যাক্ট নাবিলা আজকে বলছে সে নার্ভাস ছিল। নাবিলাকে দেখে বোঝাই যায়নি।’
এদিকে শাকিব খানের সঙ্গে প্রথম দৃশ্যধারণের অভিজ্ঞতা নিয়ে চঞ্চল চৌধুরী বলেন, ‘শাকিব খানের সঙ্গে প্রথম যে দৃশ্যটি ছিল, সেটা শুট করতে গিয়ে আমি ওরকম কোনো আচরণই করিনি যে, এটা আমার আর শাকিবের প্রথম স্ক্রিন শেয়ার করা। রেকর্ডে যাওয়ার আগে থেকেই আমি অভিনয়ে ঢুকে গেছি। একটা পর্যায়ে শাকিব খান ভেবেছিলেন আমি হয়তো অন্য কথা বলছি। কিন্তু ওটা রিহার্সেল ছিল।’
শাকিব খান বলেন, ‘অভিনয়শিল্পীদের নার্ভাসনেস কাজ করে অফস্ক্রিনে। ধরেন, প্রথমবার দেখা হলো, প্রথম কাজ করার কথা হচ্ছে, তখন কিছুটা নার্ভাস লাগে। কিন্তু যখন ক্যামেরার সামনে চলে যাই, তখন আর কোনো নার্ভাসনেস কাজ করে না।’
সহশিল্পী হিসেবে কার কাকে পছন্দ? এ প্রশ্নের উত্তর দিতে সবাই অনীহা প্রকাশ করেন। তবে শাকিব খান বলেন, ‘আমি আমার সব সিনেমাতেই খুব অনেস্ট। যখন যে সিনেমা করেছি, সেই সিনেমার হিরোইন আমার প্রিয় সহশিল্পী।’
নিজের কথা না বললেও শাকিব–চঞ্চলের রসায়ন নিয়ে কথা বলেছেন নাবিলা। তিনি বলেন, ‘এখানে পছন্দের সহশিল্পীর নাম বলা আমাদের জন্য কঠিন হলেও শাকিব খানের ব্যাপারে বলতে পারি। তার প্রিয় সহশিল্পী চঞ্চল চৌধুরী। অফস্ক্রিনে তারা সারাক্ষণই ব্রাদারহুড মুডে ছিলেন।’
‘তুফান’ রায়হান রাফীর স্বপ্নের সিনেমা। প্রথম দিন থেকেই এ কথা শুনেছেন শাকিব খান। সুপারস্টারের ভাষ্যে, ‘রাফী আমাকে বলেছে যে, সে কোনো সেক্টরে কম্প্রোমাইজ করতে চায় না। ও যে স্বপ্নটা দেখেছে সেটাই করেছে।’
রায়হান রাফীর সঙ্গে শাকিব, চঞ্চল, নাবিলা, মিমি— চারজনেরই প্রথম কাজ। চঞ্চল চৌধুরী জানান, শুটিং সেটে সংলাপে অনেক পরিবর্তন এসেছে। শাকিব যোগ করে বলেন, ‘‘রাফী ‘তুফান’ সিনেমাকে কমার্শিয়াল এবং ক্ল্যাসিক্যাল ঢংয়ে বানাতে চেয়েছে। অনেক পরেও যদি সিনেমাটি কেউ দেখেন, তাহলে তার এটা মনে হবে।”
রায়হান রাফী কতটা খুঁতখুঁতে, তা বোঝাতে শুটিংয়ের একটি ঘটনা বর্ণনা করেন নাবিলা। তার ভাষায়, ‘আমার ছোট একটা সিনে নির্দিষ্ট একটা প্রপ দরকার ছিল। কিন্তু প্রপটা আসেনি। আমি রেডি, সেট রেডি, সব রেডি। অনেক দূরে শুটিং করছিলাম আমরা। প্রপটা আসতে অনেক সময় লাগবে। তারপরও সেটার জন্য আমরা সারাদিন বসেছিলাম। সবাই রাফীকে বলার চেষ্টা করছিল যে, প্রপটা ছাড়াই শুটিং করি। কিন্তু রাফী নাছোড়বান্দা, ওটা তার লাগবেই। ওইদিন আমার একটা শটই ছিল। একটা শটের জন্য আমি সারাদিন বসেছিলাম।’
‘তুফান’ সিনেমার জনপ্রিয় সংলাপ ‘খুব ভয় পাইছি রে…’। এটি চঞ্চল চৌধুরীর মুখে শোনা যায়। সংলাপটি তৈরির গল্প বলতে গিয়ে অভিনেতা বলেন, ‘‘এ সংলাপটা আগে কোথাও লেখা ছিল না। শুটিংয়ের সময় ইনসট্যান্ট রাফী আমাকে বললো, ‘চঞ্চল ভাই এ ডায়লগটা আমার লাগবে।’’
নাবিলা বলেন, ‘স্ক্রিপ্টের ওই স্পন্টিনিয়াস পরিবর্তনের কারণেই আমাদের অভিনয়টাও স্পন্টিনিয়াস হয়েছে, রিয়েলিস্টিক লেগেছে।’
‘তুফান’ সিনেমার শুটিং সেটে কে আগে উপস্থিত হতেন? চঞ্চলের মতো সবাই ফার্স্ট ছিলেন। আর তিনি নাকি ছিলেন ফার্স্টের চেয়েও ফার্স্ট। চঞ্চল বলেন, ‘আমি কল টাইমের আগেই রেডি হয়ে বসে থাকতাম, নিজেই গাড়ি কল করতাম, যে সহকারী আমাকে নিতে আসবে তার খবর নিতাম।’
এ বিষয়ে শাকিব খান বলেন, ‘কাজটার ব্যাপারে সবারই খুব ভালোবাসা ছিল, সবাই এক্সাইটেডও ছিল। আমাকে প্রতিদিন ওয়েদার রিপোর্ট দেয়া হতো। একসময় আমি বলে দিয়েছিলাম, আমাকে ওয়েদার রিপোর্ট যেন আর না দেয়া হয়। যখন হোটেল থেকে নেমে গাড়িতে উঠেছি, আবার গাড়ি থেকে নেমে ভ্যানে গিয়েছি, ওইটুকু সময়ে যে গরম লাগত, মনে হতো আজকে আর শুটিং করতে পারব না ভাই, ইমপসিবল। কিন্তু যখন কাজে ঢুকে গেছি, তখন আর গরম লাগেনি।’
ঈদুল আজহা উপলক্ষে ১৭ জুন দেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘তুফান’। দেশের বাইরেও ঝড় তুলেছিল এ সিনেমা। আদনান আদিব খান, রায়হান রাফীর গল্পে, আদনান আদিব খানের চিত্রনাট্যে সিনেমায় শাকিব খানকে দ্বৈত চরিত্রে দেখা গেছে। এ নায়কের বিপরীতে অভিনয় করেছেন ভারতের মিমি চক্রবর্তী এবং বাংলাদেশের নাবিলা।
সিনেমাটি প্রযোজনা করেছে আলফা-আই স্টুডিওস লিমিটেড; ডিজিটাল পার্টনার চরকি এবং ইন্টারন্যাশনাল ডিস্ট্রিবিউটর হিসেবে আছে এসভিএফ।
ঢাকা/রাহাত/শান্ত