ঢাকা     বুধবার   ০২ অক্টোবর ২০২৪ ||  আশ্বিন ১৭ ১৪৩১

চিন্তাও করিনি বেঁচে ফিরব: গায়ক অনিক

শাহিন শুভ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:২০, ২ অক্টোবর ২০২৪   আপডেট: ১৬:৩৭, ২ অক্টোবর ২০২৪
চিন্তাও করিনি বেঁচে ফিরব: গায়ক অনিক

গানের রিয়েলিটি শো ‘ইয়াং স্টার’-এ অংশ নিয়ে প্রথম আলোচনায় আসেন কণ্ঠশিল্পী অনিক সূত্রধর। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময়ে ‘তুমি কে আমি কে রাজাকার রাজাকার’ শিরোনামের গান কণ্ঠে তুলে দারুণ আলোচনায় উঠে আসেন তিনি। তারপর তৎকালীন শাসক দলের নেতা-কর্মীদের রোষানলে পড়েন। বাধ্য হয়ে আত্মগোপনে চলে যান অনিক। দুর্বিষহ সেই দিনগুলো নিয়ে রাইজিংবিডির সঙ্গে কথা বলেছেন গায়ক অনিক সূত্রধর।

রাইজিংবিডি: একটি গান আপনার জীবনে বাঁকবদল এনেছে। আন্দোলনের সময়ে গানটি কেন গেয়েছিলেন?
অনিক:
মূলত, গানটি ছিল ‘তুমি কে আমি কে রাজাকার রাজাকার’। ওই সময়ে ছাত্র আন্দোলন চলার কারণে গানটি বেছে নিয়েছিলাম। ছাত্রদের পক্ষ থেকে গানটি গাওয়া। একটা ন্যায় দাবির জন্যই গানটি গেয়েছিলাম; যাতে ছাত্রদের আন্দোলন আরো বেগবান হয়। পরবর্তীতে গানটি রাজনৈতিক ইস্যু হয়ে দাঁড়ায়।

রাইজিংবিডি: এ গানের আসল রচয়িতা কে?
অনিক:
গানটি তাসরিফ (তাসরিফ খান) ভাইয়ের লেখা। সুর ও কণ্ঠ দিয়েছি আমি। গানটি গাওয়ার কারণে মোটামুটি মাস খানেক সাফার করেছি। আমার পরিবার ভুগেছে। কোথাও বের হতে পারিনি; গা ঢাকা দিয়ে থাকতে হয়েছে।  

আরো পড়ুন:

রাইজিংবিডি: আত্মগোপনে থাকার কারণ জানতে চাই।
অনিক:
গানটা গাওয়ার অল্প সময়ের মধ্যেই দারুণ জনপ্রিয়তা পায়। গানটা প্রকাশ পাওয়ার পরেই আমার এলাকায় তৎকালীন সরকারের মতাদর্শের নেতা-কর্মীদের কাছ থেকে ফোন আসতে থাকে। এরপর তারা চাপ দিতে থাকেন, কেন আমি এই গান গাইলাম। এরপর তৎকালীন সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকতাদেরও ফোন আসে আমার নাম্বারে। চাপ আসতে থাকে, বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে কথা বলেন তারা।

রাইজিংবিডি: আপনাকে কি প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়েছিল?  
অনিক:
না। আমার কাছে প্রাণনাশের হুমকি আসেনি। তবে ভয়ে-আতঙ্কে থাকতাম। কখন কি হয়ে যায়! ওই সময়ে প্রতিবাদী গান গাওয়ার জন্য হান্নান ভাইকে ১৩ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছিল। এরপর যারাই প্রতিবাদ করেছে, তাদেরকে খুঁজে খুঁজে বের করেছে। বিশেষ করে আমরা যারা কনটেন্ট ক্রিয়েটর ছিলাম, তাদের উপর খুবই চাপ ছিল। যার কারণে ওই সময়ে নিজেকে নিরাপদ রাখতে হয়েছে। বাইরে বের হলেই অ্যাটাক হওয়ার আতঙ্কে থাকতাম। যারা চাপ দিয়েছেন, তারা আমাকে পেলে হয়তো মারধর করতেন! কোথাও নিয়ে বন্দি করেও রাখতে পারতেন। এসব কারণে আতঙ্কে ছিলাম।

রাইজিংবিডি: কোথায় আত্মগোপনে ছিলেন?
অনিক:
আমি আমার দুঃসম্পর্কের এক আত্মীয়র বাড়িতে ছিলাম। কিন্তু কোথায় ছিলাম সেই জায়গার নাম বলব না। যেখানে ছিলাম তাদেরও নিরাপত্তার একটা বিষয় রয়েছে। যারা বিপদের দিনে সাহায্য করেছেন, তাদেরকে বিপদে ফেলতে চাই না। এতটুকু বলতে পারি, ওটা ছিল একটা সীমান্ত এলাকা।

রাইজিংবিডি: গানটি গাওয়ার পর আপনার পরিবারের প্রতিক্রিয়া কী ছিল?
অনিক:
প্রথমে বিষয়টিকে সবাই নেতিবাচকভাবে নিয়েছিলেন। সবাই বলছিলেন, এই গানটা গাওয়ার সাহস কেন করলে? এটা তো সরকার বিরোধী গান। তবে আমার ইনটেনশন সরকারের বিরুদ্ধে ছিল না। আমার ইনটেনশন ছিল, এই গান দ্বারা যেন কোটার সংস্কার হয়; সেই চিন্তা থেকেই গানটি গেয়েছিলাম।

রাইজিংবিডি: আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় আপনার পরিবারের উপরে কেমন প্রভাব পড়েছিল?
অনিক
: আমার পরিবারের উপর এর খুব একটা প্রভাব পড়েনি। কারণ আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় আমার পরিবারের সঙ্গে আমার কোনো যোগাযোগ ছিল না। আমার পরিবারের সদস্যদেরকেও তারা ভালোভাবে চিনতেন না। তবে আমার বন্ধুদের উপর চাপ এসেছিল। আমার খবর কেউ জানে কিনা, আমি কোথায় আছি, কোন নাম্বার ব্যবহার করছি, সেসব জানতে চাইতেন। আমার সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য বার বার চেষ্টা করতেন।

রাইজিংবিডি: আত্মগোপনে থাকার সময় কীভাবে কাটিয়েছেন?
অনিক
: পুরোপুরি ঘরবন্দি ছিলাম। শ্বাসরুদ্ধকর একটা অবস্থা ছিল। কোথাও বের হতে পারতাম না। একজন শিল্পী হিসেবে আমার জন্য এটা বড় একটা জাহান্নাম বলা চলে। সারাক্ষণ ঘরবন্দি থাকতে হয়েছে। যেখানে একদিনও গান গাওয়া ছাড়া থাকতে পারি না, বাইরে বের হওয়া ছাড়া থাকতে পারি না। অথচ ওই সময় ঘরবন্দি ছিলাম, মানে ওটা পুরো দমবন্ধ একটা অবস্থা ছিল। আসলে, চিন্তা করতে পারিনি বেঁচে ফিরব, মানুষের সামনে বের হতে পারব। প্রতিটা মুহূর্ত ভয়-আতঙ্কে ছিলাম।

রাইজিংবিডি: আত্মগোপন থেকে কবে প্রকাশ্যে আসেন?
অনিক:
১৬ জুলাই গানটা গেয়েছিলাম। গানটা গাওয়ার ৫-৬ ঘণ্টার মধ্যেই ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। সেদিন রাতেই চাপ আসতে থাকে। সেই রাতেই আমাকে ভাগতে (পালাতে) হয়েছিল। আর প্রকাশ্যে এসেছিলাম তৎকালীন সরকার পতনের পরের দিন। মানে ৫ আগস্টের পরের দিন।

রাইজিংবিডি: সরকারের কাছে কিছু বলতে চান?
অনিক:
প্রতিটা শিল্পী যেন নিজ নিজ জায়গা থেকে অন্যায়ের প্রতিবাদ করে। অন্যায়ের প্রতিবাদের জন্য সরকার যেন শিল্পীদের বাক স্বাধীনতা দেয়। আমাদের যেন কোনো হুমকির মধ্যে পড়তে না হয়। প্রতিটা শিল্পীর জীবনে খারাপ সময় আসবে, গান গাইবে, ভালো সময় আসবে, গান গাইবে। এটাই প্রতিটা শিল্পীর ধর্ম। শিল্পীর তো আসলে কোনো জাত, ধর্ম, বর্ণ হয় না। আজকে আওয়ামী লীগ বা বিএনপি নাই। যে খারাপ কাজ করবে সে তার ফল পাবে। আর শিল্পী সেটাকে ফুটিয়ে তুলবে। এটাই নিয়ম আর এটাই হোক। একটাই অনুরোধ, শিল্পীদের যেন চাপ দেওয়া না হয়, আঘাত করা না হয়, প্রাণনাশের হুমকি না দেওয়া হয়, গ্রেপ্তার বা রিমান্ডে না নেওয়া হয়।

রাইজিংবিডি: কেমন বাংলাদেশ চান?
অনিক
: আগামীর জন্য খুব ভালো একটা বাংলাদেশ চাই, যে বাংলাদেশে কোনো হিংসা-বিদ্বেষ থাকবে না।

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়