লাইট-ক্যামেরা-অ্যাকশন থেকে উপদেষ্টা ফারুকী
দেশের গুণী নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। নির্মাণ ক্যারিয়ারে বেশ কিছু দর্শকপ্রিয় নাটক-চলচ্চিত্র উপহার দিয়েছেন। পলিটিক্যাল গল্প নিয়ে নির্মাণ করেছেন ‘৪২০’-এর মতো দীর্ঘ ধারাবাহিক। কাজের বাইরেও সমসাময়িক নানা বিষয় নিয়েও কথা বলতে দেখা যায় তাকে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের শুরু থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় দারুণভাবে সক্রিয় ছিলেন ফারুকী। গণঅভ্যত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরও সেই ধারাবাহিকতা অব্যহত রাখেন। চলমান নানা ইস্যু নিয়ে নিয়মিত নিজের মতামত ও পরামর্শ দিয়েছেন।
লাইট-ক্যামেরা-অ্যাকশনের দুনিয়া থেকে আজ অন্তবর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নিয়েছেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। রোববার (১০ নভেম্বর) রাত সাড়ে ৭টার পর বঙ্গভবনে শপথ গ্রহণ করেন তিনি।
১৯৭৩ সালের ২ মে রাজধানীর নাখালপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। সেখানেই তার বেড়ে ওঠা। সময়ের সঙ্গে লাইট-ক্যামেরা-অ্যাকশনের দুনিয়ায় পা রাখেন। চলচ্চিত্র নির্মাণের আগে নাটক-টেলিফিল্ম নির্মাণ করে নিজেকে তৈরি করেন ফারুকী।
মোস্তফা সরয়ার ফারুকী নির্মিত উল্লেখযোগ্য নাটক হলো— ‘একান্নবর্তী’, ‘৬৯’, ‘চড়ুইভাতি’, ‘৪২০’, ‘উপসংহার’, ‘তালপাতার সেপাই’, ‘ক্যারাম’, ‘ঊনমানুষ’ প্রভৃতি।
২০০৩ সালে ফারুকী নির্মাণ করেন ‘ব্যাচেলর’ সিনেমা। পরিচালক হিসেবে এটি তার অভিষেক চলচ্চিত্র। ভিন্ন ধারার গল্প নিয়ে সিনেমাটি নির্মাণ করে আলোচনার জন্ম দেন। তার দ্বিতীয় সিনেমা ‘মেড ইন বাংলাদেশ’। পলিটিক্যাল স্যাটায়ার ঘরানার এ সিনেমা মুক্তি পায় ২০০৭ সালে। তার নির্মিত তৃতীয় সিনেমা ‘থার্ড পার্সন সিঙ্গুলার নাম্বার’। ২০০৯ সালে মুক্তির পর দারুণ দর্শকপ্রিয়তা লাভ করে এটি। সম্পর্কের রসায়ন ও সিনেমাটির গান মুগ্ধ করেছে দর্শকদের।
২০১২ সালে ফারুকী নির্মাণ করেন ‘টেলিভিশন’ শিরোনামে তার চতুর্থ সিনেমা। তার পঞ্চম সিনেমা ‘পিঁপড়াবিদ্যা’। এটি মুক্তি পায় ২০১৩ সালে। সিনেমাটি মুক্তির পর দেশের দর্শকদের খুব একটা মন কাড়তে না পারলেও আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসা কুড়ায়। ফারুকীর ঝুলিতে জমা পড়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কার।
২০১৭ সালে ফারুকী নির্মাণ করেন তার ৬ষ্ঠ সিনেমা ‘ডুব: নো বেড অব রোজেস’। এতে অভিনয় করেন বলিউডের প্রয়াত অভিনেতা ইরফান খান ও ভারতীয় বাংলা সিনেমার অভিনেত্রী পার্নো মিত্র। সিনেমাটি মুক্তির পর ভূয়সী প্রশংসা কুড়ান এই নির্মাতা। এটি মুক্তির পর যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ম্যাগাজিন ভ্যারাইটির রিভিউয়ার ম্যাগি লি বলেছিলেন, ‘ফারুকী প্রমাণ করেছেন, তিনি বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের অনন্য কণ্ঠস্বর।’
২০১৯ সালে ফারুকী নির্মাণ করেন ‘শনিবার বিকেল’। রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে ঘটা ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলাকে উপজীব্য করে নির্মিত হয় সিনেমাটি। আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে সিনেমাটি নিয়ে চূড়ান্ত রকমের ভোগান্তিতে পড়েন এই নির্মাতা। কারণ বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড দীর্ঘ ৪ বছরের বেশি সময় আটকে রেখেছিল এটি।
মোস্তফা সরয়ার ফারুকী কেবল একজন নির্মাতা নন, তিনি একজন প্রযোজকও। তার মালিকানাধীন প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ‘ছবিয়াল’–এর ব্যানারে নির্মিত হয়েছে অসংখ্য বিজ্ঞাপন, টিভি নাটক ও সিনেমা।
ঢাকা/শান্ত