এ আর রহমান-সায়রার শুরু ও শেষ
সায়রা বানুর সঙ্গে ঘর বাঁধেন এ আর রহমান
ভারতের অস্কারজয়ী সংগীত পরিচালক এ আর রহমান। মেধা ও পরিশ্রম গুণে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। ব্যক্তিগত জীবনে ঘর বাঁধেন সায়রা বানুর সঙ্গে। এ দম্পতির তিন সন্তান। দুই মেয়ে খাতিজা রহমান, রহিমা রহমান ও ছেলে আমিন রহমান। হঠাৎ করেই ২৯ বছরের দাম্পত্য জীবনের ইতি টানার ঘোষণা দিয়েছেন তারা। এমন ঘোষণায় হতভম্ব এ আর রহমানের ভক্ত-অনুরাগীরা। এ আর রহমান-সায়রা বানুর প্রথম দেখা, বিয়ে, দাম্পত্য জটিলতা ও বিচ্ছেদের গল্প নিয়ে এ প্রতিবেদন।
সায়রা বানু কে?
১৯৭৩ সালের ডিসেম্বরে গুজরাটের কোচিতে জন্মগ্রহণ করেন সায়রা বানু। এ আর রহমানের চেয়ে ৭ বছরের ছোট সায়রা বানু। সংস্কৃতিমনা ও উচ্চ-মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান সায়রা বানু। সামাজিক কল্যাণমূলক কাজের জন্য বেশ পরিচিত তিনি। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের উন্নয়নের জন্য কাজ করে থাকেন সায়রা বানু।
প্রথম দেখা
নব্বই দশকের মাঝামাঝি সময়ে প্রথম দেখা হয় এ আর রহমান ও সায়রা বানুর। স্মৃতিচারণ করে এ আর রহমান বলেন, “সে খুবই সুন্দর ও ভদ্র। ১৯৯৫ সালের ৬ জানুয়ারি সায়রা বানুর সঙ্গে আমার প্রথম দেখা হয়। সেদিন আমার ২৮তম জন্মদিন ছিল। স্বল্প সময়ের জন্য আমাদের দেখা হয়েছিল। এরপর অধিকাংশ সময় ফোনে আমাদের চ্যাট হতো। সায়রা কোচি ভাষা এবং ইংরেজিতে কথা বলতো। একবার ইংরেজিতে তার কাছে জানতে চাই, সে আমাকে বিয়ে করতে চায় কিনা। তখন সায়রা খুবই শান্ত ছিল।”
ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন এ আর রহমান?
১৯৯৫ সালের ১২ মার্চ বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন এ আর রহমান ও সায়রা বানু। গুঞ্জন ছিল, ভালোবেসে বিয়ে করেছেন এই দম্পতি। তবে এ তথ্য সঠিক নয়। এ আর রহমান বলেন, “আমার মা ও আমার পরিবার সায়রাকে চিনতো না। আমার মা সায়রাকে প্রথম একটি মাজারে দেখেছিলেন। মাজার থেকে কয়েক বাড়ি পরই বসবাস করতেন সায়রার পরিবার। এরপর সায়রার পরিবারের সঙ্গে কথা বলে আমার পরিবার। পরে সবকিছু খুব স্বাভাবিক নিয়মে ঘটেছে।”
বিয়ের পর সমস্যার মুখোমুখি হন এ আর রহমান-সায়রা
বিয়ের পর বেশ কিছুটা সময় সমস্যার মধ্য দিয়ে পার করেন এ আর রহমান ও সায়রা বানু। মূলত, সমস্যাটা তৈরি হয়েছিল, নিজস্ব সংস্কৃতিকে কেন্দ্র করে। এ বিষয়ে এ আর রহমান বলেন, “আমরা দক্ষিণ ভারতের আর সায়রা এসেছে গুজরাট থেকে। উত্তর ভারতের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য ধারণ করে বেড়ে উঠেছে সে। সংস্কৃতিগত এই ব্যবধান মানিয়ে নেওয়া যেকোনো পরিবারের জন্য কঠিন। অন্য সব মায়েদের মতো আমার মা-ও আমার প্রতি অধিক যত্নশীল। আমরা যৌথ পরিবারে বসবাস করতাম। সুতরাং আমাদের মানিয়ে নেওয়ার একটা সময় পার করতে হয়েছে; যা বেশ কঠিন ছিল। ১৯৯৫ সালে আমাদের বড় মেয়ে খাতিজার জন্ম হয়। এরপর সবকিছু ঠিক হয়ে যায়।”
যে কারণে বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত
সায়রা বানু ও এ আর রহমান যৌথ বিবৃতিতে বিচ্ছেদের ঘোষণা দিয়েছেন। যদিও তারা কারণ ব্যাখ্যা করেননি। তবে সায়রা বানুর আইনজীবী বন্দনা শাহ একটি বিবৃতিতে এ দম্পতির সংসার ভাঙার কারণ উল্লেখ করেছেন। তাতে তিনি বলেন, “বিয়ের দীর্ঘ সময় পর সায়রা বানু তার স্বামী এ আর রহমানের সঙ্গে আলাদা হওয়ার মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাদের পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা থাকার পরও প্রচন্ড মানসিক চাপ থেকে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তারা পরস্পরের প্রতি সেতু বন্ধন তৈরির চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। অনেক ভেবেচিন্তে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।”
এক নজরে এ আর রহমান
খুব ছোটবেলায় বাবাকে হারান এ আর রহমান। এরপর জীবিকার সন্ধানে কাজে নামতে হয় তাকে। মাত্র ১১ বছর বয়সে দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমার বিভিন্ন সুরকারের সঙ্গে বাজাতে শুরু করেন রহমান। ২৩ বছর বয়সে সপরিবারে হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন এ আর রহমান। তার নাম ছিল দিলীপ কুমার। ১৯৯২ সালে তামিল ভাষার ‘রোজা’ সিনেমা দিয়ে সুরকার হিসেবে যাত্রা শুরু করেন। ১৯৯৫ সালে রাম গোপাল ভার্মার ‘রঙ্গীলা’ সিনেমার সংগীত পরিচালনার মাধ্যমে তার বলিউড যাত্রা। ড্যানি বয়েলের ‘স্লামডগ মিলিয়নিয়ার’ সিনেমার জন্য অস্কার, গ্র্যামি, বাফটা ও গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কার জিতে নেন এ আর রাহমান। তা ছাড়াও তার ঝুলিতে জমা পড়েছে ভারতের ছয়টি জাতীয় পুরস্কার। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো— ‘পদ্মশ্রী’ (২০০০), ‘পদ্মভূষণ’ (২০১০) প্রভৃতি।
তথ্যসূত্র: নিউজ১৮
ঢাকা/শান্ত