ডায়ানা থেকে ‘লেডি সুপারস্টার’ নয়নতারা
প্রথম দৃষ্টিতে যে কারো চোখ আটকে যাবে নয়নতারার ঠোঁটের ওপরের তিলে; যা ‘বিউটি স্পটে’ রূপ নিয়েছে। তার চোখ, স্মিত হাসি, ছিপছিপে গড়নের বর্ণনা করা অমূলক! শরীরি সৌন্দর্য ছাড়িয়ে অভিনয় গুণে ‘লেডি সুপারস্টার’ তকমা অর্জন করেছেন। নয়নতারাকে নিয়ে নির্মিত হয়েছে তথ্যচিত্র ‘নয়নতারা: বিয়ন্ড দ্য ফেইরিটেল’। কয়েক দিন আগে নেটফ্লিক্সে মুক্তি পেয়েছে এটি। এতে ডায়ানা থেকে ‘লেডি সুপারস্টার’ নয়নতারা হওয়ার গল্প তুলে ধরা হয়েছে।
নয়নতারার আসল নাম ডায়ানা মরিয়ম কুরিয়ান। পরিচালক সত্যন আন্তিকাড় এই নাম বদলে রাখেন নয়নতারা। নয়নতারাকে মূলত এই নির্মাতাই আবিষ্কার করেন। পরে তার নির্মিত মালায়ালাম ভাষার ‘মনাসিঙ্কারে’ সিনেমার মাধ্যমে রুপালি জগতে নিয়ে আসেন। এটি ২০০৩ সালে মুক্তি পায়। তথ্যচিত্রে পরিচালক সত্যন বলেন, “একদিন ‘বনিতা’ ম্যাগাজিনে একটি বিজ্ঞাপন দেখি। তাতে একজন সুন্দরী ও আত্মবিশ্বাসী নারীকে দেখতে পাই। পরে ম্যাগাজিনটির সম্পাদকের সঙ্গে যোগাযোগ করি।”
ম্যাগাজিনটির সম্পাদকের মাধ্যমে কলেজ পড়ুয়া নয়নতারার সঙ্গে যোগযোগ করেন পরিচালক সত্যন। তখন ডায়ানার (নয়নতারা) বয়স মাত্র ১৯ বছর। পরিচালকের সঙ্গে কথা বলার পর সিনেমাটিতে অভিনয়ের জন্য প্রাথমিক সম্মতি দেন ডায়ানা। কিন্তু পরিবার কি বলবে সেই ভয়ে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। পরবর্তীতে তার বাবা-মায়ের সমর্থন ও উৎসাহে ‘মনাসিঙ্কারে’ সিনেমায় অভিনয় করাতে ডায়ানাকে রাজি করান সত্যন। সিনেমাটির শুটিং শেষ করার পর পোস্টার তৈরি করা হয়। কিন্তু ‘ডায়ানা’ নামটি দেখে সত্যনের ভালো লাগে না। তিনি তিনটি নাম উপস্থাপন করেন, সর্বশেষ ‘নয়নতারা’ নামটি চূড়ান্ত হয়। তখন থেকে শুরু হয় তরুণী ‘ডায়ানা’-এর ‘লেডি সুপারস্টার নয়নতারা’ হয়ে উঠার যাত্রা।
নয়নতারার অভিষেক সিনেমা ‘মনাসিঙ্কারে’ মুক্তির পর ব্যবসায়ীকভাবে সাফল্য পায়। সমালোচকদেরও প্রশংসা কুড়ায়। এখানেই শেষ নয় সিনেমাটি পাঁচটি বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কারও জিতে নেয়। এরপরই মালায়ালাম ভাষার ‘বিসমিয়াথাম্বাথু’ সিনেমায় অভিনয়ের ডাক পান নয়নতারা। এটি ২০০৪ সালে মুক্তি পায়। সিনেমাটিতে সহশিল্পী হিসেবে পান মালায়ালাম সিনেমার সুপারস্টার মোহনলালকে। এতে নয়নতারার মনোমুগ্ধকর পারফরম্যান্স তাকে খ্যাতি এনে দেয়। এ খ্যাতি দক্ষিণের সব ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে ছড়িয়ে পড়ে। তামিল, তেলেগু এবং মালায়ালাম সিনেমায় অভিনয় করে নিজেকে আবারো প্রমাণ করেন। পুরস্কারস্বরূপ ‘লেডি সুপারস্টার’ তকমা অর্জন করেন এই অভিনেত্রী।
২০০৫ সালে ‘আয়া’ সিনেমার মাধ্যমে তেলেগু ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে অভিষেক ঘটে নয়নতারার। একই বছর নয়নতারা ৬টি সিনেমায় অভিনয় করেন। এর মধ্যে অন্যতম ‘গজনি’। ২০০৮ সালে এ সিনেমার রিমেক হয় বলিউডে। তাতে দেখা যায় আমির খানকে। ২০০৬ সালে ‘লক্ষ্মী’ সিনেমার মাধ্যমে তেলেগু ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে পা রাখেন নয়নতারা। এ বছরও তাকে মোট ৬টি সিনেমায় দেখা যায়। ২০১০ সালে ‘সুপার’ সিনেমার মাধ্যমে কন্নড় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে যাত্রা শুরু করেন। তবে বলিউডে অনেকবার কাজের প্রস্তাব পেয়েও তা প্রত্যাখান করেন নয়নতারা। সর্বশেষ শাহরুখ খানের ‘জওয়ান’ সিনেমার মাধ্যমে বলিউডে পা রাখেন।
১৯৮৪ সালের ১৮ নভেম্বর কর্নাটকের বেঙ্গালুরুতে একটি খ্রিষ্টান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ডায়ানা ওরফে নয়নতারা। ২০১১ সালে চেন্নাইয়ের আর্য সমাজ মন্দিরে গিয়ে হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করেন। তথ্যচিত্রে ধর্ম পরিবর্তনের বিষয়টি নিয়েও কথা বলেন নয়নতারা। তার ভাষায়— “হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করার সিদ্ধান্তটি খুব সচেতনভাবে নিয়েছি, যা সরাসরি আমার হৃদয় থেকে এসেছে।” ২০২২ সালে পরিচালক বিগনেশ শিবানকে বিয়ে করেন নয়নতারা। বিয়েতে খ্রিষ্টান রীতি মেনে কনে সেজে নয়নতারা তার মায়ের ইচ্ছাও পূরণ করেন।
তথ্যসূত্র: ইন্ডিয়া টুডে
ঢাকা/শান্ত