আমার ‘সুগার ড্যাডি’ নেই: শ্রীলেখা মিত্র
শ্রীলেখা মিত্র
অন্যায় মুখ বুঝে সহ্য করেন না ভারতীয় বাংলা সিনেমার অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র। নিজের জীবন নিজের শর্তে বাঁচেন তিনি। কয়েক মাসে কলকাতার আর জি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের এক নারী চিকিৎসককে ধর্ষণের পর খুন করা হয়। তারকাদের মধ্যে শ্রীলেখাই প্রথম প্রতিবাদে মুখর হয়ে ওঠেন। আর এজন্য এখন কাজ হারাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন এই অভিনেত্রী।
ভারতীয় একটি গণমাধ্যমে শ্রীলেখা মিত্র বলেন, “প্রায়শই সিনেমা হাতছাড়া হচ্ছে। কিংবা কোনো রিয়েলিটি শো থেকে বাদ পড়ে গেলাম। বিজ্ঞাপনী সিনেমার জন্য নির্বাচিত হয়েও শেষে আর কাজ হলো না। অভিযোগের তালিকা লম্বা। কিছু জানিয়েছি সমাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। অনেক কিছুই জানাইনি। জানিয়ে লাভও নেই। কিন্তু আবারো আমি সরব। আরজি কর-কাণ্ড নিয়ে অনেকের অনেক বক্তব্য। প্রায় রোজই কেউ কিছু না কিছু বলছেন। আমি একটু বেশিই জোরালো প্রতিবাদ করেছি। অবশেষে তার ফলাফল পেলাম। দু-দুটো বিজ্ঞাপনের কাজ হাতছাড়া হয়ে গেল। ক্লায়েন্ট যোগাযোগ করেছিলেন এজেন্সির সঙ্গে। এজেন্সির যিনি প্রতিনিধি তিনি আমাকে পছন্দ করেন। চেয়েছিলেন, কাজটা আমিই করি। কিন্তু তারও তো কোথাও বাধা রয়েছে। বললেন, “দিদি, আরজি কর-কাণ্ডে তোমার বক্তব্য তোমার বিরুদ্ধে গিয়েছে। তুমি সরকারের বিরোধিতা করেছ। তোমাকে দিয়ে কাজ না করানোর নির্দেশ এসেছে।” দুটো কাজ থেকেই ভালো অঙ্কের পারিশ্রমিক পেতাম।”
কাজ হারালেও বিচলিত নন শ্রীলেখা। তিনি বলেন, “আমি আর এই ধরনের ঘটনায় বিচলিত হই না। কোনোকালেই মধু মাখিয়ে কথা বলতে পারি না। বাকিরা যতটা না মনের গভীর থেকে মৃত চিকিৎসকের জন্য ন্যায়বিচার চেয়েছেন, আমার চাওয়া ছিল আরো গভীর। আমার বক্তব্য ছিল পুলিশমন্ত্রী, স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে। বাংলায় এই দুই পদেই মুখ্যমন্ত্রী আসীন। তা হলে কাকে বলব? মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধেই মুখ খুলতে হবে, সেটাই করেছি।”
বিষয়টি আরো ব্যাখ্যা করে শ্রীলেখা মিত্র বলেন, “ভয় না পাওয়ার আরো একটা কারণ, আমার মাথার উপরে কোনো দায় নেই। ঋণের বোঝা নেই। প্রচুর চাহিদা নেই। দামি গাড়ি, দামি বাড়ি, দামি পোশাকের বিলাসিতা নেই। ফলে, প্রচুর অর্থের প্রয়োজনও নেই। একইভাবে, যতটা সম্ভব সৎ থেকে কাজ করা যায় ততটাই সৎ আমি। একমাত্র দেওয়ালে পিঠ ঠেকে না গেলে মিথ্যা কথা বলি না। বললেও এমন মিথ্যা বলি না, যা অপরের ক্ষতি করবে। বরাবর নিজের কাজ নিজেই জোগাড় করে এসেছি। কোনো দিন তথাকথিত ‘সুগার ড্যাডি’ ছিল না। ভালোবাসার মানুষজনেরও বড়ই অভাব। সব মিলিয়ে নিজেই নিজের হর্তা-কর্তা-বিধাতা। ফলে, যা-ই ঘটুক ঠিক চালিয়ে নেব।”
জীবনের এই পর্যায়ে নিজেকে বদলানো সম্ভব নয় বলে জানান শ্রীলেখা। তার মতে— “আজ আমি পরিচালক হলে এমন অভিনেতা বাছাই করতাম যিনি আক্ষরিক অর্থেই সৎ ব্যক্তি। তা হলেই আমার বিজ্ঞাপন বেশি বিশ্বাসযোগ্য হতো। কারণ, জনতা সেই বিশ্বাসযোগ্য মুখ দেখে জিনিস কেনার ভরসা পেত। আমার মতো করে তো সবাই ভাববেন না। অনেকে বলেন, ‘এত বিতর্ক, এত বিরোধিতা যখন, তখন একটু কম কথা বললেই তো হয়।’ আমি পারব না। এই বয়সে এসে নিজেকে বদলানো সম্ভব নয়। তা ছাড়া, মাথা নোয়াতে শিখিনি। তাই আমার মতো করেই চলব। এককালে খুব কম উপার্জন করিনি। সেগুলো উড়িয়ে নষ্ট করিনি। আমার চলে যাবে। বরং এই ধরনের ঘটনা আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয়। বুঝতে পারি, আমিই সঠিক। ঠিক পথে হাঁটছি বলেই আমাকে ঘিরে এত কথা।”
ঢাকা/শান্ত