ঢাকা     শুক্রবার   ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  পৌষ ১২ ১৪৩১

বিবিসির ১০০ নারীর তালিকায় ৬ সংগীতশিল্পী

বিনোদন ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:১৮, ৩ ডিসেম্বর ২০২৪   আপডেট: ১৭:৩৪, ৩ ডিসেম্বর ২০২৪
বিবিসির ১০০ নারীর তালিকায় ৬ সংগীতশিল্পী

ছবির কোলাজ

প্রতি বছর বিশ্বের ১০০ জন প্রভাবশালী ও অনুপ্রেরণাদায়ী নারীর তালিকা প্রকাশ করে থাকে বিবিসি। এবারো তার ব্যত্যয় ঘটেনি। বিবিসির ৪১টি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস ল্যাংগুয়েজ টিম ও বিবিসি মিডিয়া অ্যাকশনের পরামর্শে প্রস্তুত করা হয় এই তালিকা। ১০০ জন প্রভাবশালী নারীর তালিকায় জায়গা পেয়েছেন বিশ্বের ছয়জন সংগীতশিল্পী। তাদের নিয়ে এ প্রতিবেদন।

ফিরদা মারসিয়া কুরনিয়া (ইন্দোনেশিয়া)
লিঙ্গ ও ধর্মীয় নিয়মকে চ্যালেঞ্জ করাই ফিরদা মারসিয়া কুরনিয়ার স্বাচ্ছন্দ্যের জায়গা। হিজাব পরা নারীদের হেভি মেটাল ব্যান্ড ভয়েস অব বাচেপ্রত-এর প্রধান গায়িকা এবং গিটারবাদক তিনি। ইন্দোনেশিয়ার বহুল ব্যবহৃত ভাষাগুলোর মধ্যে ইংরেজি এবং সুন্দানিজে গানের মাধ্যমে তারা পুরুষতন্ত্রের প্রতি তাদের হতাশা প্রকাশ করেন। অনেকেই, বিশেষ করে রক্ষণশীল মুসলিমরা তা ভালোভাবে নেয়নি। এই ব্যান্ডের হেভি মেটাল গান নিয়ে আপত্তি জানায়। ইন্দোনেশিয়ার পশ্চিম জাভার গারুতে তাদের গ্রামের স্কুলে ১০ বছর আগে ব্যান্ডটি যাত্রা শুরু করে। চলতি বছরে সংগীত উৎসবের ৫৪ বছরের ইতিহাসে প্রথম ইন্দোনেশিয়ান ব্যান্ড হিসেবে গ্লাস্টনবারিতে পারফর্ম করেছে দলটি।

ইলাহা সরুর (আফগানিস্তান)
আফগানিস্তানে যখন নারীদের কণ্ঠস্বর জনজীবন থেকে মুছে ফেলা হচ্ছে, তখন গায়িকা ইলাহা সরুর এই দমনকে প্রতিহত করতে এবং উৎসাহের বার্তা পৌঁছে দিতে গান ‘নান, কার, আজাদি!’ (রুটি, কাজ, স্বাধীনতা!) রচনা করেন। গত অক্টোবরে গানটি আলবেনিয়ায় অনুষ্ঠিত অভূতপূর্ব অল-আফগান নারী সম্মেলনে প্রথম পরিবেশিত হয়। চলচ্চিত্র, থিয়েটার এবং সংগীতের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে, পুরস্কার বিজয়ী এই শিল্পী প্রায়ই নারীদের অধিকারের পক্ষে তার প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করেছেন। হাজারা জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায় থেকে এসেছেন সরুর। ২০০৯ সালে জনপ্রিয় প্রতিভা প্রদর্শনী আফগান স্টারে আবিষ্কৃত হন। তবে সংগীত ক্যারিয়ার চালিয়ে যাওয়ার জন্য সহিংস প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হন। সর্বশেষ ২০১০ সালে দেশ ত্যাগ করেন।

আরো পড়ুন:

গ্যাবি মোরেনো (গুয়াতেমালা)
লাতিন সংগীত জগতে খ্যাতিমান গায়ক-গীতিকার গ্যাবি মোরেনো। ২০২৪ সালে সেরা লাতিন পপ অ্যালবামের জন্য গ্র্যামি জিতে মূলধারায় প্রবেশ করেন তিনি। দুই ভাষায় রচিত তার সংগীতের প্রভাব রয়েছে আমেরিকানা, সোল এবং লাতিন লোকসংগীতের। আবেগময় কণ্ঠ দিয়ে সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে তুলে ধরেন তিনি। শিশুদের অধিকার নিয়ে কাজ করে ইউনিসেফের প্রথম গুয়াতেমালান শুভেচ্ছাদূত মনোনীত হন। সম্প্রতি একটি প্রচারণা শুরু করেছেন গ্যাবি। যার লক্ষ্য মানসম্মত শিক্ষামূলক সরঞ্জামের সরবরাহ বাড়ানো, যেখানে তার দেশে প্রায় ২৭ লাখ ছেলে-মেয়ে স্কুল ব্যবস্থা থেকে বাইরে রয়েছে।

হাদিকা কিয়ানি (পাকিস্তান)
পাকিস্তানের সংগীত জগতের অন্যতম আইকন হাদিকা কিয়ানি। কণ্ঠ আর মানবিক কাজে অবদানের জন্য পরিচিত তিনি। নব্বইয়ের দশকে খ্যাতি অর্জনকারী কিয়ানি দক্ষিণ এশিয়ার নারী পপ সংগীত জগতে একটি সুপরিচিত শক্তি হয়ে ওঠেন। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির শুভেচ্ছাদূত হিসেবেও কাজ করেছেন। ২০২২ সালে পাকিস্তানে ভয়াবহ বন্যার পর, ‘ভাসিলা-এ-রাহ’ প্রকল্প চালু করেন, যা বেলুচিস্তান এবং দক্ষিণ পাঞ্জাবে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যের জন্য নিবেদিত। জনসাধারণকে বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলোকে সহায়তার জন্য আহ্বান জানান। ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলে ৩৭০টি বাড়ি এবং অন্যান্য সুবিধা প্রদানের প্রকল্প ঘোষণা করে তারা।

নোয়েলা উইয়ালা এনওয়াদেই (ঘানা)
নোয়েলা উইয়ালা এনওয়াদেই। তবে উইয়ালা নামেই অধিক পরিচিত। যার অর্থ তার স্থানীয় সিসালা ভাষায় ‘কর্মপরায়ণ’। অনন্য ফ্যাশন স্টাইলের জন্যও পরিচিত তিনি। তার স্টেজ পোশাক এবং আনুষঙ্গিক জিনিসগুলো নিজেই ডিজাইন করেন, যা তার নিজ শহর উত্তর ঘানার ঐতিহ্য প্রদর্শন করে। তার গাওয়া গানগুলোর অনেকটাই আফ্রিকান নারীদের শোষণ নিয়ে আলোকপাত করে। উইয়ালা বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর সঙ্গে এবং ঘানার প্রশাসনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছেন। কর্মসংস্থান এবং সৃজনশীলতাকে উৎসাহিত করতে নিজ শহর ফুনসিতে একটি আর্টস সেন্টার, একটি কমিউনিটি রেডিও স্টেশন এবং একটি রেস্তোরাঁ প্রতিষ্ঠা করেছেন।

রে (যুক্তরাজ্য)
চলতি বছরে ব্রিট অ্যাওয়ার্ডসে ইতিহাস তৈরি করেছেন গায়িকা-গীতিকার রে। এ আসরে সাতটি মনোনয়ন পেয়েছিলেন, সেখানে ছয়টি পুরস্কার জিতে নেন তিনি। শুধু তাই নয়, প্রথম নারী হিসেবে সংরাইটার অব দ্য ইয়ার পুরস্কারও জিতেন রে। ২০২১ সালে, রে সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেছিলেন যে, তিনি নিজের অ্যালবাম প্রকাশের জন্য তার রেকর্ড লেবেল পলিডোরের সঙ্গে সাত বছর ধরে লড়াই করেছেন। ২০২৩ সালে একজন স্বাধীন শিল্পী হিসেবে তার প্রথম স্টুডিও অ্যালবাম ‘মাই টোয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরি ব্লুজ’ উপস্থাপন করেন, যা বেশ সাফল্য অর্জন করে। ব্যক্তিগত জীবনে যৌন নিপীড়ন, মাদকাসক্তি, শরীরিক বিকৃতির মতো সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন রে। যা নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন তিনি। পাশাপাশি গীতিকারদের ন্যায্য পারিশ্রমিকও দাবি করেন এই শিল্পী।

তথ্যসূত্র: বিবিসি

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়