‘আমি কখনোই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হইনি, ইত্যাদিও না’
বিনোদন ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম
হানিফ সংকেত, ইত্যাদির অনুষ্ঠানে আগত দর্শক
বিটিভির ব্যাপক জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’। সমাজের ছোট-বড় অসংগতি থেকে শুরু করে ইতিহাস, ঐতিহ্য ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনসহ নানা বিষয়ই তুলে আনা হয় এই অনুষ্ঠানে। অনুষ্ঠানটি রচনা, পরিচালনা ও উপস্থাপনা করেন হানিফ সংকেত। ৩৭ তম বছরে প্রবেশ করেছে ইত্যাদি। এবারের পর্ব ধারণ করা হয়েছে ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলের রাজবাড়ীতে। বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে দৃশ্যধারণের কাজ শুরু হয়। কিন্তু অনুষ্ঠাস্থলে ভাঙচুর ও মারামারির ঘটনা ঘটেছে বলে খবর প্রকাশ করে একাধিক গণমাধ্যম। এই প্রচারণায় ‘রাজনৈতিক রং’ লাগানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন হানিফ সংকেত। এরপর মূল ঘটনা সামনে আনার জন্য নিজের ভেরিফায়েড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুক্রবার দিবাগত রাতে এক পোস্ট দিয়েছেন।
হানিফ সংকেতের পোস্ট থেকে জানা যায়, ঠাকুরগাঁওয়ে অনুষ্ঠান পরিকল্পনা করার পর ইত্যাদি টিম রাণীশংকৈল (রাজা টংকনাথের) রাজবাড়িতে ইত্যাদি ধারণ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করা হয়। অনুষ্ঠান ধারণ স্থলে ৬ হাজার দর্শকের বসার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সন্ধ্যা সাতটার দিকে অনুষ্ঠান শুরু হলে কিছুক্ষণ পরে ইত্যাদি টিম জানতে পারে অনুষ্ঠানস্থলের বাইরে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ অপেক্ষা করছেন অনুষ্ঠান দেখার জন্য। অনুষ্ঠানে দর্শক বাছাই, নৃত্য ও গান ধারণ করার পরই হঠাৎ করে বাঁশের ঘেরা সরিয়ে কয়েক হাজার লোক আমন্ত্রণপত্র না পেয়েও অনুষ্ঠানস্থলে ঢুকে পড়ে। এর ফলে অনুষ্ঠানস্থলে সাময়িক বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়।
হানিফ সংকেত লিখেছেন, ‘‘আমরা পরিস্থিতি অনুধাবন করে প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে কিছু সময়ের জন্য অনুষ্ঠান ধারণ স্থগিত করি এবং পরিস্থিতি শান্ত হলে আবার ধারণ শুরু করি। যদিও ইতোমধ্যে স্থগিতের কথা শুনে অনেক দর্শকই চলে যান। পরে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় আমরা শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠান ধারণ করি। উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণ হামলা, ভাংচুর বা মারামারি নয়, ইত্যাদির প্রতি দর্শকদের ভালোবাসা। আর এই ভালোবাসার কারণেই তারা ইত্যাদির ধারণ দেখার জন্য সবাই উন্মুখ হয়ে ছিলেন। কিন্তু স্থানাভাবে দাঁড়াতেও পারছিলেন না। তাই চেয়ার সরিয়ে দাঁড়াবার স্থান করছিলেন। আর সে কারণেই এই চেয়ার ছোড়াছুড়ি। এর ফলে কিছুটা বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। কিন্তু ঘটনাটিকে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে কেউ কেউ মিথ্যে তথ্য দিয়ে এবং রাজনৈতিক রং লাগিয়ে বিভিন্নভাবে অপপ্রচারের চেষ্টা করছেন।’’
হানিফ সংকেত তার পোস্টে আরও লিখেছেন, ‘‘কিছু ‘মতলববাজ’ ব্যক্তি নিরাপদ দূরত্বে থেকে নানান পোস্ট দিয়ে নিজের মতলব হাসিলের চেষ্টাও করছে। যারা এই ঘটনাটির সঙ্গে রাজনীতিকে সংযুক্ত করতে চাইছেন তাদের উদ্দেশ্যে বলছি, ‘আমি যেমন কখনোই কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হইনি, ইত্যাদিও তেমনি সবসময়ই থেকেছে রাজনীতিমুক্ত’। আর তাই দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতেও, গত ৬ই সেপ্টেম্বর প্রায় অর্ধলক্ষাধিক দর্শক নিয়ে ইত্যাদি শেরপুর পর্ব এবং ২৯ নভেম্বর কয়েক হাজার দর্শক নিয়ে ইত্যাদি বাগেরহাট পর্ব প্রচারিত হয় এবং প্রতিটি অনুষ্ঠান অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে ধারণ করা হয়। আসলে আমরা ভিউবাজদের ভিউ বিড়ম্বনার শিকার হয়েছি। কোনো অপপ্রচারই ইত্যাদির সঙ্গে দর্শকদের এই ভালোবাসার বন্ধন ছিন্ন করতে পারবে না। তার প্রমাণ ঠাকুরগাঁওয়ের ইত্যাদি দেখার জন্য দর্শকদের এই বাঁধভাঙা স্রোত। যা আমাদের অভিভূত করেছে। আর দর্শকদের এই ভালোবাসায় ধন্য হয়েই ইত্যাদি এ বছর পদার্পণ করেছে তার ৩৭তম বছরে।
উল্লেখ্য, হানিফ সংকেতের ওই পোস্টের নিচে মন্তব্য পড়েছে ছয় হাজারের বেশি।
ইমরান ইমন নামের একজন মন্তব্যের ঘরে লিখেছেন, ‘‘ইত্যাদির বিশৃঙ্খলার প্রথম কারণ হচ্ছে আপনারা রাজনৈতিক ব্যক্তিদের কাছে টিকিট দিয়েছিলেন। তারা টিকিট নিয়ে অনেক বড় ব্যবসা করছে। এমনকি একটা টিকিট বিক্রি করছে ৮০০ থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত। অনুষ্ঠানের দিন আমি সকালে ওখানে যাই গিয়ে দেখি কোনো টিকিট নাই। সব নাকি অনুষ্ঠান শুরুর আগের দিন থেকে বিক্রি করে দিয়েছে। দ্বিতীয়ত জায়গাটা ছিল অনেক ছোট। হানিফ সংকেতকে দেখার জন্য আমিও গেছিলাম। আমার মত অনেক লোক গিয়েছিল। আপনাদের উচিত ছিল কোনো এক বড় মাঠে অনুষ্ঠানটি করা। তাহলে কোনো বিশৃঙ্খলা হতো না। মূলত হানিফ সংকেতকে ভালোবাসার কারণেই এত পরিমাণ লোক এসেছিল।’’
ইমতিয়াজ উদ্দিন নামের একজন মন্তব্য করেছেন, ‘‘চেয়ার সরিয়ে ফেলার জন্য চেয়ারগুলো ছুড়ে ফেলতে হয়। এটা কি ঠাকুরগাঁও জেলা না ব্রাহ্মণবাড়িয়া?’’
ঢাকা/লিপি