ঢাকা     বুধবার   ১৯ মার্চ ২০২৫ ||  চৈত্র ৬ ১৪৩১

কবীর সুমনকে কেন ‘জিহাদি’ বললেন তসলিমা?

বিনোদন ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৫৫, ১৮ মার্চ ২০২৫   আপডেট: ১৮:৩৩, ১৮ মার্চ ২০২৫
কবীর সুমনকে কেন ‘জিহাদি’ বললেন তসলিমা?

কবীর সুমন, তসলিমা নাসরিন

সমকালীন ইস্যু নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় দারুণ সরব ভারতে বসবাসরত বাংলাদেশের নির্বাসিত লেখক তসলিমা নাসরিন। দুই বছর আগে কলকাতার বরেণ্য সংগীতশিল্পী কবীর সুমনের একটি বক্তব্য নিয়ে কড়া সমালোচনা করেছিলেন তসলিমা নাসরিন। যদিও বিতর্কিত এই লেখিকার বক্তব্য নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি কবীর সুমন।

পশ্চিমবঙ্গে তসলিমা নাসরিনের বসবাসের ব্যাপারে মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) ভারতীয় একটি গণমাধ্যমে বক্তব্য দেন কবীর সুমন; যা তসলিমার পছন্দ হয়নি। ফলে বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে দীর্ঘ একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তাতে কবীর সুমনকে ‘জিহাদি’ বলে মন্তব্য করেন তসলিমা।

তসলিমা নাসরিন বলেন, “মজার ব্যাপার হলো, আমি কলকাতায় ফিরব বা কলকাতায় বেড়াতে যাব, এই কথাটা বলিনি, আমাকে ফেরাবার দাবি তুলেছেন একজন সাংসদ, অমনি কলকাতার জিহাদিরা ভীষণ ভয়ে লম্ফঝম্ফ শুরু করেছে। এর মধ্যে আছেন কবীর সুমন। উদ্ভট উদ্ভট সব প্রশ্ন, আমি কেন বাংলাদেশে ফিরতে চাই না? উনি কী করে জানলেন আমি বাংলাদেশে ফিরতে চাই না? আমি ৩০ বছর ধরে বাংলাদেশে ফিরতে চাইছি, এটা তিনি খুব ভালো করেই জানেন।”

আরো পড়ুন:

কিছু তথ্য না জানার ভান করছেন কবীর সুমন। তা স্মরণ করে তসলিমা নাসরিন বলেন, “আমাকে বাংলাদেশে ফিরতে দেওয়া হয় না বলে আমি নির্বাসনে বাস করতে বাধ্য হচ্ছি, তা তিনি জানেন না? ঠিকই জানেন, শুধু না জানার ভান করেন। তিনি চান না আমি কলকাতায় পা রাখি। কারণ হিসেবে বললেন, আমি বিদেশি। বিদেশি কাউকে তিনি কলকাতায় দেখতে চান না। কী হাস্যকর না? দুজন বাংলাদেশি মহিলাকে তিনি বিয়ে করেছিলেন। তখন বিদেশি বলে তাদের কিন্তু দূর দূর করে তাড়াননি। যখন বাংলাদেশে গান গাইতে যান, তখন কিন্তু বুঝিয়ে আসেন, বাংলাদেশ তার কাছে আদৌ বিদেশ নয়।”

কবীর সুমনের কর্মকাণ্ডে বিস্মিত-হতাশ তসলিমা। তার ভাষায়, “সাক্ষাৎকারের শুরুতে বলে নিয়েছেন আমি মোটেই তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ নই। অথচ একদিন তিনি আমার সঙ্গে দেখা করেছিলেন আমাকে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ মনে করেছিলেন বলে। সেক্যুলারিজমের কসম খেয়ে বলেছিলেন, আমার জন্য কলকাতাকে তিনি নিরাপদ রাখবেন। তখন তিনি অবশ্য কবীর সুমন হননি। আজ আমার মতো গুরুত্বহীন মানুষের নিন্দে গুছিয়ে করার জন্য তিনি লম্বা সময় নিয়েছেন, কলকাতা টেলিভিশনে প্রায় কুড়ি বছর আগে তিনি লম্বা সময় নিয়ে দ্বি-খণ্ডিত নিষিদ্ধের পক্ষে বলেছিলেন এবং আমার বিরুদ্ধে মৌলবাদীদের জারি করা ফতোয়ার পক্ষে অর্থাৎ আমার মাথার দাম ঘোষণার পক্ষে বেশ গুছিয়ে বলেছিলেন।”

বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপরে নির্যাতনের প্রতিবাদে বিতর্কিত গ্রন্থ ‘লজ্জা’ রচনা করেন তসলিমা নাসরিন। এ তথ্য উল্লেখ করে তসলিমা বলেন, “বিজেপি আমার ‘লজ্জা’ পাইরেট করে ৩২ বছর আগে ট্রেনে-বাসে বিক্রি করেছিল। সেটা এমনভাবে বললেন, যেন দোষটা আমার ছিল। আমি আমার দেশের সংখ্যালঘুর ওপর অত্যচারের প্রতিবাদ করে বই লিখেছি, সেটা তার কাছে অন্যায়। অথচ তার দেশের সংখ্যালঘুর ওপর অত্যাচারের কাহিনি যখন তিনি শোনান, সেটাকে তিনি অন্যায় বলে মনে করেন না। হঠাৎ করে তিনি কাঁটাতারে বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন।”

কবীর সুমন ও সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সমালোচনা করার ফল ভোগ করছেন তসলিমা নাসরিন। এ কারণে তাকে নিয়ে আপত্তি কবীর সুমনের। তসলিমা নাসরিন বলেন, “প্রাচীনকাল থেকেই বর্বর শাসকেরা শিল্পী-সাহিত্যিকদের অনেককে নির্বাসনদণ্ড দিয়েছেন, এ বিষয়ে তার কোনো আইডিয়া নেই বলেই বোঝাতে চাইলেন। ফ্রিডম অব স্পিচে বিশ্বাস করেন না, ফ্রিডম অব মুভমেন্টে বিশ্বাস করেন না। তিনি কি মানবাধিকারে সামান্যও বিশ্বাস করেন? বাকস্বাধীনতায় কতটুকু বিশ্বাস করেন, তাও বুঝিয়ে দিলেন এই বলে যে, আমি তার সমালোচনা করেছি, আমি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সমালোচনা করেছি। সুতরাং কলকাতায় থাকার অধিকার আমার নেই। বাহ। তোমরা মন্দ কাজ করবে, প্রতারণা করবে, মুখোশ পরে থাকবে আর তোমাদের মুখোশ খানিকটা খুলে ফেললে রে রে করে তেড়ে এসে আমাকে শূলে চড়াবে! বাংলাদেশি জিহাদিরা চায় না আমি বাংলাদেশে ফিরি, পশ্চিমবঙ্গের জিহাদিরা চায় না আমি পশ্চিমবঙ্গে ফিরি।”

কবীর সুমনকে ‘জিহাদি’ আখ্যা দিয়ে তসলিমা নাসরিন বলেন, “মাঝে মাঝে অবাক হই এই ভেবে যে, কী করে এত ক্ষুদ্র, এত অনুদার, এত অমানবিক, এত স্বার্থপর, এত হীন এত নিষ্ঠুর মানুষটি অমন উদার অমন নিঃস্বার্থ অমন মানবিক অমন সমতা আর সমানাধিকারের গান লিখেছিলেন! অবাক হই এই ভেবে যে, কী করে ঈশ্বরকে অস্বীকার করে গান লেখা মানুষটি অমন জিহাদি হয়ে উঠতে পারেন। এক মানুষের ভেতর কি আসলে দুজন বাস করে? নাকি জিহাদি চরিত্রটিই তার আসল চরিত্র, অন্যটা অভিনয়?” 

তসলিমা নাসরিন ভারতের দিল্লিতে বসবাস করছেন। আবারো পশ্চিমবঙ্গে ফেরানোর দাবি জানিয়েছেন বিজেপির সংসদ সদস্য শমীক ভট্টাচার্য। এরপর বিষয়টি নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে তসলিমা নাসরিন বলেন, “শেষ পর্যন্ত কলকাতায় আমার ফেরা হবে কি না জানি না। কিন্তু আমি ফিরতে চাই। বিজেপির সংসদ সদস্যকে ধন্যবাদ জানাই। আমি তার প্রতি কৃতজ্ঞ।” 

এ বিষয়ে কথা বলতে সংগীতশিল্পী ও প্রাক্তন তৃণমূলের সংসদ সদস্য কবীর সুমনের সঙ্গে যোগাযোগ করে গণমাধ্যমটি। এ আলাপচারিতায় তিনি বলেন, “তসলিমা নাসরিন সম্পর্কে আমি আগ্রহী নই। কিন্তু উনি বাংলাদেশের মানুষ হয়ে বারবার কেন কলকাতায় ফিরতে চান? বিজেপির ধারণা, তসলিমা এলে এখানে বিজেপির হয়ে সওয়াল করবেন, ক্যাম্পেইন করবেন। উনার তো অনেক বয়স হয়েছে, পরমেশ্বর উনাকে পথনির্দেশ দিন।”

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়