ঢাকা     সোমবার   ১৮ নভেম্বর ২০২৪ ||  অগ্রহায়ণ ৩ ১৪৩১

চলচ্চিত্র বিশ্লেষণ : অনুভবে অনুক্রোশ

সায়মা রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৩২, ২৯ আগস্ট ২০১৪   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
চলচ্চিত্র বিশ্লেষণ : অনুভবে অনুক্রোশ

অনুক্রোশ চলচ্চিত্রের দৃশ্যে পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় ও রিয়াজ মাহমুদ জুয়েল

সায়মা রহমান : ইমপ্রেস টেলিফিল্মের প্রযোজনায় মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক চলচ্চিত্র ‘অনুক্রোশ`। চলতি বছরের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ছবিটি মুক্তি পেয়েছিলো একই সঙ্গে চ্যানেল আই তে ও বলাকা সিনেমা হলে। অনুক্রোশ শব্দের অর্থ হল দয়া- নামটার মধ্যেই এক রকমের ভিন্নতা আছে , যা আমাকে একটু বেশিই আগ্রহী করে তুলেছিল একজন দর্শক হিসেবে। সত্যি তাই, গোলাম মোস্তফা শিমুলের সাহসী পদক্ষেপে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে একটি নতুন ফলক গাথা হয়ে গেলো অনেকটা নিভৃতেই ! নূতনের বলিষ্ঠ ও স্বার্থক আগমনকে বরণ করে নেয়া এবং তাঁর প্রাপ্য সাধুবাদটুকু জানানোর উদ্দেশ্যেই আমি লিখছি।


পরিচালক গোলাম মোস্তফা শিমুল। প্রথাগত বৃত্তের বাইরে গিয়ে অন্যরকম রুপ দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে উপস্থাপনের এই প্রয়াস নির্দ্বিধায় প্রশংসনীয়। ছবিটা আবর্তিত হয়েছে মূলত একজন যুদ্ধশিশুর অস্তিত্ত্বের সংকট নিয়ে, যে তাঁর মনের ভেতরে লালন করা ঘৃণা, ক্রোধ আর সংশয়।


নিজের জীবন ভাবনার অনেক প্রশ্নের সমাধান খুঁজে বেড়াতে থাকে নিজের ভেতরেই। তাঁর ইন্দ্রিয়গুলোই ক্রমাগত তাঁকে জানান দেয় সে সব প্রশ্নের উত্তর। নাটকীয়ভাবে তাঁর কল্পনায় ধরা দেয় তাঁর সেই অচেনা পিতা যে তাঁর মাকে ধর্ষণ করেছিলো। নিজের পাপের প্রায়শ্চিত্ত করার জন্যে সে পিতা ( একজন সেনা কর্মকর্তা) খুঁজে নেয় তারই সন্তান বিপ্লব কে এবং নিজের সঙ্গে করে নিয়ে যেতে চায় পাকিস্তানে।


বিপ্লব তাঁর এতো এতো বছরের জমানো ক্ষোভ গুলো প্রকাশ করে এবং তার তথাকথিত পিতাকে ফিরিয়ে দেয়। পুরো গল্পটাই আসলে নায়কের ভাবনার জগতের প্রতিফলিত রুপ কেননা এসবই বিপ্লব দেখেছে স্বপ্নে, যেটা ছিল শিমুলের গল্পের একটা দারুন চমক। গোলাম মোস্তফা শিমু্লের নিজের লেখা সংলাপগুলো ছিল তার অনবদ্য সৃজন- যে কথা মনের গভীরে দাগ কেটে রাখে, দর্শকের মনে প্রশ্ন জাগাতে পারে কিংবা ভাবনার জগতকে নাড়া দিতে পারে তেমনি করেই তিনি লিখেছেন সংলাপগুলো।


শিমুলের আরও কিছু কাজ দেখার সুযোগ হয়েছিলো। এর মধ্যে এনটিভি’তে ধারাবাহিক নাটক ``মায়ানিগম`` , একক নাটক ``পিতা মোশাররফ`` এবং সেই ধারাবাহিকতায় শিমুল খুব সফলভাবেই শক্ত বুনটে লিখেছেন তাঁর ছবিটির সংলাপগুলো।


তাঁকে শ্রদ্ধা জানাই এজন্যে যে এই আকালের দিনে যেখানে অশুদ্ধ বাংলা আর অগভীর গল্পগুলো ক্রমশ গ্রাস করে নিচ্ছে আমাদের সকল মাধ্যমগুলো সেখানে শিমুলের এই পদচারণা আশা জাগায়, স্বপ্ন দেখায় শুদ্ধতার এবং সৃজনশীলতার। খুব গভীরভাবে একটি কথা জানি ও মানি তা হলো `` থিঙ্ক আউট অভ দ্যা বক্স`` এবং প্রথাগততার বাইরে ভাবতে না জানলে কোনও কিছুই সৃজনশীল হতে পারেনা, পারেনা নান্দনিক হতে। সে বিচারে শিমুলের এই সৃষ্টি একটি নান্দনিক সৃষ্টি।

 

চরিত্র নির্বাচন ছিল শিমুলের আরেক নিপুনতার দিক, পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় (পাকিস্তানী সেনাকর্মকর্তা) এবং খাইরুল আলম সবুজের (নায়কের মননের রুপক) চৌকশ উপস্থিতি সমৃদ্ধ করেছে তাঁর চলচ্চিত্রটিকে! নায়ক ( রিয়াজ মাহমুদ জুয়েল) চরিত্রের অভিনয় পটুতা ছিল অত্যন্ত আশাব্যাঞ্জক। অন্যান্য চরিত্রগুলোও নিজ নিজ অবস্থানে স্বকীয়তা বজায় রেখেছেন দারুন ভাবে। কোনও নারী চরিত্র ছাড়া একটি গল্প ক্যামন সফল হতে পারে সেটাও শিমুল দেখিয়েছেন দৃঢ়তার সাথে।


অভিনন্দন গোলাম মোস্তফা শিমুল আপনাকে। বাঙ্গালীর জন্য একটি বিশ্বমানের কাজ করেছেন সে জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। ধন্যবাদ জানাই ইমপ্রেসকে তাঁদের পৃষ্ঠপোষকতার জন্য এবং ধন্যবাদ এই ছবিটির আরেকজন প্রযোজক সাথী ইসলাম আপনাকে।


আমি আশা করি গোলাম মোস্তফা শিমুল আরও ভালো কাজ করবেন এবং শুদ্ধতা ছড়িয়ে দেবেন চারপাশে। শুদ্ধচিন্তার মানুষেরা আগ্রহী হবেন শিমুলের কাজে সেই প্রত্যাশাই করছি। সত্যি বলতে কি এত এত হতাশার মাঝেও ‘অনুক্রোশ’ এর মতো কাজ অন্যরকম আনন্দ ছড়ায় মনে। সবশেষে আমি আভিবাদন জানাই যারা সকল বাঁধা পেরিয়ে এমন একটি চলচ্চিত্রকে সফলতার মুখ দেখিয়েছেন।


রাইজিংবিডি/ ঢাকা/ ২৯ আগস্ট ২০১৪/ পাভেল

রাইজিংবিডি.কম


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়