ই-কমার্সে সম্ভাবনাময় খাত মুন্সিগঞ্জের মৃৎশিল্প
শারমিন সাইদ || রাইজিংবিডি.কম
মুন্সিগঞ্জ জেলায় পাল,মোঘল বা বারো ভূঁইয়াদের আনাগোনায় তখন কাঁসা পিতল ও মাটির জিনিসের প্রাধান্য ছিলো অনেক বেশি। এমনকি হিন্দু সম্প্রদায়ের আধিক্য ছিলো অনেক। তাই বিভিন্ন পূজা পার্বণের জন্যও মৃৎশিল্পীদের কারুকার্য কখনো থেমে থাকতো না। পুরো বছর জুড়েই কুমার পাড়ায় থাকতো আনন্দে উৎসবে মাতোয়ারা।
বলছিলাম মুন্সিগঞ্জের মৃৎশিল্প এবং শিল্পীদের নিয়ে। শ্রীনগর থানার হাসাড়া গ্রামে প্রায় ৩০/৪০ টি পরিবার এই মৃৎশিল্পীদের সঙ্গে জড়িত। কুমার পাড়াতে দেখতে সবচেয়ে আকর্ষনীয় হচ্ছে, নারীরা পুরুষদের পাশাপাশি বিলের আঠালো মাটি দিয়ে নিপুন হাতের ছোঁয়ায় চুড়ির টুনটুন শব্দের দোলায় তৈরি করছে এক একটি মাটির আসবাবপত্র। মাটির এসব পণ্য সামগ্রী বানিয়ে কড়া রোদে শুকাতে দেন তারা। এরপর শুকানো হলে তা ছোট্ট ঘরের সাড়িবদ্ধভাবে মাটির সামগ্রী গুলো রেখে খরকুটা কিংবা নাড়ার আগুনে পুড়িয়ে পাকাপোক্ত করা হয়। সম্পূর্ণ পোড়া হলে এসব সামগ্রীতে ছেলে বুড়ো বাচ্চা সবাই একত্রে বসে নিজ হাতে রং করতে থাকে।
তাদের মনের ভেতরের কল্পনার রাজ্যকে রঙ তুলির ছোঁয়ায় ফুটিয়ে তোলে পোড়া মাটির বস্তুতে। অল্প কিছু মাটির ঢেলাকে বিভিন্ন অবয়বে রুপ দিচ্ছে। যা বিভিন্ন নান্দনিক দৃশ্যে পরিণত হচ্ছে ।
এ জেলার মৃৎশিল্পীরা অন্যান্য আসবাবপত্র থেকে মাটির হাড়ি ও খোড়া বা বাটি বেশি তৈরি করে থাকেন। এছাড়াও প্লেট,বাটি,মগ,পিঠা তৈরির ছাঁচ, কলস ইত্যাদিও তৈরি করেন। তবে পূজাপার্বণের সরঞ্জামাদিই বেশি উৎপাদন করা হয়ে থাকে। কিন্তু বর্তমানে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যুগের পরিবর্তনে এসেছে প্ল্যাস্টিক,সিরামিক, মেলামাইন। এগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে টিকে থাকা কষ্টকর মৃৎশিল্পের পণ্যগুলির। তাই মৃৎশিল্প ই-কমার্সের আওতাভুক্ত করা গেলে অনেকটাই বেঁচে যাবে মুন্সিগঞ্জের মৃৎশিল্প এবং শিল্পীরা।
বর্তমানে করোনা পরিস্থিতির কারনে বছরের পুরো সময় জুড়ে মৃৎশিল্পীরা তাদের কাজে ব্যস্ত না থাকলেও, বিভিন্ন পূজা পার্বণ বা মেলা বিশেষ করে বৈশাখী মেলার কথা মাথায় রেখেই কাজ করে। কিন্তু সেখানেও রয়েছে প্রকৃতির অমোঘ অত্যাচার। করনাকালীনে মৃৎশিল্পীদের কাজে চলে এসেছে ঢিলেঢালা ভাব। কারন আগের মতো গত দেড় বছরে তেমন ঘটা করে পূজা যেমন হয়নি, তেমনই উদযাপিত হচ্ছে না পহেলা বৈশাখও। মৃৎশিল্পীরাও বর্তমান করোনা মোকাবেলায় তাদের তৈরীকৃত সামগ্রী নিয়ে বিপাকে পড়েছে। বৈশাখকে ঘিরে তাদের যত স্বপ্ন যেন ভেঙ্গে গেছে।বিনষ্ট হচ্ছে মাটির তৈরি এতোসব পণ্যসামগ্রীও।
তবুও জীবিকার তারনায় সামগ্রিক চাহিদা মেটাতে নারীরা সাংসারিক কাজকর্মের পাশাপাশি মাটির সামগ্রী তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করেই চলেছে। দেশের মৃৎশিল্প বাঁচানোর লক্ষ্যে মুন্সিগঞ্জ জেলার কুমার পাড়াকে নতুন করে সজাগ করতে সরকার এবং স্থানীয় কর্তপক্ষকে এগিয়ে আসতে হবে।
লেখকঃ স্বত্বাধিকারী, ইনোভেন্টিক ফ্যাশন এবং মুন্সিগঞ্জ জেলা কনট্রিবিউটর লেখক (উদ্যোক্তা/ই-কমার্স পাতা, রাইজিংবিডি ডটকম)
মুন্সিগঞ্জ/সিনথিয়া