চাকরি ছেড়ে সফল উদ্যোক্তা সাইফুল
মেহেদী হাসান || রাইজিংবিডি.কম
একটি বায়িং হাউজের মার্চেন্ডাইজার হিসেবে চাকরি করছিলেন। বেতন মোটামুটি চলার মতো। আবার মাথার উপর দুই লাখ টাকার ঋণের বোঝা। তবুও চাকরি ছেড়ে দেন। কারণ, স্বপ্ন উদ্যোক্তা হওয়ার।
বলছিলাম পাবনার বেড়া উপজেলার নাটিবাড়ি গ্রামের মো. সাইফুল ইসলামের কথা। তিনি মৃত আজহার আলী ও আনোয়ারা বেগমের ছেলে। বর্তমানে থাকছেন রাজধানীর দক্ষিণ কেরানিগঞ্জ এলাকায়। সরকারি কবি নজরুল কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকভিত্তিক ব্যবসায় একজন সফল উদ্যোক্তা তিনি। তার পেজের নাম ‘বাকল’। এই পেজের মাধ্যমে প্রতিমাসে বেশ ভালোই আয় করছেন তিনি। তবে শুরুটা সহজ ছিলো না।
সাইফুল বলেন, ছাত্র অবস্থায় সবসময় চিন্তা করতাম এবং স্বপ্ন দেখতাম, একদিন সমাজের কাছে নিজেকে পরিচিত করাবো একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী হিসাবে। কিন্তু তখন টাকা ছাড়া ব্যবসার চিন্তা করা একটি অকল্পনীয় বিষয় ছিলো। ২০১২-১৩ সালের দিকে খুব কম মানুষ বিশ্বাস করতো যে, ফেসবুকের মাধ্যমে বা অনলাইনে খুব সহজে ব্যবসা করা যাবে। আমি কিন্তু তখন থেকেই চিন্তা করেছিলাম, একটি নিদিষ্ট পেশায় চাকরি করে দক্ষতা অর্জন করবো এবং সে অনুযায়ী পরবর্তীতে ব্যবসা করবো।
যে চিন্তা সেই কাজ। প্রথমে একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টারিতে নিজের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য কাজ শুরু করেন সাইফুল। তারপর সেটা ছেড়ে একটি বায়িং হাউজের মার্চেন্ডাইজার হিসেবে চাকরি নেন। পরে ২০১৯ সালে শেষের দিকে ব্যবসা করার জন্য ওই চাকরিটাও ছেড়ে দেন তিনি।
সাইফুল বলেন, অনেকে পরামর্শ দিতো ব্যাংকের চাকরি বা সরকারি চাকরির করতে। কিন্তু ব্যাংকে চাকরি করলে কখনও একটি ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা যাবে না। আবার সরকারি চাকরি করলে ব্যবসা সম্ভব না। করোনার ছয় মাস আগে আমি চাকরি ছেড়ে দিয়ে জমানো ও ধার করে মোট তিন লাখ টাকা জোগাড় করে ব্যবসায় বিনিয়োগ করি। এরপর করোনা শুরু হওয়ায় ব্যবসায় লোকসান হয়। কিছু টাকা অবশ্য ওঠাতে পেরেছিলাম। তবে হতাশ হইনি। আবারও নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করি। এরই মধ্যে ফেসবুক গ্রুপ ‘ডিজিটাল স্কিল ফর বাংলাদেশ’ এর সন্ধান পাই এবং সেখান থেকে জানতে পারি ই-কমার্স সম্পর্কে।
সেখান থেকে তিনি পরিচিত হন ই-কমার্স অ্যাসোসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক সভাপতি রাজিব আহমেদের সঙ্গে। তিনি বলেন, রাজিব আহমেদ স্যার সার্চ ইংলিশের প্রতিষ্ঠাতা ও স্বীকৃতিপ্রাপ্ত দেশের প্রথম ফেসবুক কমিউনিটি লিডার। তার কাছ থেকে ভীষণভাবে অনুপ্রাণিত হই। তখনই জানতে পারি ফেসবুককে সঠিকভাবে ব্যবহার করে বা বুস্ট না করে কিভাবে উদ্যোক্তা হওয়া যায়। ‘ডিজিটাল স্কিল ফর বাংলাদেশ’ গ্রুপে উদ্যোক্তাদের জন্য স্যারের দেওয়া গাইডলাইন ২০২০ সাল থেকেই মেনে আসছি এবং সে অনুযায়ী কাজ শুরু করি।
‘বাকল’-এর স্বত্ত্বাধিকারী সাইফুল ই-কমার্সে তার যাত্রা শুরু করেছিলেন নিজ জেলা পাবনার লুঙ্গির নিয়ে। সাইফুল বলেন, সিদ্ধান্ত নেই দেশীয় তাঁত বস্ত্র নিয়ে কাজ শুরু করার। আমাদের পাবনা জেলা তাঁতের লুঙ্গির জন্য বিখ্যাত। পাবনার তাঁতবস্ত্রের যথেষ্ট সুনাম ও দীর্ঘ ইতিহাস আছে। এজন্য প্রথম শুরুটা করি লুঙ্গি দিয়ে। অবশ্য শুরুতেই গ্রাহকদের আস্থা অর্জনসহ নানা বিষয়ে দো’টানা কাজ করছিলো। এখন আর সেটা নেই। বর্তমানে আমি ফেসবুকের মাধ্যমে সারাদেশ দেশীয় পণ্যের প্রচার করে যাচ্ছি ‘বাকল’র মাধ্যমে।
সাইফুল বলেন, আমি পাবনার লুঙ্গির বিশেষত্বকে ফেসবুকের মাধ্যমে তুলে ধরতে পেরেছি এবং তৈরি করতে পেরেছি আমার নিজস্ব একটি ব্র্যান্ড ‘বাকল’। বাকলের লুঙ্গি মানুষের কাছে প্রচার ও পৌঁছানোর মাধ্যমে দেশের নামিদামি কোম্পানিগুলোর পাশাপাশি নিজেকে একজন উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করাতে পেরেছি। প্রতিমাসে তিনি ৭০-৮০ হাজার টাকার পণ্য বিক্রি করছেন বলেও জানান তিনি।
নতুন উদ্যোক্তদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য সর্বপ্রথম নিজের ভেতর থেকে স্বপ্ন দেখতে হবে। ই-কমার্স যেহেতু কন্টেন্ট নির্ভর, তাই পণ্য সেলের পাশাপাশি নিজের প্রতিষ্ঠানকে প্রতিযোগিতায় টিকিয়ে রাখতে নিয়মিত স্ট্যাডি করা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আর ই-কমার্সের সবচেয়ে ভালো দিক হলো, যেকোনো স্থানে বসে ব্যবসা পরিচালনা করা যায়।
/ফিরোজ/
আরো পড়ুন