ঢাকা     সোমবার   ০১ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৭ ১৪৩১

কাস্টমাইজড পণ্যে সফল নারী উদ্যোক্তা আদিবা

মেহেদী হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:২৯, ২১ জানুয়ারি ২০২৪  
কাস্টমাইজড পণ্যে সফল নারী উদ্যোক্তা আদিবা

‘করোনা শুরু হলে অর্থ সংস্থানের একমাত্র অবলম্বন হাতে থাকা টিউশনটা বন্ধ হয়ে যায়। ছাত্রকে অর্ধেক মাস পড়াতে পেরেছিলাম। সেই টিউশনি থেকে অর্ধেক মাসের বেতন থেকে বেঁচে যাওয়া ৫০০ টাকা ছিল আমার প্রথম পুঁজি। সেটা দিয়ে টুকিটাকি জিনিস কিনে কাজ শুরু করি।’

এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন আদিবা আনতারা তন্দ্রা নামে এক সফল নারী উদ্যেক্তা। তিনি রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স পড়ুয়া শিক্ষার্থী। বর্তমানে থাকেন মোহাম্মদপুর এলাকায়। ‘তন্দ্রাচ্ছন্ন-Addiction of Dream’ নামে একটি ফেসবুক পেজ রয়েছে। লেখাপড়ার পাশাপাশি সফলতার সঙ্গে গ্রাহকদের কাছে তার পণ্য পৌঁছিয়ে দিচ্ছেন। তবে শুরুটা মোটেই সহজ ছিল না।

আদিবা বলেন, প্রথমদিকে কীভাবে শুরু করবো বুঝতে পারছিলাম না। নানা সঙ্কায় ছিলাম। হঠাৎ একদিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ‘উই’ গ্রুপের সন্ধান পেয়ে সেখানে যুক্ত হই। সেখান থেকেই রাজিব আহমেদ স্যারের সম্পর্কে জানতে পারি। স্যারের মাধ্যমে অনেকেই দেশি পণ্যের উদ্যোক্তা হয়েছেন এমনটা শুনেছিলাম। মুলত দেশি পণ্যের গ্রুপই ছিল উই, যেখানে বেশিরভাগ নারী উদ্যোক্তারা সম্পৃক্ত আছেন। অন্যদের মতো উই গ্রুপে সাহস করে আমিও আমার প্রথম কাজের একটি পোস্ট করি এবং ভালোই সাড়া পাই। দ্বিতীয় পোস্টে প্রথমবারের মতো কাস্টমাইজড ক্যালিওগ্রাফি প্যাইন্টিং-এর দুইটা অর্ডার আসে। তারপর থেকে ধীরে ধীরে ক্রেতা ইচ্ছায় নতুনত্ব যোগ হয়েছে। এখন ক্রেতা ইচ্ছায় কাস্টমাইজড করা গহনা, শাড়ি, পাঞ্জাবি, ব্যাগসহ নানা পণ্য নিয়ে কাজ করে থাকি।

তিনি বলেন, প্রথম প্রথম নবউদ্যোক্তা হিসেবে পণ্যের সোর্স নিয়েও অনেক সমস্যা ছিল। আস্তে আস্তে সোর্সেরও সন্ধান পেয়ে যায়। এক্ষেত্রে উই গ্রুপটি আমার বেশ কাজে দিয়েছিল। গ্রুপের বিভিন্ন উদ্যাক্তা আছেন, যারা নিজস্ব জেলার বিখ্যাত পণ্য নিয়ে কাজ করে থাকেন। যখন যে কাপড় বা জিনিসের দরকার পড়ে, সেটা সেখান থেকেই সংগ্রহ করি। কিছু বিভিন্ন সোর্সের মাধ্যমেও সংগ্রহ করি। যেমন- রাজশাহীর সিল্ক।

তবে সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল পরিবার থেকে। তার ভাষ্য মতে, পরিবার থেকে প্রথম প্রথম লুকিয়ে কাজ করছিলেন তিনি। বিষয়টি জানার পর অনেক সমস্যা হয়েছিল। প্রথমদিকে পরিবারের কেউ মানতে চাননি। আবার কিছু অযাচিত বন্ধু-বান্ধবের পরোক্ষ টিপ্পনী তো ছিলই।

আদিবা মুলত ‘র’ পণ্য সংগ্রহ করেন। তারপর সেটাতে সুক্ষ্ম হাতে ফুটিয়ে তোলেন নিজের কারিশমা। তিনি বলেন, নিজের ডিজাইন করা পোশাক, গহনাসহ নানা পণ্যে হ্যান্ডপেইন্টের মাধ্যমে কাস্টমাইজড করি। এর ডিজাইন, কন্সেপ্ট, হাতের কাজ, হ্যান্ডপেইন্টসহ সবকিছু আমি একাই করি। এসব ক্রিয়েটিভ কাস্টমাইজড পণ্যগুলো আমার পেজে ও বিভিন্ন গ্রুপে পোস্ট করি। এভাবেই গ্রাহকদের কাছে আমার পণ্য পৌঁছে যায়।

অন্য প্রায় সবার মতোই তার শুরুটা অনেক প্রতিকূলতার মধ্য দিয়েই পার হয়। তবে এখন অনেকটাই কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘তন্দ্রাচ্ছন্ন-Addiction of Dream’ নামে আমার ফেসবুক ভিত্তিক পেজ রয়েছে। যেখানে সব কিছুই আমি একাই করে থাকি। গল্প শুরু উই থেকেই এবং সেখান থেকেই প্রথম লাখপতির খাতায় নাম লিখিয়েছি। তবে দুই-এক দিনে নয়। এর জন্য অনেক কষ্ট করতে হয়েছে।

প্রতিমাসে আদিবা আনতারা তন্দ্রা বেশ ভালোই আয় করেন। তবে তিনি নির্দিষ্ট করে বলতে চান না। তন্দ্রা বলেন, সৎ উদ্যোগে লাভ এবং লস দুটোই থাকে। তাই মাসিক আয়ের নির্দিষ্ট কোনো সংখ্যা নেই। লাভ ও লস মিলিয়েই প্রতিমাসে কম-বেশি আসে। আমার সেল এখনো ফেসবুক পেজ ও গ্রুপ এবং পারসোনাল ব্র‍্যান্ড ভিত্তিক। আস্তে আস্তে এর প্রসার বৃদ্ধির চেষ্টা চলছে। যেহেতু একা হাতে সবকিছু করি, এজন্য অন্যদের চেয়ে প্রতিটি পণ্যে সময় এবং শ্রম আমার বেশি লাগে। সবচেয়ে বড় কারণ, ক্রিয়েটিভ কাজ আপনি চাইলেই হুটহাট অন্য কাউকে দিয়ে করতে পারবেন না। বিশ্বাসযোগ্যতা বজায় রাখার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে কাজ করে। তাই আমার কাজ করতে হয় সংখ্যা মেপে।

তিনি আরও বলেন, ক্রিয়েটিভ কাজগুলো সম্পন্ন করা বেশ কঠিন। আবার সবকিছু আমাকেই করতে হয়। তাই চাইলেই, মাসে অনেক বেশি অর্ডার নিতে পারি না। সব সময় সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করি।

এই নারী উদ্যোক্তার দেশি-বিদেশি গ্রাহকও রয়েছেন। বিদেশি গ্রাহকরা মুলত প্রবাসী বাঙালি। তিনি বলেন, আমার অনেক পণ্য বেশ কয়েকবার বিদেশে পাঠিয়েছি। তারা বিশ্বাসও করেছেন। বর্তমানে কিছু পোশাক কানাডায় পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে।

এমন সফলতায় উচ্ছ্বাসিত হয়ে সবকিছু দ্রুত পরিবর্তন করতে চান না আদিবা তন্দ্রা। তিনি এখন ডিজিটাল স্কিল গ্রুপের মাধ্যমে আরও অনেক কিছু শিখছেন। আদিবা বলেন, নিয়মিতই শিখছি। শেখার এখনো অনেক বাকি আছে। আমার কোনো বিশেষ টিম বা কর্মী নেই। যেহেতু আমার কাজ ক্রিয়েটিভ সাইড নিয়ে, এজন্য ভেবেচিন্তে সামনে এগোতে চাই। সামনে সব ধরনের দেশি পণ্যে হাতের কাজ বা হ্যান্ডস্টিচ যোগ করার ইচ্ছা রয়েছে। এক কথায়, দেশিয় পণ্যে একটু ভিন্ন মাত্রা যোগ করাতে চাই। যাতে সবাই আমাদের দেশিয় পণ্যের প্রতি বেশি আগ্রহী হয়।

তন্দ্রা কোনোকিছুই অগ্রীম ভেবে রাখেন না। তিনি অল্প অল্প করে আগাতেই পছন্দ করেন। তিনি বলেন,  যেকোনো সময় পরিস্থিতি প্রতিকূলে যেতে পারে। সব রকম পরিস্থিতিতে নিজের উদ্যোগকে টিকিয়ে রাখতে চাই এবং টিকে থাকতে চাই। দেশিয় পণ্য বিদেশে উপস্থাপন করে রপ্তানি আয় বৃদ্ধিই আমার স্বপ্ন।

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়