এসএমই মেলায় ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়, উদ্যোক্তারাও খুশি
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) গত ১৯ মে শুরু হয় ১১তম জাতীয় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প পণ্য মেলা। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ফাউন্ডেশনের (এসএমই ফাউন্ডেশন) উদ্যোগে আয়োজিত এ মেলা শেষ হবে আগামী ২৫ মে। বৃহস্পতিবার (২৩ মে) দুপুরে শেষ সময়ে শতভাগ দেশীয় পণ্য কিনতে মেলায় ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। বেলা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা আরও বেড়ে যায়।
জানা গেছে, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তাদের উৎসাহ ও তাদের পণ্যের প্রচার-প্রসারে এসএমই ফাউন্ডেশন এ মেলার আয়োজন করেছে। শতভাগ দেশী পণ্যের এ মেলায় রয়েছে ৩৬০টি স্টল। এসব স্টলে দুপুর থেকেই ভিড় ছিল। আর বিকেলে কর্মজীবীদের অনেকেই অফিস শেষ করে মেলায় আসেন তাদের পছন্দের পণ্য কিনতে। এতেই তুলনামূলক ক্রেতাসংখ্যা দুপুরের চেয়ে তিন গুণ বেড়ে যায়।
আয়োজকরা বলছেন, ক্রেতাদের দেশীয় পণ্যের চাহিদা থাকায় গত বছরের চেয়ে এবার বেশি ভিড় দেখা গেছে। মেলায় প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে উঠে আসা অনেক উদ্যোক্তাদের স্টলও রয়েছে। গত রোববার থেকে আজ পঞ্চম দিন (বৃহস্পতিবার) পর্যন্ত প্রচুর পণ্য বিক্রি হয়েছে। আগামী শুক্র ও শনিবার, দুদিন সরকারি ছুটি ও মেলার শেষ পর্যায় হওয়ায় পণ্যবিক্রি প্রথম ৫ দিন ছাড়িয়ে যাবে বলে আয়োজকদের ধারণা।
ফার্মগেট থেকে আসা সরকারি চাকরিজীবী জেসমিন সুলতানা রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘বুধবার পরিবার নিয়ে মেলায় ঘুরতে এসেছিলাম। কিছু পণ্যও কিনেছিলাম। আজ আবারও শাড়ি দেখতে আসলাম। পছন্দ হলে নেব। পণ্যগুলো শতভাগ দেশি, বৈচিত্র্যময়। আর গুণগত মানও অনেক ভালো হওয়ায় অফিস থেকে সরাসরি চলে এসেছি।’
এবারের মেলায় সবচেয়ে বেশি পোশাক খাতের ৭৫টি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করেছে। এ ছাড়া ৪২টি প্রতিষ্ঠান পাটজাত পণ্য, ৩৮টি হস্তশিল্প, ৩২টি চামড়াজাত পণ্য এবং ২৭টি প্রতিষ্ঠান প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য প্রদর্শন করছে। এ ছাড়াও ২৩টি লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য, ১৪টি খাদ্যপণ্য, ১৩টি আইটিভিত্তিক পরিষেবা, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ১২টি এসএমই ক্লাস্টার উদ্যোক্তা, পাঁচটি ভেষজ শিল্পের পণ্য এবং পাঁচটি প্রতিষ্ঠান গয়নাপণ্য প্রদর্শন করছে।
একইসঙ্গে চারটি স্টলে প্লাস্টিকপণ্য, তিনটি ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স সেক্টর, তিনটি আসবাবপত্র এবং ১৯টি বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিত্ব করছে। এ ছাড়া ৩০টি ব্যাংক, ১৫টি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস ক্লাব এবং প্রায় ৫০টি অন্যান্য প্রতিষ্ঠান মেলায় অংশগ্রহণকারীদের সেবা দিচ্ছে।
ফ্যাশন ডিজাইনার সাইমা সুলতানা স্নিগ্ধা বিভিন্ন ধরনের দেশি তাঁতপণ্য নিয়ে মেলায় অংশগ্রহণ করেছেন। পণ্যের বিক্রি গতবারের তুলনায় বেশি হচ্ছে উল্লেখ করে এ নারী উদ্যোক্তা রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘দ্বিতীয়বারের মতো আমি এসএমই মেলায় অংশগ্রহণ করছি। দেশি ও হাতে বোনা পণ্য একটু ব্যয়বহুল হয়। এটা যারা জানেন, তারাই মূলত বেশি দেখে-শুনে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। সমতলের তাঁতিপণ্যের পাশাপাশি আমার কাছে পাহাড়ি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের পণ্যও আছে। তাঁতিদের কাছ থেকে পণ্য এনে আমি ফিউশন করি। গত বছরের মেলায় আমি প্রায় ১ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি করেছিলাম। আশা করি, এবার সেটা ছাড়িয়ে যাবে।’
তার কাছে সর্বোচ্চ ৩৫ হাজার টাকা দামের শাড়িও আছে বলে জানান এ নারী উদ্যোক্তা।
মেলায় আনসারি ফুড ফেয়ার নামে খাদ্যপণ্য নিয়ে স্টল দিয়েছেন মোছা. সাবিহা আনসারি। এ উদ্যোক্তা বিভিন্ন হস্তজাত পোশাকের পাশাপাশি অর্গানিক ফুড নিয়ে কাজ করেন। তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘গত পাঁচ বছর ধরে আমরা এসএমইর মেলায় অংশগ্রহণ করে আসছি। আমাদের রোজেলা টি, রোজ টি, মড়িঙ্গা, ঘি, মাঠা, আখের গুড়, বিট রুটসহ বিভিন্ন ধরনের অর্গানিক পণ্য রয়েছে। এ ছাড়া হ্যান্ডি ক্রাফটসও রয়েছে। একেবারে শেষ সময়ে আবেদন করায় মেলায় সুবিধামতো জায়গায় স্টল পায়নি, একটু ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে আছি। তারপরও বেশ ভালো বিক্রি হয়েছে। আশা করছি, এবার বিক্রি ৩ লাখ টাকা ছাড়িয়ে যাবে। আমি ইতোমধ্যে কানাডার ভিসা পেয়েছি। টরেন্টোতে আয়োজিত একটি মেলায় দেশীয় নানা পণ্য নিয়ে অংশগ্রহণের জন্য যাচ্ছি।’
এসএমই ফাউন্ডেশনের বিজনেস সাপোর্ট সার্ভিস উইং’র উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. রাকিব উদ্দিন খান রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘এবার মেলায় সাড়ে ৩ শতাধিক স্টল রয়েছে। ক্রেতা উপস্থিতি বেশ সন্তোষজনক। বুধবার সরকারি ছুটি হওয়ায় বিকেল ৩টার পর থেকে ক্রেতাদের প্রচুর সমাগম দেখা গেছে। উদ্যোক্তারা তাদের পণ্য প্রচুর বিক্রি হওয়ায় খুবই সন্তোষ প্রকাশ করেছে। শনিবার আমাদের মেলা শেষ হবে। গত ৫ দিনে যে পরিমাণ বিক্রি হয়েছে, আগামী দুই দিন সরকারি ছুটি থাকায় তার চেয়ে বেশি বিক্রি হবে বলে আশা করছি।’
এবার কী পরিমাণ পণ্য বিক্রি হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গতবার প্রায় ১৭ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি হয়েছিল। এবার ২০ কোটি টাকার বেশি বিক্রি হবে আশা করছি। তবে, শুক্রবার প্রত্যেক স্টলে আমি একটি করে ফরম দেব এবং পরদিন শনিবার বিকেলে তাদের থেকে অর্ডার ও বিক্রির তথ্য নিয়ে সঠিক হিসাব দিতে পারব।’
তিনি আরও বলেন, ‘মেলাশেষে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে অংশ নেওয়া একজন করে সেরা উদ্যোক্তাকে ক্রেস্ট ও সনদ তুলে দেওয়া হবে। এ নিয়ে আমাদের সাত সদস্যের একটি কমিটি আছেন। তারা আজ ও আগামীকালে মধ্যেই পণ্যে মান, দাম, বিক্রি বিবেচনায় সেরাদের বাছাই করবেন।’
১২তম মেলার বিষয়ে এ কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের আগামী মেলা ২০২৫ সালের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত হবে বলে আশা করছি। সে অনুযায়ী ইতোমধ্যে কাজও শুরু হয়ে গেছে। এ ছাড়া আমাদের যে বিভাগীয় মেলাগুলো হয়, সেটা নিয়েও দ্রুত কাজ শুরু হয়ে যাবে। এই অর্থবছরের মধ্যে যতগুলো মেলার আয়োজন হওয়ার কথা, সেগুলো যথাসময়ে বাস্তবায়ন হয়ে যাবে।’
/এনএইচ/