ঢাকা     রোববার   ০৭ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২৩ ১৪৩১

বিচিত্র অভিজ্ঞতা থেকে সফল উদ্যোক্তা নাদিরা

হৃদয় তালুকদার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:১০, ৪ জুলাই ২০২৪   আপডেট: ১২:৩১, ৪ জুলাই ২০২৪
বিচিত্র অভিজ্ঞতা থেকে সফল উদ্যোক্তা নাদিরা

সম্মাননা গ্রহণ করছেন নাদিরা হাসান

নাদিরা হাসানের জন্ম চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার নিচুধুমি গ্রামে। বাবার চাকরিসূত্রে বেড়ে উঠেছেন বগুড়ায়। নাদিরা হাসান এসএসসি পাস করেন ২০০০ সালে কিন্তু তার আগেই ১৯৯৯ সালের ২০ অক্টোবর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। রক্ষণশীল পরিবারে বেড়ে ওঠা নাদিরার বিয়ে হয় রাজনৈতিক পরিবারের ছেলের সঙ্গে। এরপর জীবন অনেকাংশে পরিবর্তন হয়। বিয়ের পরে এসএসসি এবং এইচ এসসি পাস করেন নাদিরা। ২০০৩ সালে প্রথম সন্তানের মা হন তিনি।

পরিবারের বাধা না থাকায় ২০০৫ সাল থেকে একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলে পড়াতেন নাদিরা। ২০০৯ সালে দ্বিতীয় সন্তানের মা হলে পড়ানো বন্ধ রাখেন। এরপর ম্যানেজার হিসেবে ২০১০ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত একটি আইটি সেক্টরে চাকরি করেন নাদিরা। কৃতিত্ব স্বরূপ লাভ করেন  বেস্ট ওয়ার্কার অ্যাওয়ার্ড।

২০১৩ সালে নাদিরা নিজেই খুলে বসেন একটি আইটি প্রতিষ্ঠান। শুরুতে ২৬ জন স্টাফ নিয়ে কাজ শুরু করেন কিন্তু আশানুরূপ ফল পাচ্ছিলেন না।  প্রতিষ্ঠান শুরুর তিন মাসের মাথায় বড় ধরনের লসের জন্য বন্ধ হয়ে নাদিরার সেই প্রতিষ্ঠান। এরপর আবার শুরু করেন শিক্ষকতা।

২০১৯ সালে টিএমএমএস থেকে ফুড অ্যান্ড বেভারেজ- এর ওপর ৩ মাসের ট্রেনিং নেন তিনি। শিখে ফেলেন নানা ধরনের খাবার তৈরি। ট্রেনিং চলাকালীনই স্থানীয় স্কুলে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের কাছে দুপুরের খাবার বিক্রির চেষ্টা শুরু করেন। শুরুতে অর্ডার পাচ্ছিলেন না, হতাশও হয়েছিলেন। এরপরে স্থানীয় আজিজুল হক কলেজের শিক্ষকেরা নাদিরার খাবার অর্ডার করেন। শুরু হয় নাদিরার নতুন উদ্যোমে পথচলা। 

পরবর্তীতে ২০২০সালে ৪ জানুয়ারি ‘নিজের বলার মতো একটা গল্প’ গ্রুপের মহাসম্মেলনে বগুড়ায় স্টল নিয়ে খাবার বিক্রি করেন নাদিরা।

২০১৯ সালে মহামারি করোনায় সব স্থবির হয়ে এলে বন্ধ হয়ে যায় নাদিরা খাবার বিক্রির দোকান। বাসায় বন্দি সময় কাটাতে থাকেন তিনি।  ওই সময়ে নিজের সন্তানের জন্য প্রায়ই লাচ্ছা সেমাই তৈরি করতেন নাদিরা, সেসব ছবি শেয়ার করতেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ছবি দেখে একজন ১৫ কেজি লাচ্ছা সেমাইয়ের অর্ডার দেন। এরপরেই নতুন উদ্যোমে অনলাইন বিজনেস শুরু করেন নাদিরা। ২০১৯ সালে ১৪ সেপ্টেম্বর ‘এন এস ফুড কর্ণার’ নামে একটা পেইজ খুলে বিভিন্ন খাবারের ছবি আপলোড দিতে শুরু করেন। একের পর এক অর্ডারও পেতে শুরু করেন নাদিরা।

এরপরে ২০২৩ সালে ১৭ ফেব্রুয়ারি ৬৪ জেলার মধ্যে বগুড়া থেকে ‘লবি রহমান কুকিং ফাউন্ডেশন’ এর আয়োজনে পিঠা প্রতিযোগিতায় বগুড়া থেকে প্রথম স্থান অধিকার করেন নাদিরা। ততদিনে আশেপাশে ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ পরিচিত হয়ে উঠেছেন নাদিরা। বিভিন্ন জায়গা থেকে ট্রেনিং নিয়ে নিজেকে আরো শাণিত করেছেন তিনি, পাশাপাশি বিভিন্ন মেলায় অংশগ্রহণও করেছেন।

নাদিরা শুধু নিজেই স্বাবলম্বী হতে চায় তা নয়, তিনি অসহায় নারীদের পাশে দাঁড়াতে চান। এই চাওয়া থেকেই নারীদের ২০২৩ সালের ১৭ই সেপ্টেম্বর বগুড়া শহরে যাত্রা শুরু হয় নাদিরার ‘ইন্দুবালা ভাতের হোটেল’।

ইন্দুবালা ভাতের হোটেল বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন বগুড়ায়। আশেপাশের জেলা থেকেও অনেকেই আসেন এই হোটেলের খাবারের স্বাদ গ্রহণ করতে।  ইন্দুবালা ভাতের হোটেলে পাওয়া যায় ট্রেডিশনাল খাবার, যেমন— নারকেল দিয়ে কচু বাটা, কুমড়ার ছককা, সোনামুগের ডাল, আম দিয়ে পাবদা মাছের ঝোল, কচু ঘন্ট, চিংড়ি ভর্তা, বাদাম ভর্তা, শুটকি ভর্তা, আম দিয়ে ডালসহ হরেক রকম খাবার। পাওয়া যায় এই হোটেলে। এছাড়াও পাওয়া যায় হরেক রকমের ভাজি, মাছ, মাংস, পোলাও,বিরিয়ানি ইত্যাদি।

ইন্দুবালা ভাতের হোটেলের যাত্রা কীভাবে শুরু এ বিষয়ে নাদিরা বলেন, ‘একটা প্রোজেক্টে যুক্ত হয়ে কাজ করার উদ্দেশ্যে গোডাউন ভাড়া নেওয়া হয়েছিল। সেই গোডাউনের ভাড়া কীভাবে উঠানো যায়— সেই চিন্তা থেকে ইন্দুবালা ভাতের হোটেলের কার্যক্রম শুরু করি। কল্লোল লাহিড়ীর লিখা বই ইন্দুবালার জীবন কাহিনী মিলে যায় আমাদের মতো অনেক মেয়ের সাথে, সেই ভাবনা থেকেই আমার কাজের সঙ্গে নারীদের চিন্তা করার কথা মাথায় আসে। এখন আমার হোটেলে ৬ জন নারী কাজ করছেন।’

নাদিরা হাসান আরও বলেন, খাবার খেয়ে কেউ প্রশংসা করলে কাজের আনন্দ বেড়ে যায়। 

/লিপি

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়