ঢাকা     শনিবার   ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  পৌষ ১৩ ১৪৩১

চাকরি-সংসার সামলে উদ্যোক্তা সুমনা

হৃদয় তালুকদার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৪৮, ২৭ জুলাই ২০২৪   আপডেট: ১০:১৬, ৩ আগস্ট ২০২৪
চাকরি-সংসার সামলে উদ্যোক্তা সুমনা

সফল উদ্যোক্তা সুমনা

ফারহানা আসমা সুমনার জন্ম ও বড় হওয়া ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের মানিকদিতে। তার ডাকনাম সুমনা। সুমনার বাবা ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার, মা পেশায় শিক্ষিকা। চার ভাই বোনের মধ্যে সবার ছোট সুমনা। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের পড়াশোনা করেছেন ঢাকার বিএফ শাহীন কলেজে। এরপর তিতুমীর কলেজ থেকে অনার্স শেষ করে সুমনা ২০০০ সালের জুলাই মাসে জয়েন করেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা হিসেবে।

চাকরির তিন মাসের মাথায় বাবাকে হারিয়ে ভেঙে পড়েন তিনি। পরের বছর চাকরির সুবাদে গাজীপুরের পিটিআইতে যেতে হয় ট্রেনিংয়ের জন্য৷ মাস্টার্স পড়া হয়ে ওঠে না তার। পরবর্তীতে স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে শেষ করেন এমবিএ।

সুমনার ইচ্ছা ছিলো ব্যাংকার হবেন। কিন্তু হয়ে যান স্কুলশিক্ষিকা। বিয়ের পর সংসার আর স্কুলের চাকরি নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয় তার। এর মধ্যেও ছোটবেলার শখ কাজে লাগিয়ে তিনি  এখন সফল উদ্যোক্তা।

আরো পড়ুন:

ছোটবেলা থেকেই আঁকা-আঁকি করতে বেশ ভালোবাসতেন সুমনা। মায়ের কাছে শিখেছিলেন হাতের কাজ। এরপর সুমনা ভাবতে লাগলেন ছেলেবেলার দক্ষতাও তো কাজে লাগানো যায়। সেই ভাবনা থেকেই অনলাইনে ব্যবসার কথা ভাবতে থাকলেন তিনি।

২০১৮ সালের অক্টোবরে যাত্রা শুরু করে তার Fashion & Fashion House. (যার নাম পরবর্তীতে Farhana's Fashion House নাম করা হয়)। সুমনা বিক্রি শুরু করেন ইন্ডিয়ান থ্রি পিস। শুরুতে ভালো সাড়া পেয়েছিলেন সহকর্মীদের থেকে। এরপর নানা ধরনের পরিকল্পনা শুরু করেছিলেন, ভেবেছিলেন শাড়ি ও হ্যান্ড-পেইন্টের কাজ শুরু করবেন। সেই ভাবনা থেকেই করোনাকালে শুরু করেন হ্যান্ড পেইন্ট প্র্যাকটিস।

তার হ্যান্ড-পেইন্ট করা শাড়ি ও বিছানার চাদর পরিচিতজনদের কাছে সমাদৃত হয়। সর্বপ্রথম অর্ডার পেয়েছিলেন বিছানার চাদরের। এরপর পরিচিতজনদের কাছ থেকে শাড়ির অর্ডার পেতে শুরু করেন। গয়নাও বানান সুমনা। এই কাজে তাকে সহায়তা করে মেয়ে রিদা আর ছেলে শাবীব।

বর্তমানে সুমনা কাজ করছেন জামদানী  ও হ্যান্ড পেইন্ট নিয়ে। ক্রেতাদের সুবিধার্থে দুটি অনলাইন পেজ পরিচালনা করেন সুমনা।

Farhana's Fashion House  এ দেশীয়  পোশাক যেমন জামদানী, বাটিক,  মনিপুরী শাড়ি, থ্রি পিস, পাঞ্জাবি বিক্রি করেন এবং ‘অঙ্কন কথন’ পেজে ব্লক ও হ্যান্ড পেইন্টের প্রোডাক্ট বিক্রি করেন তিনি। তার হাতে আঁকা শাড়ি ও পাঞ্জাবি দেশের গণ্ডি পেরিয়ে পৌঁছে গেছে ফ্রান্সেও। প্রায় তিন বছর ধরে ফ্রান্সের উদীচী শিল্পগোষ্ঠী তাদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য সুমনার শাড়ি ও পাঞ্জাবি নিয়ে থাকে।

অনলাইন দুনিয়ায় ব্যবসার অর্ধযুগ পার করেছেন সুমনা। এর মধ্যে তিক্ত অভিজ্ঞতাও অর্জন করেছেন।নানা জনের নানা কথা উপেক্ষা করে সুমনা এগিয়ে গিয়েছেন। মাঝে মধ্যে ভেঙে পড়লেও আবারো ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। এই যাত্রাপথে সবসময় সঙ্গে ছিলেন তার স্বামী রাজীব আফতাব। তা ছাড়া সুমনাকে সবসময় সাহায্য করেছেন তার পরিবারের লোকজন।

সুমনা আরও বলেন, ‘দেশের বাইরে এই পরিচিতিতে আমার পাশে ছিল Test of Products অনলাইন গ্রুপের প্রধান স্বত্বাধিকারী জাহিদা আনোয়ার লিওনা। তার প্রতি কৃতজ্ঞতা থাকবে আজীবন। কিছু অসাধু ব্যক্তির কারণে অনলাইনে বিক্রয় আজ আস্থাহীন হয়ে পড়েছে তার মাঝেও কিছু গ্রুপের কথা না বললেই নয় যাদের কর্ম পরিকল্পনা আমাদের মতো ক্ষুদ্র অনলাইন উদ্যোক্তাদের জন্য অনেক বড় ঢাল হয়ে আছে।এমনই দুটি গ্রুপ হলো Test of Products  এবং Bright Enterpreneur's BD.'

সুমনা জানান, অনলাইন ব্যবসা থেকে  মাসে প্রায় ২০-৫০ হাজার টাকা লাভ হয় তার।

সুমনা বলেন, ‘এই ৬ বছর উদ্যোক্তা জীবনে পণ্যের ভেরিয়েশন দেখেছি অনেক। সামান্য এক টুকরো দড়ি দিয়েও হতে পারে অসাধারণ কিছু। আর তিক্ততার কথা নাই বা বললাম,  নিজেকে আরো বেশি ধৈর্যশীল করে গড়ে তুলেছি।’

নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য সুমনার পরামর্শ, ‘ হুজুগে  নয় নিজের কর্ম পারদর্শীতাই হোক আপনার উদ্যোক্তা জীবনের  মূল খুঁটি।’

/লিপি

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়