ঢাকার বায়ু দূষণরোধে ১৭ সুপারিশ
২০২০ সালে ঢাকা শহরে বায়ু দূষণ ১০ দশমিক ২ শতাংশ বেড়েছে বলে এক গবেষণায় উঠে এসেছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) যৌথ গবেষণায় এ ফল প্রকাশ করা হয়েছে।
শনিবার (২০ মার্চ) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে বায়ু দূষণরোধে ১৭টি সুপারিশ তুলে ধরা হয়। 'ঢাকা শহরের ৭০টি স্থানের বায়ু দূষণ সমীক্ষা-২০২০' শীর্ষক গবেষণার ফলাফল প্রকাশ উপলক্ষে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
বায়ু দূষণের ভয়াবহতা থেকে উত্তরণের জন্য সুপারিশগুলো হলো-
স্বল্পমেয়াদি পদক্ষেপ
১. ব্যক্তিগতভাবে সুরক্ষার জন্য উন্নত মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। শিশু, অসুস্থ ও গর্ভবতী নারীদের সাবধানতা অবলম্বন করে চলতে হবে।
২. শুষ্ক মৌসুমে সিটি করপোরেশন, ফায়ার সার্ভিস, ওয়াসা ও পরিবেশ অধিদপ্তরের সমন্বয়ে ঢাকা শহরে প্রতি দিন দুই থেকে তিন ঘণ্টা পর পর পানি ছিটানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
৩. নির্মাণ কাজের সময় নির্মাণ স্থান ঘেরাও দিয়ে রাখতে হবে ও নির্মাণ সামগ্রী পরিবহনের সময় ঢেকে নিতে হবে।
৫. রাস্তায় ধুলা সংগ্রহের জন্য সাকশন ট্রাকের ব্যবহার করতে হবে।
৬. অবৈধ ইটভাটাগুলো বন্ধ করতে হবে।
৭. ব্যক্তিগত গাড়ি ও ফিটনেস বিহীন গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। প্রয়োজনে নম্বর প্লেট অনুযায়ী জোড়-বিজোড় পদ্ধতিতে গাড়ি চলাচলের নির্দেশনা দিতে হবে।
৮. বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণ করতে সবাই মিলে সমন্বিত কাজ করতে হবে।
মধ্যমেয়াদি পদক্ষেপ
১. সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে প্রচুর পরিমাণ গাছ লাগাতে হবে এবং ছাদ বাগান করার জন্য সবাইকে উৎসাহিত করতে হবে।
২. ঢাকার আশেপাশে জলাধার সংরক্ষণ করতে হবে।
৩. আগুনে পোড়ানো ইটের বিকল্প হিসেবে সেন্ড বক্ল এর ব্যবহার ক্রমান্বয়ে বাড়াতে হবে।
৪. আলাদা সাইকেল লেনের ব্যবস্থা করতে হবে।
৫. সিটি গভন্যান্সের প্রচলনের মাধ্যমে উন্নয়নমূলক কার্যকলাপের সমন্বয় সাধন করতে হবে। সেবা সংস্থার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড স্বল্প সময়ে সম্পন্ন করতে হবে।
দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ
১. নির্মল বায়ু আইন-২০১৯ যতদ্রুত সম্ভব বাস্তবায়ন করতে হবে।
২. পরিবেশ সংরক্ষণ ও সচেতনতা তৈরির জন্য পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক বাজেট বরাদ্দ বাড়াতে হবে। নিয়মিত বায়ু পর্যবেক্ষন স্টেশনের (ক্যামস) ব্যাপ্তি বাড়িয়ে ঢাকা শহরের সব এলাকাকে এর আওতাধীন করতে হবে। বায়ু দূষণের পূর্বাভাস দেওয়ার প্রচলন করতে হবে।
৩. সর্বোপরি সচেতনতা তৈরির জন্য বিভিন্ন গণমাধ্যমে বায়ু দূষণ সম্পর্কে আরও বেশি তথ্য নির্ভর অনুষ্ঠান প্রচারের ব্যবস্থা করার মাধ্যমে ঢাকাসহ সারা দেশের বায়ু দূষণের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।
৪. লোকবল সঙ্কট নিরসনে প্রত্যেক উপজেলায় একজন পরিবেশ কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে হবে এবং এটি নিশ্চিত করার জন্য পাবলিক সার্ভিস কমিশনের বিসিএস (BCS) এ পরিবেশ ক্যাডার অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের উপাচার্য স্থপতি অধ্যাপক মুহাম্মাদ আলী নকী ও সঞ্চালনা করেন বাপার সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল।
সংবাদ সম্মেলনে গবেষণার ফলাফল প্রকাশ প্রসঙ্গে বাপার যুগ্ম সম্পাদক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, ভূমি ব্যবহারের ওপর ভিত্তি করে ডিসেম্বর মাসে ঢাকা শহরের ৭০টি স্থানের বায়ুর মান পর্যবেক্ষেণের লক্ষ্যে বায়ুতে বস্তুকণা ২ দশমিক ৫ এর উপস্থিতির পরিমাণ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পর্যালোচনা করে। গবেষণার অংশ হিসেবে ঢাকা শহরের ১০টি সংবেদনশীল, ২০টি আবাসিক, ১৫টি বাণিজ্যিক, ২০টি মিশ্র এবং ৫টি শিল্প এলাকার বায়ুর মান পর্যবেক্ষণ করা হয়।
অধ্যাপক মজুমদার বলেন, সামগ্রিকভাবে দেখা যায় ২০২০ সালে ঢাকা শহরের ৭০টি স্থানের গড় বস্তুকণা ২ দশমিক ৫ ছিল প্রতি ঘনমিটারে ৩৩৫ দশমিক ৪ মাইক্রোগ্রাম। যা বস্তুকণা ২ দশমিক ৫ এর আদর্শ মানের চেয়ে প্রায় ৫ দশমিক ২ গুণ বেশি। বস্তুকণা ২ দশমিক ৫ এর জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক নির্ধারিত জাতীয় আদর্শ বায়ুমান (দৈনিক) প্রতি ঘনমিটারে ৬৫ মাইক্রোগ্রাম।
ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ভূমি ব্যবহারের ওপর ভিত্তি করে ২০২০ সালে ৫টি এলাকার বস্তুকণা ২ দশমিক ৫ গড় মান ছিল প্রতি ঘনমিটারে ৩৩৫ দশমিক ৪ মাইক্রোগ্রাম যা ২০১৯ সালের তুলনায় প্রায় ১০ দশমিক ২ শতাংশ বেশি।
ইয়ামিন/এসএন