ঢাকা     বুধবার   ০৮ জানুয়ারি ২০২৫ ||  পৌষ ২৪ ১৪৩১

গুপ্তচর এক নায়িকা

অন্য দুনিয়া ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৫৪, ৭ জানুয়ারি ২০২৫  
গুপ্তচর এক নায়িকা

অড্রে হেপবার্ন

অস্কারজয়ী অভিনেত্রী অড্রে হেপবার্ন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে তিনি ছিলেন কিশোরী। ওই সময় তিনি গুপ্তচর হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন। নাৎসি দখলদারির বিরুদ্ধে গড়ে  ওঠা ডাচ প্রতিরোধ বাহিনীকে সমর্থন জুগিয়েছেন এবং অর্থ জুগিয়েছেন এই অভিনেত্রী। অর্থ সংগ্রহের জন্য অড্রে হেপবার্ন ব্যালে মঞ্চস্থ করতেন।

বিবিসির তথ্য, নীতিগতভাবে নাৎসিদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন অড্রে হেপবার্নের চাচা কাউন্ট অটো ভ্যান লিমবার্গ স্টিরাম। ১৯৪২ সালে একটা প্রতিরোধকারী গোষ্ঠী রটারডামের কাছে একটি জার্মান ট্রেন বিস্ফোরক দিয়ে উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। হেপবার্নের চাচা ওই ঘটনায় যুক্ত ছিলেন না কিন্তু নাৎসি এজেন্টরা তাকেসহ আরও চারজনকে ধরে জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে গুলি করে এবং মৃতদেহ মাটি চাপা দিয়ে দেয়। চাচাকে বাবার মতোই ভালোবাসতেন অড্রে হেপবার্ন। চাচার মৃত্যু কিশোরী হেপবার্নের মনে গভীর রেখাপাত করে। অড্রে হেপবার্নের বয়স যখন ১৫ বছর সে সময় তাকে শর্ত দেওয়া হয় নাৎসি শিল্পীদের ইউনিয়ন 'কাল্টরকামার'-এ যোগ দিতে অথবা প্রকাশ্যে নাচ করা ছেড়ে দিতে। প্রকাশ্যে নাচের সিদ্ধান্ত ছেড়ে দেন হেপবার্ন। কিন্তু লুকিয়ে সেফ হাউসের পর্দা নামিয়ে, মোমবাতি জ্বালিয়ে নাচ করতেন তিনি।। লুকিয়ে আয়োজন করা ব্যালে অনুষ্ঠানে মৃদু সুরে পিয়ানো বাজানো হতো। কেউ হাততালি দিতে পারতেন না। ওইসব অনুষ্ঠান থেকে সংগ্রহ করা অর্থ নাৎসিদের বিরুদ্ধে গড়ে তোলা প্রতিরোধ বাহিনীর কাজকর্মের জন্য।

যেভাবে গুপ্তচর হলেন—
১৯৪৪ সালের বসন্তে হেনড্রিক ভিসার হুফ্ট নামে এক চিকিৎসকের সহকারী হিসেবে কাজ শুরু করেন অড্রে হেপবার্ন। ওই চিকিৎসক ছিলেন প্রতিরোধ যোদ্ধা দলের সদস্য। তার সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করতেন অড্রে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল একটাই, নাৎসিদের হাত থেকে লুকিয়ে থাকা হাজার হাজার মানুষকে সাহায্য করা। এই কাজের দায়িত্ব দেওয়ার জন্য যতটা বিশ্বাস থাকা প্রয়োজন তার ঠিক ততটাই ছিল হেপবার্নের ওপর।

ঘটনাটা ১৯৪৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বরের। তখন গীর্জায় ছিলেন অড্রে হেপবার্ন। সে সময় হঠাৎ ইঞ্জিনের তীব্র আওয়াজ শোনা যায়। আসলে  শুরু হয়েছিল 'অপারেশন মার্কেট গার্ডেন' । যা ছিল রাইন নদীর ওপর বিস্তৃত নয়টা সেতু দখল করার জন্য মিত্র বাহিনীর একটা পরিকল্পনা। অড্রে হেপবার্ন ছুটে এসে দেখেন মিত্র বাহিনীর হাজার হাজার সেনা প্যারাসুটের সাহায্যে ভাসছে। যদিও নাৎসি বাহিনী ওই অঞ্চলে আবার অবস্থান নিচ্ছিল। 

যুদ্ধ চলাকালে অড্রে হেপবার্ন ও তার পরিবার নয় দিন সেলারে লুকিয়ে ছিলেন। তারা যখন বাইরে আসেন তখন জানতে পারেন নাৎসিরা জিতেছে। এরপর নাৎসিদের বিরুদ্ধে গড়ে তোলা ডাচ প্রতিরোধ বাহিনীর সদস্যদের নানাভাবে নির্যাতন ও হত্যা করা হচ্ছিল। জার্মানির উদ্দেশে রওনা হওয়া মিত্রবাহিনীর বৈমানিকরা নেদারল্যান্ডসে জরুরি অবতরণ করত। সেই সময় অড্রে হেপবার্নকে দিয়ে তাদের কাছে খবর পাঠান চিকিৎসক হুফ্ট।

অড্রে তার মোজার মধ্যে লুকিয়ে নিয়েছিলেন সাংকেতিক বার্তা। মিত্র বাহিনীর কাছে বার্তা পৌঁছে দিয়ে বেরিয়ে আসার সময় তিনি লক্ষ করেন, তার দিকে ডাচ পুলিশ এগিয়ে আসছে। এটা দেখে হঠাৎ করে ঝুঁকে বুনো ফুল কুড়াতে শুরু করেন তিনি। তারপর মোহময়ী ভঙ্গিতে তা পুলিশ কর্মীদের দিকে এগিয়ে দেন। হেপবার্নকে দেখে মুগ্ধ হয়ে তাকে আর বিশেষ প্রশ্ন করেনি তারা। এই ঘটনার পর থেকে নাৎসিদের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা প্রতিরোধ বাহিনীর জন্য প্রায়ই বার্তা বহন করতেন অড্রে হেপবার্ন।

ঢাকা/লিপি


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়