ঢাকা     বুধবার   ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  পৌষ ১১ ১৪৩১

আব্বুর আনন্দভরা মুখ যে কী সুন্দর দেখায়

নওরিন আহমেদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:২০, ১৫ জুন ২০২৪   আপডেট: ১৬:০০, ১৫ জুন ২০২৪
আব্বুর আনন্দভরা মুখ যে কী সুন্দর দেখায়

'বা' এই ছোট্ট একটি অর্থহীন শব্দের দ্বিত উচ্চারণে গঠিত শব্দ 'বাবা'। এই শব্দটির অন্তর্নিহিত অর্থের বিশালতা যে কত, তা পরিমাপ করার ক্ষমতা কয়জনের আছে আমার জানা নেই। আমার বাবা অসাধারণ ব্যক্তিত্বের খুব সাধারণ একজন মানুষ। আমি যদি ভুল না বলে থাকি, খুব সম্ভবত বাবারা সাধারণই হয়ে থাকে।

বাবার কাজ আর পারিবারিক বিভিন্ন কারণে আমি আমার জীবনের খুব অল্প সময়ই তার সঙ্গে কাটানোর সুযোগ পেয়েছি। সময় অল্প হলেও স্মৃতির ডায়েরিটা যেন মহাকবি ফেরদৌসীর ‘শাহনামা’ মতো বিশালাকার।

আব্বুর আর্থিক সামর্থ তখন কেমন ছিল সঠিক বলতে পারছি না। তবে আমরা যখন ছোট ছিলাম, তখন প্রতি ঈদে আমাদের জামা কেনা হতো না। শুধু ঈদুল ফিতরে কিনতাম। ঈদের জামা পাওয়ার সিস্টেমটা দারুণ ছিল। চাঁদ রাতে হাতে মেহেদী লাগিয়ে নতুন জামার জন্য অনিশ্চিত অপেক্ষা করতে করতে আমরা ঘুমিয়ে যেতাম। ঠিক ঈদের দিন সকালে উঠে দেখতাম, বালিশের পাশে নতুন জামা। আহা! তখন সেই আনন্দটা কে দেখে? আব্বু-আম্মু নিশ্চয়ই দেখতেন, তাই না?

আমি মানবিকতা ও সহমর্মিতা শিখেছি আমার আব্বুর কাছ থেকে। আব্বুর কাজকর্মগুলো অনুকরণীয় ছিল। ছোটবেলার একটা ঘটনা মনে পড়ছে।

আমাদের বাসায় একজন বয়স্কা মহিলা ভিক্ষা নিতে আসতেন। একদিন তিনি হঠাৎ কাঁদতে কাঁদতে আমাদের এখানে আসলেন, তখন তার হাত থেকে অঝোরে রক্ত পড়ছিলো। আব্বু তখন বাসায় ছিলেন। ওই বৃদ্ধা জানালেন, কোনো এক বাসায় ভিক্ষা চাওয়াতে তার মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দিয়েছেন বাড়িওয়ালা। ওই দরজায় হাত থাকায় আঘাত লেগে সঙ্গে সঙ্গে কেটে যায়। তারপর আব্বু খুব যত্ন করে তার হাতটি পরিষ্কার করে ব্যান্ডেজ করে দিলেন এবং খাবার খাইয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম করিয়ে বাড়ি পাঠালেন।

আমি প্রায়ই দেখতাম আব্বু তার প্লেটের খাবার পর্যন্ত কোনো ক্ষুদার্ত ব্যক্তি আসলে তাকে দিয়ে দিতেন। আমারও এ প্র্যাকটিসটা করতে অনেক আনন্দ লাগে।

আব্বু ভারী খুঁতখুঁতে স্বভাবের মানুষ। সব কাজই নিখুঁত হতে হবে। আমি বিভিন্ন সময়ই পেইন্টিং কম্পিটিশনে অংশ নিয়ে থাকি। একদিন আমি একটা কম্পিটিশনের জন্য পেইন্টিং করছিলাম, পারবো এমন মনোবল মোটেও ছিল না। তার উপর আব্বু এসে পেইন্টিং-এ একের পর এক হাজারটা খুঁত ধরছে। বিরক্ত হয়েই বলা চলে আব্বুর নির্দেশনা অনুয়ায়ী পেইন্টিং কমপ্লিট করলাম। পরে সেই পেইন্টিং দিয়েই আমি প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছিলাম।

আব্বু ভীষণ আশাবাদী। আমাদের উপর ভরসা তার আকাশ ছোঁয়া। আমি ছাত্রী হিসেবে খুব একটা ভালো তো বলা যায় না। তবুও আব্বুর স্বপ্নের শেষ নেই। অ্যাডমিশনের সময় যেখানে আমি পাশ করতে পারবো কিনা, সেই নিয়েই ভয়ে মরি। আর আব্বুর প্রত্যাশা আমি যেখানেই পরীক্ষা দিবো, চান্স হবেই।

আল্লাহ হয়তো আব্বুর পক্ষেই ছিলেন। জাবি, রাবি এবং গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় বেশ ভালো মেরিট পজিশন লাভ করি। সবার আগে খবরগুলো আব্বুকেই দিয়েছিলাম, তার আনন্দ ভরা মুখ যে কি সুন্দর দেখায়! আমি বারবার সফল হতে চাই, সেই আনন্দিত মুখ দেখার জন্য!

লেখক: শিক্ষার্থী, হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থা বিভাগ, শিক্ষাবর্ষ ২০২২-২৩, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
 

/মেহেদী/


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়