ঢাকা     শনিবার   ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২৯ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

মনের আলোয় বই পড়েন তারা

আমিনুর রহমান হৃদয় || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৫১, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মনের আলোয় বই পড়েন তারা

আমিনুর রহমান হৃদয়: চোখের আলো দিয়ে বই পড়ার সামর্থ্য না থাকলেও বইমেলায় এসে মনের আলো দিয়ে বই পড়ছেন তারা। অমর একুশে গ্রন্থমেলার চারদিকে যখন নতুন বইয়ের ঘ্রাণ, তখন তারাও ব্রেইল পদ্ধতির বই পেয়ে খুশি। দেখে পড়তে না পারলেও তারা হাতের আঙুলের স্পর্শে পড়ছেন ব্রেইল প্রকাশিত বইগুলো।

ইমদাদুল হক মিলনের লেখা ‘ভালোবাসার সুখ দুঃখ’ বইটি পড়ছিলেন দৃষ্টিজয়ী শিক্ষার্থী আমরিন নাহার রিমি। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অনার্স ২য় বর্ষে পড়ছেন। তিনি বলেন, ‘আমি ২০১১ সাল থেকে বইমেলায় স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনার স্টলে এসে বই পড়ি। আমরা তো সব ধরনের লেখকের বই নিজেরা পড়তে পারি না। অন্যের মুখে বিভিন্ন লেখকের গল্প শুনি। নিজে নিজে বই পড়ার মজাই তো আলাদা! সব লেখকের বই তো ব্রেইল আকারে প্রকাশ পায় না। তাই ‘স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনা’ যেসব বই ব্রেইল আকারে প্রকাশ করে সেগুলোই নিজে পড়তে পারি।’

তিনি আরও বলেন, ‘যারা ভালো বই লিখেন তারা যদি আমাদের কথা চিন্তা করে কিছু বই ব্রেইল আকারে প্রকাশ করতো, তাহলে আমাদেরও নতুন বই পড়ার স্বাদ মিটতো।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক দৃষ্টিজয়ী শিক্ষার্থী রুবেল মিয়া বলেন, ‘প্রথম সারির যেসব লেখক আছেন তারা যদি আমাদের জন্য ব্রেইল আকারে বই প্রকাশ করে তাহলে আমরা আরও খুশি হবো। প্রয়োজনে আমরাও সেসব ব্রেইল আকারে প্রকাশিত বই কিনে পড়বো।’ দৃষ্টিহীনদের কথা চিন্তা করে স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনার এই উদ্যোগকে ধন্যবাদ জানিয়ে রুবেল বলেন, ‘বইমেলায় এসে আমরাও বই পড়ছি। পৃথিবী সম্পর্কে আরেকটু বেশি জানতে পারছি নতুন বই পড়ে। ব্রেইল আকারে নতুন নতুন বই প্রকাশ পেলে আমরা আরও নতুন কিছু জানতে ও শিখতে পারবো।’

‘একজনের পক্ষে সব কিছু করা সম্ভব নয়। স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনা আমাদের জন্য এগিয়ে এসেছে। তারা সাধ্য অনুযায়ী আমাদের জন্য ব্রেইল আকারে বই প্রকাশ করছে। স্পর্শের মতো দেশে যেসব সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা আছে ব্রেইল বই প্রকাশে তাদেরও এগিয়ে আসা উচিত।’ বলছিলেন দৃষ্টিজয়ী শিক্ষার্থী ওয়াদুরুর রহমান রাহুল। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে অনার্স ১ম বর্ষে পড়ছেন। তিনি বলেন, ‘আগে বন্ধুদের কাছে বিভিন্ন লেখকের বইয়ের গল্প শুনতাম। এখন গত কয়েক বছর ধরে স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনীর বইগুলো পড়ে নিজেই বন্ধুদের গল্প শোনাতে পারছি। এটাই সব থেকে ভালো লাগে।’



অমর একুশে গ্রন্থমেলার তৃতীয় দিনে বাংলা একাডেমি চত্বরের ৮৩ নম্বর স্টলে স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনায় কথা হয় এই শিক্ষার্থীদের সাথে। এবারের বইমেলায় গল্প ও উপন্যাসসহ ৮টি বই ব্রেইল পদ্ধতিতে প্রকাশ করেছে স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনা।  প্রকাশনাসংশ্লিষ্টরা জানান, ২০০৯ সাল থেকে এই প্রকাশনা সংস্থা ব্রেইল আকারে বই প্রকাশ করছে। ৬০টিরও অধিক বই তারা প্রকাশ করেছে। এই প্রকাশনীর সব বই দৃষ্টিহীনদের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়। স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনার প্রধান উদ্যোক্তা নাজিয়া জাবীন রাইজিংবিডিকে বলেন, গত বছর আমাদের বই বেরিয়েছিল ১৪টি। এবারের বইমেলায় আমাদের ৮টি বই এসেছে। কারণ, এখন আমরা ১২ বছরের প্রস্তুতি নিচ্ছি। প্রকাশনার ১১ বছরে বর্তমানে আছি। ১২ বছরে আমরা ১২টি বই প্রকাশ করব। তারও বেশি বই প্রকাশ হতে পারে সেজন্য অর্থেরও প্রয়োজন। যা আমাদের পক্ষে একটু কষ্টকর।

প্রতি বছর আমরা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের উপর একটি বই  ব্রেইল আকারে প্রকাশ করি। এবছর ‘আমি বীরাঙ্গনা বলছি’ বইটি এসেছে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস আমরা দৃষ্টিজয়ীদের মাঝেও ছড়িয়ে দিতে চাই। তাঁরাও বই পড়ে দেশ স্বাধীনের ইতিহাস জানুক। সবার সমান অধিকার থাকুক।’

প্রসঙ্গত, দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা দানের জন্য লুই ব্রেইল একটি বাস্তবসম্মত পদ্ধতি আবিষ্কার করেন যা ব্রেইল পদ্ধতি নামে পরিচিত। এতে ছয়টি উঁচু বিন্দুকে বিভিন্নভাবে সাজিয়ে অক্ষর, সংখ্যা প্রভৃতি প্রকাশ করা হয়। একটি বিশেষ ছিদ্রযুক্ত ধাতব পাত অথবা টাইপরাইটার ব্যবহার করে ব্রেইল পদ্ধতিতে লেখা যায়। আঙুলের স্পর্শ অনুভূতি ব্যবহার করে বই পড়তে হয়।





রাইজিংবিডি/ঢাকা/৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯/তারা

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়