ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

ভালোবাসা কারে কয় ...

আরিফ সাওন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:৩৭, ২৯ জুলাই ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ভালোবাসা কারে কয় ...

আরিফ সাওন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে : সামান্য কারণে অনেক মানুষই মানুষের জীবন নিতে দ্বিধা বোধ করেন না। আবার এমনও মানুষ আছেন যারা শুধু মানুষই নয়, কীটপতঙ্গের ব্যথায়ও ব্যথিত হন। একটা প্রাণকে বাঁচানো বা প্রাণের কষ্ট লাঘবের জন্য যত চেষ্টা, সবই করেন।

এমনই মানুষ একজন কেবল নয়; একটি পরিবারের দেখা মিলেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জে।

এই পরিবারটি থাকে জেলার বটতলা হাট কালীগঞ্জ বাবু পাড়ায়। পরিবারের কর্তা রেজাউল করিম।

রোববার এই পরিবারের ছয় সদস্যের সঙ্গে দেখা হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসে।

তখন বেলা ঠিক ১২টা ৫০ মিনিট। একটি ছাগলকে একজনে চেপে ধরে রেখেছেন। তাকে ঘিরে কয়েকজন দাঁড়িয়ে আছেন। একজনে কিছু লিখে দিয়ে বললেন, এগুলো কিনে নিয়ে আসেন। অল্প বয়সি এক নারী দ্রুত আনতে চলে গেলেন।

চেপে ধরা ছাগলটির কাছে দিয়ে দেখা গেলো, তার পেছনের ডান পা ভাঙা। হাড় বেরিয়ে আছে। জানা গেলো, এখন তার অস্ত্রোপচার হবে। পায়ের হাঁটুর নিচ থেকে কেটে ফলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন চিকিৎসকরা।

কাগজে লিখে দেয়া জিনিসগুলো ওই নারী নিয়ে আসার পর শুরু হলো অস্ত্রোপচার। প্রথমে ছাগলটির তিন পা শক্ত করে বাঁধা হলো। শুরু হলো ব্লেড দিয়ে ভাঙা স্থানের চারপাশের পশম কাটা। এমন সময় এলেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. কবির উদ্দীন আহমেদ। তিনি সবকিছু পর্যবেক্ষণ করে প্রাথমিক কাজগুলো সেরে ফেলার পরামর্শ দিলেন।

ভাঙা স্থানটি যখন পরিষ্কার করা হচ্ছিল তখন ছাগলটি কানফাটা চিৎকার করছিলো। সেই আর্তনাদ সহ্য করতে না পেরে পরিবারটির সদস্যরা দূরে সরে যান। এরপর ছাগলের দেহে ইনজেকশন দেয়া হয় এবং উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা নিজেই অস্ত্রোপচার করেন।

 

অস্ত্রোপচার শেষে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘পায়ের নিচের অংশটা রাখতে পারলাম না। হাঁটুর নিচ থেকে কেটে ফেলতে হলো। তবে আশা করছি ৪/৫ দিনের মধ্যে ঘা শুকিয়ে যাবে, ব্যথাও থাকবে না।’

প্রায় দেড় ঘণ্টার এই অস্ত্রোপচারে প্রাণিসম্পদ অফিসের ছয়জন অংশ নেন। তারা খুবই আন্তরিকতার সঙ্গে কাজটি করেন। অস্ত্রোপচারের পর বুঝিয়েও দেন কীভাবে মলম লাগাতে হবে, দিনে কয়বার লাগাতে হবে।

এই ছাগল নিয়ে আসা নাহিদার সঙ্গে কথা হয়। তিনি রেজাউল করিমের মেয়ে। নাহিদা জানান, তাদের আরো তিনটি ছাগল আছে। এই ছাগলটির এমন কষ্টে তারা খুবই ব্যথিত ও চিন্তিত।

এদিন নাহিদার মা ও পরিবারের ছয়জনই ছাগল নিয়ে চিকিৎসকের কাছে এসেছেন। অস্ত্রোপচারের পর নাহিদার মা মনোয়ারা বেগম খুবই মমতার সঙ্গে ছাগলটিকে কাছে টেনে গলা জড়িয়ে ধরেন। গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দেন।

তিনি জানান, ১৭ দিন আগে জানালার গ্রিলে ছাগলটির পা ঢুকে যায় এবং চাপ লেগে ভেঙে যায়। তখন এলাকার একজন লতাপাতা দিয়ে পা বেঁধে দেন। কিন্তু তাতে হাড় জোড়া লাগেনি বরং পচন ধরেছে। পায়ে পচন ধরায় ছাগলটি খুব কষ্ট পাচ্ছিলো আর সেই কষ্ট সহ্য করতে না পেরে তারা ছাগলটিকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে আসেন।

নাহিদা জানান, এখানে ছাগলের চিকিৎসায় কোনো টাকা লাগেনি। সামান্য কিছু জিনিস কিনে দিতে হয়েছে।

নাহিদা এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘পা ভাঙার পর জবাই করে খেয়ে ফেলা বা বিক্রি করে দেয়া যেত। কিন্ত আমরা তা করতে পারিনি। আমরা তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করছি; চেষ্টা করে যাব। যত দিন হায়াত আছে, যতদিন আল্লাহ বাঁচাবেন, ততদিন ও বাঁচবে।’




রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৯ জুলাই ২০১৯/সাওন/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়