ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

বাদামি মাছরাঙা বা কমলা মাছরাঙা

শামীম আলী চৌধুরী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:০০, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বাদামি মাছরাঙা বা কমলা মাছরাঙা

শামীম আলী চৌধুরী: সুন্দরবনের কটকায় জাহাজে রাত কাটিয়ে পর দিন ভোরে জামতলা যাই। সেখানে কিছুক্ষণ থেকে নৌকায় কটকার খালে ঘুরে বেড়াই। জাহাজে দুপুরের খাবার খেয়ে সুন্দরী খালের উদ্দেশ্যে রওনা হই। নদীতে ভাটা চলছে। হরেক প্রজাতির পাখি ওড়াউড়ি করছে। দুই ধারে কেওড়া ও সুন্দরী গাছ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। শ্রাবণের নীল  আকাশে সাদা মেঘের ভেলা উড়ে বেড়াচ্ছে। প্রকৃতির এ দৃশ্য দেখতে দেখতে সুন্দরী খালে পৌঁছে যাই। জাহাজ থেকে নেমে সুন্দরী হাঁস বা গেইলো হাঁসের খোঁজে নৌকায় সুন্দরী খালে প্রবেশ করি। তখন সন্ধ্যা ছয়টা। ফেরার পথে দেখি সুন্দরী খালের মুখে কেওড়া গাছে বসে আছে বাদামি মাছরাঙা বা কমলা মাছরাঙা। আমার সাথে নৌকায় থাকা সতীর্থরা ছবি তোলায় ব্যস্ত। আমিও তাদের সঙ্গে  কয়েকটি ছবি নিলাম। পরে জাহাজে উঠে পক্ষী খালের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।

দামি মাছরাঙা বা কমলা মাছরাঙা Alcedinidae পরিবারের অন্তর্ভুক্ত ৩৬ সে.মি. দৈর্ঘের Pelargopsis প্রজাতির মাঝারি আকারের একটি মাছ শিকারী পাখি। এদের ঠোঁট লাল এবং বেশ বড় ও শক্তিশালী। ঠোঁটের উপর দিক চ্যাপ্টা ও সোজা। মাথা ও ঘাড় কমলা। কাঁধ-ঢাকনি ও ডানা গাঢ় বাদামি রঙের। পিঠ ও কোমরে নীল রঙের ছটা আছে। পালকের শেষটুকু ডানার বাকি অংশ থেকে কালচে বাদামী। গলা,বুক ও পেট কমলা রঙের। চোখ বাদামি ও চোখের পাতা ইটা লাল। পা ও পায়ের পাতা লাল রঙের। পুরুষ ও মেয়ে পাখির চেহারা অভিন্ন। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির দেহ বেশ কমলা হয়। ঘাড় কালো ও দেহতল কালো রঙের হয়।

 

 

বাদামি মাছরাঙা বা কমলা মাছরাঙা জোয়ার-ভাটায় সিক্ত নালা ও সুন্দরবন বা গড়ানবনে নদীতে ও খালে বিচরণ করে। একা বা জোড়ায় ঘুরতে পছন্দ করে। উঁচু ডাল থেকে পানিতে ঝাঁপ দিয়ে শিকার ধরে খায়। ওড়ার সময় পানির অল্প ওপর দিয়ে চলে। বসার জন্য গাছের উঁচু ডাল বেছে নেয়। ওড়ার সময় শব্দ করে ডাকে। ইচ্ছার বিরুদ্ধে উড়তে হলে এরা খুব জোরে শব্দ করে ডাকে ক্যা-ক্যা-ক্যা-ক্যা...। অন্য সময় শিস দিয়ে ডাকে।

বাদামি মাছরাঙা বা কমলা মাছরাঙার খাদ্য তালিকায় রয়েছে কাঁকড়া, সরীসৃপ ও মাছ। এরা নিজেরা শিকার করে খাবার খায়। মার্চ থেকে এপ্রিল মাস এদের প্রজননকাল। প্রজনন সময়ে নিজেরা খালের বা খাঁড়ির খাঁড়া মাটিতে গর্ত করে বাসা বানায়। নিজেদের বানানো বাসায় মেয়েপাখি ৪টি ডিম পাড়ে। এটি বাংলাদেশে সুলভ আবাসিক পাখি। সুন্দরবনে এদের বেশী দেখা যায়। এছাড়াও দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ভারত, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়ায় এদের মূল আবাস।

বাংলা নাম: বাদামি মাছরাঙা বা কমলা মাছরাঙা

ইংরেজি নাম:  Brown-winged Kingfisher.

বৈজ্ঞানিক নাম: Pelargopsis amauroptera

লেখক ছবিগুলো সুন্দরবন থেকে তুলেছেন।


রাইজিংবিডি/ঢাকা/১ সেপ্টেম্বর ২০১৯/হাসনাত/তারা

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়