ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

কাঠুরিয়ার ছেলে এখন খ্যাতিমান ব্যারিস্টার

মেহেদী হাসান ডালিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০১:৫৮, ২০ অক্টোবর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
কাঠুরিয়ার ছেলে এখন খ্যাতিমান ব্যারিস্টার

নিজ চেম্বারে ব্যারিস্টার মো. আব্দুল হালিম

বাগেরহাটের শরণখোলার দরিদ্র পরিবারে জন্ম। বাবা ছিলেন কাঠুরে। দশ সদস্যের পরিবারে ছোটবেলা থেকে শুধু অভাবই দেখেছেন। সে কারণে বাবাকে কাঠ কাটতে আবার কখনও হালচাষে সহযোগিতা করতেন তিনি। তবে ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার প্রতি ঝোঁক ছিল তার। বাবার সঙ্গে কাজ করতে যেখানেই যেতেন সাথে নিয়ে যেতেন বই। কাজের ফাঁকে পড়াশুনা করতেন। মেধাবী সেই ছোট্ট ছেলেটি পঞ্চম শেণির বৃত্তি পরীক্ষায় জেলায় প্রথম হন। ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হন পিরোজপুরের কে এম আব্দুল লতিফ ইনসস্টিটিউশনে। লজিং থেকে পড়ালেখা করেন। এসএসসিতে বোর্ড স্ট্যান্ড করেন। যশোর শিক্ষা বোর্ডে মেধাতালিকায় অর্জন করেন ২য় স্থান। এইচএসসিতে ঢাকা বোর্ডে তৃতীয় স্থান অধিকার করে পত্রিকার শিরোনাম হন তিনি। এরপর আর তাকে পেছনে তাকাতে হয়নি। তিনি সুপ্রিম কোর্টের খ‌্যাতিমান আইনজীবী ব্যারিস্টার মো. আব্দুল হালিম।

শিশুদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় জনস্বার্থে অসংখ্য মামলায় লড়ে দেশে-বিদেশে সুনাম কুড়িয়েছেন তিনি। সাংবিধানিক আইনসহ অংসখ্য বই লিখেছেন।  অসহায় মেধাবী শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তা দিতে সিসিবি ফাউন্ডেশন গড়ে তুলেছেন তিনি। নিজের জীবনের কষ্ট, সংগ্রাম, সাফল্যের কথা বলেছেন দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসা এই ব্যারিস্টার। তার জীবনের গল্প শুনেছেন রাইজিংবিডির সুপ্রিম কোর্ট প্রতিবেদক মেহেদী হাসান ডালিম।

কষ্টের দিনগুলো

বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়নের বগী গ্রাম। বর্তমানে গ্রামটি সিডর ও আইলার আঘাতে বিলীন হয়ে গেছে।

বাবা ছিলেন পেশায় একজন বাওয়ালী (কাঠুরে)। সুন্দরবনে কাঠ কাটতেন। এছাড়া তিনি হালচাষ করতেন। পাঁচ ভাই, তিন বোন। সেই সময়ে পরিবারে শিক্ষিত বলতে কেউ ছিলেন না। ছোট থেকেই পড়াশুনার প্রতি আব্দুল হালিমের ঝোঁক ছিল প্রবল। তিনি বলেন, ‘আমাকে প্রায়ই আব্বা সুন্দরবনে কাঠ কাটতে নিয়ে যেতেন। স্কুলে যেতে পারতাম না। আব্বার সাথে কাজে গেলেও সাথে বই নিয়ে যেতাম। কাজের ফাঁকে ফাঁকে পড়তাম। বইয়ের মধ্যে ডুবে যেতাম।’ 

কষ্টের মধ্যে ছিলেন যারা প্রেরণার

ছোটবেলায় কষ্টের দিনগুলোতে প্রেরণা ছিলেন প্রাইমারি স্কুলের দুজন প্রধান শিক্ষক। একজন মারা গেছেন। তিনি আব্দুর রহমান স্যার। পড়াশুনার প্রতি আগ্রহ দেখে আমাদের বাড়িতে এসে পর্যন্ত পড়াতেন। তিনি ছিলেন আমার পিতার মতোই। তার কথা স্মরণ করতে গেলে আমার চোখে অনেকটা জল এসে যায়। আরেকজন প্রধান শিক্ষক রুস্তম আলী শিকদার। ওনার বাড়ি ছিল মোড়লগঞ্জে, এখনও জীবিত আছেন তিনি। উনি ক্লাসে এসে যারা কষ্ট করে সংগ্রাম করে বড় হয়েছেন তাদের গল্প বলতেন। যা আমাকে বড় হওয়ার জন্য প্রেরণা যোগাত। তখন থেকেই স্বপ্ন দেখতাম আমাকে বড় হতে হবে।

সাফল্যের গল্প শুরু

স্থানীয় প্রাইমারি থেকে বৃত্তি পরীক্ষা দিলাম। ফল বের হলো। আমি জেলার মধ্যে প্রথম স্থান লাভ করেছি। ফল ও উৎসাহ দেখে আমার মেঝবোন, দুলাভাই মিলে উপজেলা সদরের পাইলট স্কুলে ভর্তি করে দিলেন। কিন্তু ক্লাস সেভেন পর্যন্ত পড়ার পর সেখানে পড়িনি।  আমি চাইতাম এমন স্কুলে ভর্তি হতে যেখানে আমার থেকে ভালো ছাত্র থাকবে। এ কারণে আমি সেখান  থেকে নিজে নিজেই চলে গেলাম পিরোজপুরের বিখ্যাত কে এম লতিফ ইনস্টিটিউশনে। স্কুলের ছাত্রাবাসে থেকে পড়ালেখার খরচ চালানো আমার পরিবারের পক্ষে সম্ভব ছিল না। স্কুলের শিক্ষক ও মঠবাড়িয়ার সিদ্দিকুর ভাইয়ের সহযোগিতায় লজিং থেকে পড়া শুরু করি। ওই স্কুল থেকেই ১৯৮৬ সালে যশোর শিক্ষা বোর্ডে মেধাতালিকায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করি।

ঢাকার জীবন

ঢাকায় এসে ঢাকা কলেজে এইচএসসিতে ভর্তি হই। বরগুনার আলী আহমেদ, যিনি সূত্রাপুর তহসিল অফিসের কেরানি ছিলেন, তার বাসায় লজিং থেকে পড়ালেখা করতে থাকি। তার বাচ্চা দুটোকে পড়াতাম। আবার টিউশনিও করতাম। ১৯৮৮ সালে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় মেধাতালিকায় তৃতীয় স্থান লাভ করি। তখন বিভিন্ন পত্রিকার শিরোনামও হই। তারপর তো এলো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পালা। ভর্তি পরীক্ষায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘ ইউনিটে প্রথম হয়েছিলাম। খ ইউনিটে আমার মেধাতালিকা ১০ নম্বরে  ছিল। সাহিত্যের প্রতি আমার ঝোঁক থাকলেও শিক্ষকদের পরামর্শে আইনে ভর্তি হই। ঢাবিতে ভর্তি হওয়ার পর টিউশনি শুরু করি। টিউশনির কিছু টাকা বাঁচিয়ে গ্রামে মায়ের কাছে পাঠাতাম। যেন গ্রামে থাকা ছোট দুই ভাই পড়ালেখা করতে পারে। আলী আহমেদ ভাইয়ের বাসায় থাকতে থাকতে একটা পর্যায়ে আমি আমার ছোট হাবিব আর জামালের কথা তাকে বলি। আলী আহমেদ ভাই অনেক দয়ালু ছিলেন। উনি নিজে থেকেই বললেন তোমার দুই ভাইকেই ঢাকায় নিয়ে এসো। জামাল ও হাবিবকে ঢাকায় নিয়ে আসি। ওরাও ঢাকাতে পড়ালেখা করতে থাকে। আমি আলী আহমেদ ভাইয়ের দুই সন্তানকে পড়ালেখা করানো ছাড়াও বাইরে টিউশনি করতাম। টিউশনির টাকা দিয়ে ছোট দুই ভাইয়ের লেখাপড়ার খরচ চালাতাম।

 

 

একমাত্র সন্তান আনুশে হালিমের সঙ্গে ব্যারিস্টার আব্দুল হালিম

 

লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ

অনার্স পড়ার সময় আমি এক বছর খুবই অসুস্থ ছিলাম। আমার অবস্থা দেখে সবাই মানসিক রোগী বলতো। অসুস্থতার কারণে অনার্সে ফার্স্ট ক্লাস ছিল না। যেহেতু আমি অনার্সে ফার্স্ট ক্লাস পাই নাই। এ কারণে আমার মধ্যে একটা জেদ ছিল। অন্যভাবে আমি আমার মেধাটাকে প্রকাশ করতে চাই। সেই আকাঙ্খা থেকেই আমি অনার্স পড়ার সময়ে সংবিধান, সাংবিধানিক আইন ও রাজনীতি: বাংলাদেশ প্রেক্ষিত’ নামে বই লিখি। আমাদের ফ্যাকাল্টির ডিন এরশাদুল বারী স্যার নিজেই বইয়ের ভূমিকা লিখে দিলেন। এলএলএম পড়ার সময় এর ইংলিশ এডিশন বের করি। ব্যাপক সাড়াও পাই। বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রশংসা আসতে থাকে। বই প্রকাশ হওয়ার পরে আমার অর্থকষ্ট অনেকটাই কেটে যায়। বইটি নিয়ে তৎকালীন সময়ের ব্রিটিশ হাইকমিশনার ডেভিট সি ওয়ার্কার একটি রিভিউ লিখেছিলেন। সেটি ডেইলি স্টারে প্রকাশিত হয়েছিল।

চেভেনিং স্কলারশিপ ও জীবনের নতুন অধ্যায়

এলএলএম শেষ করার পরে আমি ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ স্যারের চেম্বারে জুনিয়র হিসেবে জয়েন করি। ব্যারিস্টার মওদুদ স্যারের চেম্বারে কাজ করতে করতে এক পর্যায়ে, সেন্টার ফর এনালাইসিস অ‌্যান্ড চয়েস এনজিওর কর্নধার গীতিয়ারা সাফিয়া চৌধুরীর স্বামী নাজিম কামরান চৌধুরীর সঙ্গে পরিচয় হয়। একবার  তার অফিসে দেখা করার জন্য আমাকে ডাকেন। ওনার সাথে পরিচয়ের সূত্রধরে কিছু আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজ করার সৌভাগ্য হয়। এর মধ্যে একদিন নাজিম কামরান চৌধুরী স্যার তার অফিসে ডেকে নিয়ে বললেন, একটা স্কলারশিপের অফার আছে, তুমি আবেদন করো। আমি স্যারের কথামত অফিসে বসেই আবেদন করলাম। ১৯৯৯ সালে এক বছরের চেভেনিং স্কলারশিপ নিয়ে নিউক্যাসেল ইউনিভার্সিটিতে ট্রেড ল- এর ওপরে এলএলএম করার জন্য গেলাম। এদিকে ইংল্যান্ডে এলএলএম করার সময় আমার ছোট দুই ভাইকে ঢাকায় রেখে যাই। পরে দুই ভাই, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। একজন অ্যানথ্রপলজিতে, অন্যজন ম্যানেজমেন্টে।

ব্যারিস্টার পড়ার সুযোগ মিস করলাম না

বলতে পারেন চেভেনিং স্কলারশিপ পাওয়াতেই আমার ব্যারিস্টার পড়ার দ্বার খুলে যায়। এক বছরে স্কলারশিপে যে পেমেন্ট তারা দিয়েছিলেন, সেখান থেকে অনেক টাকা আমি সেভ করতে পেরেছিলাম। এছাড়া এলএলএম পড়ার সময়ে আমি ওখানে পার্টটাইম একটা জব করতাম। এলএলএম শেষ করার পর আবার ব্রিট্রিশ কাউন্সিলের কাছে আবেদন করলাম আমি বার এট ল করার জন্য এখানে অবস্থান করতে চাই। অনুমোদন পেয়ে গেলাম। বার এট ল করতে হলে তো ব্রিট্রিশ এলএলবি প্রয়োজন। যার জন্য আমি লন্ডন ইউনিভার্সিটিতে এক্সটারনাল প্রোগামে এলএলবি ভর্তি হলাম।

এলএলবি পড়ার সময় দুই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতাম। রাতের বেলা পড়াশুনা করতাম। এই চাকরির টাকা, স্কলারশিপের জমানো টাকা এটা মিলে যে টাকা হয়েছিল, তাতে এলএলবি করাটা আমার জন্য কষ্ট  ছিল না। এভাবে দুই বছরে এলএলবি কমপ্লিট করি। এর মধ্যে লিংকনস জেনে রেজিস্ট্রেশন করে ফেলি। বার এট ল কমপ্লিট করে ২০০৩ সালে ঢাকায় আসি।

আইন পেশা শুরু

ঢাকায় যখন ফিরে এলাম তখন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ স্যার মন্ত্রী। তার চেম্বারে তেমন একটা ব্রিফ নেই। তখন আমি ব্যারিস্টার ওমর সাদাত ভাইয়ের সঙ্গে কিছুদিন কাজ করি। মাঝখানে ব্যারিস্টার আমির উল ইসলাম স্যার ডাকলেন (রিচার্স এবং অন্যান্য কাজ করতে)। স্যারের সঙ্গে কিছুদিন কাজ করি। ওমর সাদাত ভাইয়ের সঙ্গে তিন বছর কাজ  করলাম। পরে ভাবলাম আমি নিজেই চেম্বার দেব। এরপর ঢাকার পান্থপথে আমার নিজের চেম্বার স্থাপন করি।

গরীব মেধাবীদের পাশে

আমার শৈশব যেহেতু কষ্টে কেটেছে, সেই আইডিয়া থেকে সিসিবি ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেছি। এই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে আমার এলাকায় গরীব মেধাবীদের মেধা বিকাশে কাজ করে যাচ্ছি। সিসিবি ফাউন্ডেশন থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ১২০০ শিক্ষার্থীকে টাকা দিয়ে সহযোগিতা করেছি। কেউ মাসিক, কেউ এককালীন পেয়েছে। আবার কারো কারো ফরম ফিলাপের সময় টাকা দিয়ে সহযোগিতা করি। যদিও সিসিবি ফাউন্ডেশনে বাইরে থেকে অর্থ আসে না। নিজের টাকা দিয়েই পরিচালনা করি।


 

ব্যারিস্টার আব্দুল হালিমের সঙ্গে কথা বলছেন মেহেদী হাসান হালিম

 

চিলড্রেন চ্যারিটি ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা ও শিশু জিহাদের মামলার রায় 

২০০৪ সালে চিলড্রেন চ্যারিটি ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করি। এর মাধ্যমে শিশুদের অধিকার, শিক্ষা, শিশুদের ভবিষ্যৎ ও মানবাধিকার নিয়ে কাজ করি। চিলড্রেন চ্যারিটি ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত অনেকগুলো জনস্বার্থে মামলা দায়ের করেছি। এখনও করে যাচ্ছি।  এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- ২০১৪ সালে খিলগাঁওয়ে নলকূপে পড়ে শিশু জিহাদ মারা যায়। মারা যাওয়ার ঘটনায় ক্ষতিপূরণ দাবি করে মাননীয় বিচারপতি ফারাহ মাহবুবের কোর্টে মামলা করি। আদালতে মামলা শুনানিকালে বাংলাদেশে প্রথম যে ইস্যুটি সামনে আসে সেটি হল সাংবিধানিক আইনে দরিদ্র নিপীড়িত মানুষের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হলে হাইকোর্টে নিজেই ক্ষতিপূরণের আদেশ দিতে পারেন। সরকারি কাজের অবহেলার ফলে যদি মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হয়। তাহলে কর্তৃপক্ষ ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য। এই ক্ষতিপূরণ অন্যান্য ক্ষতিপূরেণ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। সাংবিধানিক আইনে ক্ষতিপূরণ দিতে সরকার যে দায়বদ্ধ এই নীতিটি সর্বপ্রথম প্রতিষ্ঠিত হল শিশু জিহাদের ক্ষতিপূরণ রায়ের মাধ্যমে। এই মামলায় হাইকোর্টের নির্দেশে  জিহাদের পিতা-মাতা ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ পান। এটা ছাড়াও জনস্বার্থে আমি এ পর্যন্ত প্রায় ২৫টি মামলা করেছি।

চেম্বার ও আইন পেশা 

আমি সরকারি অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানের প্যানেল অ্যাডভোকেট এবং অ‌্যাডভাইজর হিসেবে আছি। এছাড়া আমেরিকান ও জাপানভিত্তিক বিভিন্ন কোম্পানির লিগ্যাল সাইড দেখি। ল্যান্ড রিলেটেড ও সরকারি চাকরি সংক্রান্ত মামলা অনেক করেছি। আমার কোর্ট প্র্যাকটিসের সাথে আছেন অ্যাডভোকেট জামিউল হক ফয়সাল এবং ব্যারিস্টার জহিরুল ইসলাম। তারা আমার প্র্যাকটিসে সহায়তা করেন। ড্রাফটিংয়ে আমাকে সহায়তা করেন অ্যাডভোকেট তানিয়া, অ্যাডভোকেট মাঈদুল ইসলাম পলক, অ্যাডভোকেট মারজিয়া রহমান।

লেখালেখির প্রতি নেশা

লেখালেখির প্রতি আমার নেশা ছাত্রজীবন থেকে। সে সময়ই দুটি বই লিখি। এ পর্যন্ত আইন বিষয়ে ৬৫টি বই প্রকাশ করেছি। সবগুলো বই চিলড্রেন চ্যারিটি ফাউন্ডেশন (সিসিবি) থেকে প্রকাশ হয়েছে। আমার অনেক বই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্য বই হিসেবে পড়ানো হয়। 

কৃতজ্ঞ ও স্বরণ

দরিদ্র পরিবার  থেকে এ পর্যন্ত  উঠে আসার ক্ষেত্রে  অবশ্যই প্রথমে মাকে স্বরণ করি। যিনি শত কষ্টের  মধ্যেও পড়ালেখা বন্ধ করেননি। উৎসাহ দিয়েছেন। এরপর আমার মেঝোবোন, মেঝো দুলাভাইয়ের কথা বলতেই হয়। তারা যদি সহযোগিতা না করতেন এতদূর আসতে পারতাম না। মঠবাড়িয়ার সিদ্দিকুর রহমান ভাইয়ের কথা বলতে হয়। ওনার অবদান আমি ভুলতে পারব না। তিনি শুধু আমাকে সহযোগিতা করেই গেছেন। তাকে একটি বই উৎসর্গ করেছি। তার কথা লিখেছি। কিন্তু  তার ঋণ কোনদিন শোধ করতে পারব না। ইঞ্জিনিয়ার ইউসুফ আলী খান। যার মাধ্যমে আমি ঢাকায় আসি। ঢাকা কলেজে ভর্তি হই। ইঞ্জিনিয়ার ইউসুফ আলী খান ভাই আমার প্রথম বইয়ের প্রকাশক। ওনার প্রতি আমার বিশেষ কৃতজ্ঞতা। বরগুনার আলী আহমেদ ভাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তিনি আমাকে এবং পরবর্তীতে আমার ছোট দুই ভাইকে আশ্রয় দিয়েছেন। সহযোগিতা করেছেন। ছোট দুই ভাই আজ প্রতিষ্ঠিত। একজন যমুনা ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। আরেকজন বিআইডব্লিউটির কর্মকর্তা। আামি ও আমার দুই ভাইয়ে এ পর্যায়ে উঠে আসার পেছনে বড় ভূমিকা আলী আহমেদ ভাইয়ের। যিনি একজন সামান্য করণিক কিন্তু তার ভিতরের মানসিক অবস্থা ছিল অনেক মহানুভবতায় ভরা। 

পরিবার, বিয়ে

অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে আমি বিয়ে অনেক দেরিতে করেছি। আমার এক সন্তান। ওর নাম আনুশে হালিম। বয়স সাত। ক্লাস টু তে পড়ে স্কলাস্টিকায়। আমার স্ত্রী প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষিকা।

তরুণদের উদ্দেশ্যে যা বলতে চান

যারা কষ্ট করে বড় হতে চায় তাদের জন্য আমার পরামর্শ- কখনো আশাহত হওয়া যাবে না। সাহস ধরে রাখতে হবে। পরিশ্রম, একাগ্রতা আর নিষ্ঠার সাথে কাজ চালিয়ে যাওয়া।

নবাগত আইনজীবীদের জন্য পরামর্শ

নতুন যারা আইন পেশায় আসছেন তাদের প্রতি আমার পরামর্শ- হতাশ হলে চলবে না। এই প্রফেশনটা মারাত্মক চ্যালেঞ্জিং। চ্যালেঞ্জ হিসেবে ধরেই এগিয়ে যেতে হবে। নবীনদের বেশি দরকার পড়াশুনা করা। সিনিয়রদের পরামর্শ নেয়া। অনেককেই দেখা যায়, না জেনে না বুঝে পিটিশন নিয়ে হঠাৎ দাঁড়িয়ে যায়। এটা করা উচিত নয়। পড়াশুনা করে, ডিসিশন দেখে দাঁড়াতে হবে। এগুলো করলে আদালতের কাছে গ্রহণ যোগ্যতা বাড়বে, ক্লায়েন্টের কাছে গ্রহণ যোগ্যতা বাড়বে, চেম্বারেও গ্রহণ যোগ্যতাও বাড়বে।



ঢাকা/মেহেদী/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়