ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

আত্মরক্ষায় নকল সুরে ডাকে সবুজ হাঁড়িচাচা

শামীম আলী চৌধুরী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:০৪, ৩১ অক্টোবর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আত্মরক্ষায় নকল সুরে ডাকে সবুজ হাঁড়িচাচা

পাখির ছবি তোলার জন্য প্রিয় জায়গার কথা জিজ্ঞেস করলে অবশ্যই বলবো সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান। প্রায় নিত্য যাতায়াত, বনটির সঙ্গে সখ্য অনেক দিনের। এই সেদিনের কথা, বিকাল তিনটায় বনের গভীরে ছোট একটা পুকুর আছে। যেখানে পাখিরা পানি খেতে আসে। সেই পুকুর পাড়ে বসে আছি। পুকুরের চারপাশে ঘন ঝোঁপ-জঙ্গল।

দৃষ্টি আমার সামনের দিকে। হরেক প্রজাতির পাখি পানি খাওয়ার জন্য পুকুর পাড়ে আসছে। বেশ কয়েক প্রজাতি পাখির ছবি তুললাম। এরই মাঝে পুকুর পাড়ে বানর, কাঁকড়া ও বেজির দেখা পেলাম এবং ছবি তুললাম। বনের উঁচু গাছে ময়না, কাঠকুড়ালি, কয়েক প্রজাতির ফিঙ্গেসহ অনেক পাখি শেষ বেলার খাবার সংগ্রহে ব্যস্ত। পাখিগুলোর ওড়াউড়ি দেখছি। এমন সময় চোখ গেল একটি গাছের ডালে। সবুজ রঙের একটি পাখি পাতার সঙ্গে মিশে আছে। ঠিকমত বুঝতে পারলাম না এটা কি পাখি? হঠাৎ পাখিটি ঘুরে বসলো। মাথা ও চোখের রং দেখে রীতিমত অবাক! মনে হচ্ছে কেউ নিজ হাতে পাখিটিকে সাজিয়ে রেখেছে। ক্যামেরায় বেশ কিছু ছবি তুললাম। অধীর আগ্রহে বসে রইলাম। পাখিটি যদি নিচে নেমে আসে সেই আশায়। হঠাৎ পাখিটি উড়ে চলে গেল। মনটা খারাপ করে বসে আছি। কয়েক মিনিট পর ঝোঁপের ভিতর পাখির ডাক শুনতে পেলাম। এই আওয়াজ পূর্ব পরিচিত নয় বলে বুঝতে পারলাম না কার ডাক। এমন সময় পাখিটি পানি খাওয়ার জন্য পুকুর পাড়ে একটি গাছের ডালে বসলো। উত্তেজনায় শরীর কেঁপে উঠলো। কারণ পাখিটি প্রথম দেখলাম। আস্তে আস্তে পাখিটি নিচে মাটিতে নেমে এলো। সঙ্গে সঙ্গে অনেকগুলো ছবি তুললাম। পরে পাখিটির পরিচয় জানতে পারি। পাখিটি ছিলো সবুজ হাঁড়িচাচা।

সবুজ হাঁড়িচাচা Cissa গণের Corvidae পরিবারের অন্তর্ভুক্ত ৩৮ সে.মি. দৈর্ঘ্যের বড় আকারের একটি বনচর পাখি। বয়স্ক পাখির তামাটে-মেরুন ডানাসহ পিঠ পাতা সবুজ। চোখ রক্ত লাল বর্নের ও চোখের বেড় লালচে। দেহের নিচের অংশ হালকা সবুজ। মাথার পিছনে সবুজ ঝুটি আছে। মোটা কালো ডোরা চোখ। লেজ সবুজ ও লেজের আগা সাদা। ঠোঁট, পা, পায়ের পাতা ও নখ লাল রঙের।

সবুজ হাঁড়িচাচা ঘন চিরসবুজ বন ও আর্দ্র পাতাঝরা বনে বিচরণ করে। সচরাচর একা বা জোড়ায় দেখা যায়। মাঝে মাঝে বনের নিচে বা পাতার ভিতর পেঙ্গা ও ফিঙের মিশ্র ঝাঁকে দেখা যায়। আমি প্রথম পাখিটিকে ফিঙ্গের সঙ্গে দেখি। পাতার আড়ালে ঘুরে ঘুরে এরা শিকার খুঁজে বেড়ায়। এদের খাদ্য তালিকায় রয়েছে ব্যাঙ, টিকিটিকি, সাপ, পাখির ছানা, পাখির ডিম, বড় পোকা-মাকড় ও পচা মাংস। শিকার শেষে এরা মধুর সুরে ডাকে। নিজেদের আত্মরক্ষার জন্য এরা অন্যান্য পাখির ডাক অনুকরণ করে। এরা পিপ..পিপ.. করে উচ্চস্বরে ডাকে। এপ্রিল ও মে মাস এদের প্রজননকাল। প্রজননকালে নিজেরা ঘন বনের ভিতর পাতার আড়ালে কাঠি, গাছের মূল, পাতা ও শেওলা দিয়ে বাসা বানায়। নিজেদের বানানো বাসায় মেয়ে পাখিটি ৪-৬টা ডিম পাড়ে।

তিন প্রজাতির সবুজ হাঁড়িচাচা পৃথিবীতে পাওয়া যায়। বাংলাদেশে এক প্রজাতি দেখা যায়। এরা বাংলাদেশের দুর্লভ আবাসিক পাখি। চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের চিরসবুজ বনে দেখা যায়। এ ছাড়াও ভারত, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার, চীন ও ভিয়েতনামসহ দক্ষিণ, পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এদের বিচরণ রয়েছে।

বাংলা নাম: সবুজ হাঁড়িচাচা

ইংরেজি নাম: Common Green Magpie

বৈজ্ঞানিক নাম: Cissa chinensis(Boddaert, 1783)

লেখক ছবিগুলো সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান থেকে তুলেছেন


ঢাকা/হাসনাত/তারা

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়