ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

‘বাংলা আমার দ্বিতীয় মাতৃভাষা’

নাওমি ওয়াতানাবে || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:১২, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘বাংলা আমার দ্বিতীয় মাতৃভাষা’

জাপান আমার দেশ। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন আমার মাস্টার্স কোর্সের গবেষণামূলক প্রবন্ধের বিষয় ছিল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ। এই বিষয়টি আমি নিজে বেছে নিয়েছিলাম।

আমি গবেষণার মধ্য দিয়ে জানতে চেয়েছিলাম, একটা দেশ কীভাবে তৈরি হয়েছে, বিশেষ করে তার গঠন প্রক্রিয়া আর জাতি হিসেবে তার পরিচয় কীভাবে সৃষ্টি হয়েছে? এ গবেষণার মধ্য দিয়ে আমার বুকের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে অমর একুশের চেতনা। এই একুশের চেতনা নিয়ে আমি বাংলা ভাষায় কথা বলি, লেখালেখির চর্চা করি। এর পাশাপাশি বাংলা গানের চর্চা করে এসেছি, এখনও করছি।

আমার মনে হয়, একজন মানুষের তৈরি হওয়ার পিছনে যে উপাদান তা হলো জেনেটিক উপাদান ছাড়াও জন্মের পর থেকে পাওয়া অভিজ্ঞতা, বিশেষ করে যাদের সাথে দেখা হয়েছে আর সম্পর্ক তৈরি হয়েছে তাদের কাছ থেকে পাওয়া তাদের চিন্তা চেতনার প্রভাব, আর যেখানে তারা বাস করেছেন সেখানকার পরিবেশ থেকে পাওয়া প্রভাব উল্লেখযোগ্য। সে অর্থে আমার তৈরি হওয়ার উপাদানের মধ্যে আছে, অর্থাৎ আমার রক্তের মধ্যে ঢুকে আছে বাংলাদেশের বায়ু আর বাংলাদেশের মানুষদের কাছ থেকে পাওয়া অসীম ভালোবাসা।

বাংলাদেশ হলো আমার দ্বিতীয় মাতৃভূমি।বাংলা ভাষা হলো আমার দ্বিতীয় মাতৃভাষা।

আমি একটা অভিজ্ঞতার কথা বলতে চাই। সেটি এই বছরের অমর একুশে গ্রন্থমেলার কথা। একদিন আমার প্রকাশনার স্টলে একজন ভদ্র মহিলা এলেন। আমাকে লক্ষ্য করে খুব নম্রভাবে বললেন, ‘আপনি আমাকে চিনবেন না, তবে আমি আপনাকে চিনি। আমি আপনার আগের বইগুলো পড়েছি। এবারের বইও পড়েছি। আমার খুব ভালো লেগেছে। আমি আপনার লেখা আরও পড়তে চাই। আপনি আরও লেখালেখির চেষ্টা করবেন।’

এতটুকু বলে তিনি তার নামটিও না বলে, এমনকি আমার সঙ্গে ছবি না তুলে চলে গেলেন। যখন আমার লেখালেখির ব্যপারে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে প্রশ্ন পাই তখন সবাই জিজ্ঞাসা করে ‘আপনি কেন বাংলা ভাষায় লেখালেখি করেন?’

আমি আমার এই অভিজ্ঞতা থেকে সেই উত্তরটি সুস্পষ্টভাবে পেয়েছি। আমি আমার প্রিয় বাংলাদেশ আর বাংলাদেশের মানুষদের সাথে আমার লেখালেখি দিয়ে দৃঢ় বন্ধন রাখতে চাই। যখন একটি শিশু মায়ের পেটে থাকে তখন মায়ের সাথে নিবিড় বন্ধন হয় তার নাভিরজ্জু দিয়ে। ঠিক তেমন আমার বাংলা ভাষার লেখালেখির কার্যক্রম হলো এ দেশ মাতার সাথে সেই নাভিরজ্জুর মতো।

আর শুধু বাংলা ভাষায় লেখালেখি নয়, আমি বাংলা ভাষা আর জাপানি ভাষার সমৃদ্ধ সাহিত্যের অনুবাদের কাজের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ও জাপান এই দুই বন্ধুপ্রতিম দেশের সম্পর্ক আরও সুবর্ণ ও জোরদার করার জন্য কিছু অবদান রাখতে চাই।


ঢাকা/তারা

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়