ঢাকা     রোববার   ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২৯ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

জেনে রাখুন বৃক্ষরোপণ ও পরিচর্যার কিছু কৌশল

ফেরদৌস জামান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:২১, ৪ আগস্ট ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
জেনে রাখুন বৃক্ষরোপণ ও পরিচর্যার কিছু কৌশল

বৃক্ষরোপণের এখনই উপযুক্ত সময়। জুন থেকে আগস্ট মাস প্রকৃতি সতেজ থাকে বর্ষা মৌসুমের কারণে। এ সময় বৃক্ষরোপণের কিছু কৌশল জানাচ্ছেন বাংলাদেশ ফরেস্ট রিসার্স ইন্সস্টিটিউটের গবেষক আকসার উদ্দিন খান।

বৃক্ষের চারা রোপণের জন্য জুন মাসের পূর্বেই প্রস্তুতি নিতে হবে। কেননা এটিই সঠিক সময়। এরপর গাছটি কোথায় রোপণ করবেন সেই স্থান নির্বাচন করুন। এর ওপরই নির্ভর করবে আপনি কোন গাছ রোপণ করবেন।
বৃক্ষের আবর্তণ  কাল অনুযায়ী স্বল্প মেয়াদি (৫-১০ বছর), মধ্য মেয়াদি (১০-১৮ বছর) ও দীর্ঘ মেয়াদি (১৮-৪০ বছর) বৃক্ষের প্রজাতি নির্বাচন করুন। প্রজাতি নির্বাচনের ক্ষেত্রে দেশী প্রজাতির চারা রোপণের প্রতি গুরুত্ব দিন

একক প্রজাতির বাগান না করে মিশ্র প্রজাতির বাগানের প্রতি গুরুত্ব দিন। এরপর কাঙ্ক্ষিত প্রজাতির চারা প্রস্তুত বা উত্তোলনের ব্যবস্থা নিন অথবা নার্সারি থেকে সংগ্রহ করে নিন। যদি নিজে চারা প্রস্তুত বা উত্তোলন করেন তাহলে উন্নত মানের মাতৃ গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করুন। যদি চারা নার্সারি থেকে সংগ্রহ করেন তাহলে উন্নত মানের চারা বাছাই করুন এবং দুর্বল ও রুগ্ন চারা বাতিল করুন। বেশি বয়সের চারা রোপণ না করাই ভালো। মনে রাখবেন, বৈদ্যুতিক লাইনের নিচে বৃক্ষ রোপণ করা উচিত নয়।

চারা রোপণ পদ্ধতি :
চারা রোপণের আগে নির্বাচিত স্থান প্রয়োজন মতো পরিস্কার করে নিন এবং খুঁটি দিয়ে চিহ্নিত ও সঠিক দূরত্ব নির্ধারন করুন। ৪৫ সে.মি. থেকে ৫০ সে.মি. উঁচু, কানি আঙ্গুলের মত মোটা, যথেষ্ট শিকড় সমৃদ্ধ, সোজা ও ডালপালাবিহীন চারা সংগ্রহ করুন।

দুই বছর মেয়াদী চারার জন্য দুই ফুট, এক বছর মেয়াদী চারার জন্য দেড় ফুট এবং ছয় মাস বয়সী চারার জন্য এক ফুট মাপের গর্ত তৈরি করুন। গর্ত করার সময় গর্তের উপরি ভাগের মাটি এক দিকে এবং নিচের দিকের মাটি আর এক দিকে আলাদা করে রাখুন। এরপর মাটি গুঁড়া করে পরিমাণ মতো গোবর ও সার মিশিয়ে গর্ত ভরাট করে ফেলুন। তবে খেয়াল রাখতে হবে নিচের মাটি উপরে এবং উপরের মাটি নিচে দিতে হবে।

চারা সংগ্রহের পর শক্ত ও সতেজ হওয়ার জন্য কয়েক দিন ছায়াযুক্ত স্থানে রাখুন এবং প্রতিদিন প্রয়োজন মতো পানি দিন। চারা রোপণের সময় ধারালো ছুরি দিয়ে পলিথিন ব্যাগ কেটে অন্যত্র সরিয়ে ফেলুন। তবে এ কাজ করতে গিয়ে বা রোপণের সময় চারার গোড়ার মাটির দলা যেন ভেঙে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। চারা রোপণের পর গোড়ার মাটি ভালো করে চেপে দিন। চারার চেয়ে লম্বা বাঁশের খুঁটির সাথে হালকা করে সুতলি দিয়ে চারাটি বেঁধে দিন, যেন বাতাসে নড়াচড়া করতে না পারে। মাটি শুকনা থাকলে চারা রোপণের পরপরই সেচ দিন।

রোপণ পরবর্তী পরিচর্যা :
মনে রাখা প্রয়োজন, চারা রোপণের পর চারা টিকিয়ে রাখাই বড় কাজ। এ জন্য প্রথমেই গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া বা অন্যান্য তৃণভোজী প্রাণীর হাত থেকে চারাকে রক্ষা করার ব্যবস্থা করুন। চারা রোগাক্রান্ত হলে রোগ-বালাই নাশক প্রয়োগ করুন। প্রয়োজনে স্থানীয় বনকর্মী বা কৃষিকর্মীর পরামর্শ নিন। খড়ার সময় চারার গোড়ায় প্রয়োজন মাফিক পানি দিন। চারার শরীর বেয়ে ওঠা লতা কেটে দিন ও গোড়া আগাছা মুক্ত রাখুন।

শীতকালে চারার গোড়ার মাটি যেন রস যুক্ত থাকে সে জন্য শুকনো লতাপাতা, খড় ও কচুরিপানা দিয়ে চারার গোড়া ঢেকে দিন। মরা, রোগাক্রান্ত ও দুর্বল চারা সরিয়ে সেখানে  নতুন চারা রোপণ করুন। বেড়ে ওঠা গাছের একাধিক ডালপালা হলে অতিরিক্ত ডাল কেটে ফেলুন। এ সময় যেন দা বা ছুরির আঘাতে ডালপালা থেতলে না যায় এবং প্রধান কান্ডে যেন আঘাত না লাগে।

এখন বর্ষা মৌসুম। এ সময় চারার প্রতি বিশেষ খেয়াল বা বাড়তি যত্ন নিতে হবে। বর্ষার আগে ও পরে চারার গোড়ায় পরিমাণ মতো গোবর ব্যবহার করুন। বর্ষার পানি যেন চারার গোড়ায় না জমতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখুন। প্রয়োজনে চারার গোড়ার মাটি উঁচু করে দিন। চারা গাছের গোড়ার শেকড় কোনো কারণে বের হয়ে গেলে মটি দিয়ে ভরাট করে দিন। জলোচ্ছ্বাস কবলিত এলাকায় চারার গোড়ায় জমে থাকা পলি ও আবর্জনা সরিয়ে ফেলুন।

অনুলিখন : ফেরদৌস জামান



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৪ আগস্ট ২০১৫/তাপস রায়

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়