ঢাকা     রোববার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  পৌষ ৭ ১৪৩১

আমার প্রিয় শিক্ষক

সাইফ বরকতুল্লাহ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:০৭, ৫ অক্টোবর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আমার প্রিয় শিক্ষক

|| সাইফ বরকতুল্লাহ ||

প্রায় দেড়যুগ আগের কথা। তখন আমি পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। প্রাইভেট পড়তাম সুবল স্যারের কাছে। আমার বন্ধু রাজু, নাসরিন; রাজুদের বাড়িতে গিয়ে প্রতিদিন পড়তাম। স্যার বাইসাইকেলে করে প্রতিদিন এসে পড়াতেন।

একদিন প্রচণ্ড গরম। সম্ভবত চৈত্র মাস। গরমে অতীষ্ঠ। স্যার এসে পড়া শুরু করলেন। রাজুর মাথার চুল উসকোখুশকো দেখে বললেন, প্রতিদিন গোসলের পর মাথায় হালকা তেল ব্যবহার করবে। চুল ভালো থাকবে। আরেকদিন রাজু বাইরে খেলতে গিয়ে ব্যথা পায়। স্যার বললেন, খেলার সময় একটু সতর্ক থাকতে হবে। কারণ কোনো কারণে হাড় ভেঙে গেলে সরকারি চাকরি পেতে সমস্যা হবে। কারণ সরকারি চাকরিতে ফিটনেস দরকার। এরকম প্রতিদিনই পড়ার ফাঁকে নানা উপদেশ দিতেন। মাঝে মাঝে আমরা দুষ্টুমিও করতাম।

জীবনে এমন কিছু শিক্ষকের সান্নিধ্য আসে, যাদের অমোঘ উপস্থিতি আমার জীবনে সুদূরপ্রসারী ছাপ ফেলে যায়। মনে পড়ে লিয়াকত স্যার, রহমান স্যার, চান স্যারের কথা। স্কুল জীবনে তারা আমার জীবনে দারুণ প্রভাব বিস্তার করেছিলেন। স্কুলে নানা বিষয়ে তারা আমাকে উৎসাহ-উদ্দীপনা দিয়েছেন। আমাকে অনুপ্রাণিত করেছেন। একদিন রসায়ন পরীক্ষা দিচ্ছিলাম। তখন ইকোনো কলম ব্যবহার করতাম। পরীক্ষার খাতায় লিখছি মনোযোগ দিয়ে। কলমের কালি প্রায় শেষ প্রান্তে ছিল। লিয়াকত স্যার বললেন, ‘তোমার কলমের কালি শেষ, নাও এটা দিয়ে লেখ’। আমি তো হতবাক হয়ে গেলাম। আমি নিজেও খেয়াল করিনি ব্যাপারটা। রহমান স্যারের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করছি। তার যে গুণগুলো আমাকে সবচেয়ে আকর্ষণ করেছিল তার একটি হলো বৈদগ্ধময় অনবদ্য বাচনভঙ্গি। তিনি মননশীল মানুষ। তার কথার পরতে পরতে চিন্তাশীল মন সব সময় অনুভব করা যেত। পান খেতেন আর ইংরেজি গ্রামার পড়াতেন। তিনি টেনস এমনভাবে আমার হৃদয়ে গেঁথে দিয়েছিলেন যা এখনো আমাকে আলোকিত করে। একটি ঘটনার কথা মনে পড়ছে। আমাকে এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিতে হবে ইংরেজিতে। আামি একটা ড্রাফ করে স্যারের কাছে নিয়ে গেলাম। তিনি বললেন, ঠিক আছে। এরকম অনেক সহযোগিতা আমি পেয়েছি।

সত্যি কথা বলতে কি, কড়া নিয়মের বেড়াজালে আমি বড় হয়েছি। আমার হাইস্কুলে এলাকার প্রভাবশালী ফ্যামিলির সন্তানরা একসঙ্গে পড়তাম। যে কারণে আলাদা দৃষ্টি ছিল আমাদের প্রতি। একদিন আমরা স্কুল ফাঁকি দিয়ে প্রায় দশ বারোজন গেলাম সিনেমা দেখতে। পরের দিন রহমান স্যার ক্লাসে দাঁড় করিয়ে সবাইকে নানা উপদেশ দিলেন। বহু শিক্ষকের সংস্পর্শে আসার সুযোগ হয়েছে আমার। তাদের নিরলস প্রচেষ্টার ফলই আজকের আমি। তবে আমার জীবনে ফুফু ও দা্দী ও চাচার ভূমিকা আমায় বলতেই হবে। তাদের কাছেই অক্ষর পরিচয় আমার। বলা যায় শৈশবের ‍শুরুর শিক্ষা তারাই দিয়েছেন।





রাইজিংবিডি/ঢাকা/৫ অক্টোবর ২০১৮/তারা

রাইজিংবিডি.কম


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়