ঢাকা     রোববার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ||  অগ্রহায়ণ ৯ ১৪৩১

চিকিৎসা বিজ্ঞানে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার

শাহিদুল ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:৫০, ৪ জুলাই ২০২০   আপডেট: ১৭:২৩, ৪ অক্টোবর ২০২০
চিকিৎসা বিজ্ঞানে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার

শত কোটি মানুষের একটাই প্রার্থনা। একটি সম্মিলিত আশাবাদ- খুব শিঘ্রই মানুষ পেয়ে যাবে করোনার সফল প্রতিষেধক। এই লক্ষ্যে প্রাণান্তকর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা। সেই তালিকায় উঠে এসেছে বাংলাদেশের নাম। সম্প্রতি করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়তে সক্ষম এমন একটি ভ্যাকসিন আবিষ্কারের দাবি করেছে গ্লোব বায়োটেক লিমিটেড। যদিও ভ্যাকসিনটির চূড়ান্ত সাফল্য এখনও সময়সাপেক্ষ। এই আবিষ্কার চূড়ান্তভাবে সফল হোক বা না-ই হোক, আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে বাংলাদেশের গবেষকদের অবদানও কম নয়। চলুন জেনে নেই তাদের নাম। 

ডা. রফিকুল ইসলাম: বাংলাদেশি চিকিৎসক এবং চিকিৎসাবিজ্ঞানী। তিনি ডায়েরিয়া নিরাময়ের জন্য খাবার স্যালাইন (ওরাল স্যালাইন) আবিষ্কারের জন্য বিশ্বে এক নামে পরিচিত। তিনি আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশে (আইসিডিডিআরবি) থাকাকালীন বেশ কিছু ওষুধ আবিষ্কার করেন। এর মধ্যে অন্যতম ওর স্যালাইন। বিখ্যাত ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নাল ‘দ্য ল্যানসেট’ এই আবিষ্কারকে ‘চিকিৎসা বিজ্ঞানে বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার’ হিসেবে ঘোষণা করে।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের শরণার্থী শিবিরগুলোতে কলেরা ছড়িয়ে পড়লে একমাত্র চিকিৎসা হিসেবে শিরায় স্যালাইন (ইন্ট্রাভেনাস) দেওয়া হতো। কিন্তু ইন্ট্রাভেনাসের স্বল্পতার কারণে ডা. রফিকুল ইসলামের আবিষ্কৃত খাবার স্যালাইন রোগীকে দেওয়া হতো। এতে দারুণ ইতিবাচক ফল পাওয়া যায়। 

আরো পড়ুন:

স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ সরকার এই স্যালাইনের স্বীকৃতি দেয়। এ সময় ডায়েরিয়ার চিকিৎসায় স্যালাইনের ব্যবহার নিয়ে ব্যাপক প্রচার চালানো হয়। ফলে এটি ‘ঢাকা স্যালাইন’ নামেও পরিচিতি লাভ করে। ২০১৮ সালে এই মহান চিকিৎসাবিজ্ঞানী মারা যান। এরও আগে ডা. শাহ এম ফারুক কলেরা রোগের কারণ আবিষ্কার করেন। ২০০৫ সালে তিনি ‘ভিবরিও’ নামে এক ধরনের শক্তিশালী ব্যাকটেরিয়ার সংস্পর্শে অন্যান্য ব্যাকটেরিয়া এসে কীভাবে আরো কার্যকরী বা শক্তিশালী হয়ে ওঠে গবেষণা করে কলেরার মূল কারণ নির্ণয় করেন। 

শুভ রায়: বিশ্বের প্রথম কৃত্রিম কিডনি তৈরি করেন বাংলাদেশের বিজ্ঞানী শুভ রায়৷ এটি চিকিৎসাবিজ্ঞানে অসামান্য কীর্তি। ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার সহযোগী অধ্যাপক শুভ রায় তার সহকর্মীদের নিয়ে কৃত্রিম কিডনি তৈরির কাজ শুরু করেন। চলতি দশকের গোড়ার দিকে দলটি ঘোষণা দেয়, তারা কৃত্রিম কিডনি তৈরি করে তা অন্য প্রাণীর দেহে প্রতিস্থাপন করে সফল হয়েছেন। বর্তমানে কৃত্রিম কিডনি মানবদেহে প্রতিস্থাপনের কাজ চলছে।

আলী আবু ইবনে সিনা: সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আবু আলী ইবনে সিনার একটি উদ্ভাবন ক্যানসার পরীক্ষার ক্ষেত্রে অভাবনীয় সাফল্য এনেছে। ২০১৮ সালে উদ্ভাবিত নতুন এই পদ্ধতিতে কেবল রক্ত ও টিস্যু পরীক্ষার প্রয়োজন হয়। এই পরীক্ষাটি একটি বিশেষ ধরনের ডিএনএ পরীক্ষার উপর ভিত্তি করে করা হয়। এর মাধ্যমে জীনগত বৈশিষ্ট্য ধরা পড়ে। ফলে শরীরে কোন ধরনের ক্যানসার বাসা বেঁধেছে নির্ণয় করা যায়। এর অর্থ হলো, যত দ্রুত ক্যানসার নির্ণয় করা যাবে, তত দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা সম্ভব হবে। বর্তমানে ইবনে সিনা কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে রিসার্চ ফেলো হিসেবে কাজ করছেন। এই গবেষণা দলে তার সঙ্গে ছিলেন আরো দু’জন বিজ্ঞানী।

ডা. মোহান্মদ যোবায়ের চিশতী: উন্নত বিশ্বে ফুসফুসের ছোট ছোট বায়ুপ্রকোষ্ঠগুলোকে খোলা রাখার জন্য এবং সেখানে প্রেসার (চাপ) দেওয়ার জন্য এক ধরনের যন্ত্র ব্যবহার করা হয়। যা ফুসফুসে বুদবুদ তৈরি করে চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে ফুসফুসকে সচল রাখে। কিন্তু এই চিকিৎসা অনেক ব্যয়বহুল। ডা. মোহাম্মদ যোবায়ের চিশতী একটি পানিভর্তি শ্যাম্পুর বোতল আর একটি প্লাস্টিকের সাহায্যে এমন এক চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন, যা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুর মৃত্যুহার কমিয়ে এনেছে বিস্ময়করভাবে। তার উদ্ভাবিত সেই চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

 

ঢাকা/শান্ত

রাইজিংবিডি.কম

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়