ঢাকা     রোববার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ||  অগ্রহায়ণ ৯ ১৪৩১

ফাহিম সালেহের যত সফল উদ্যোগ

শাহিদুল ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২৩:০৪, ২৩ জুলাই ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
ফাহিম সালেহের যত সফল উদ্যোগ

গত ১৫ জুলাইয়ের সকালটা বাংলাদেশিদের কাছে শুরু হয়েছিল মন খারাপের খবর দিয়ে। ওই দিন নিউইয়র্কের ম্যানহাটনে নিজের ফ্ল্যাটে পাওয়া যায় এক বাংলাদেশি স্বপ্নবাজ তরুণের ক্ষত-বিক্ষত নিথর দেহ। ফাহিম সালেহ নামের ওই তরুণ ছিলেন রাইড শেয়ারিং অ্যাপ পাঠাওয়ের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং বিনিয়োগকারী।

মেধাবী বলতে যা বোঝায় ফাহিম ছিলেন তাই। তার মস্তিষ্ক সারাক্ষণ নতুন নতুন সৃজনশীল ধারণায় আলোড়িত হতো। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত স্বপ্নবাজ এই তরুণ  অসংখ্য উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন, যার অধিকাংশই ছিল সফল। ফাহিমের সফল উদ্যোগগুলো এখানে তুলে ধরা হলো:

টিন হ্যাংআউট ডট কম

তার বয়স তখন মাত্র ১৬। স্কুল বালক ফাহিম ওই বয়সেই উঠতি বয়সিদের জন্য বানিয়েছিলেন টিন-হ্যাংআউট ডটকম নামের একটি সোশ্যাল নেটওয়ার্ক প্লাটফর্ম। শুরুর দুই বছরের মাথায় এই সাইট থেকে তার আয় হয় প্রায় এক মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ফলে আঠারো বছর বয়সেই মিলিনিয়ার হয়ে গিয়েছিলেন ফাহিম।

প্র্যাংক কল সার্ভিস

ফাহিমের দ্বিতীয় সফল উদ্যোগ ছিল প্র্যাংক কল সার্ভিস নামের একটি ওয়েব সাইট। অচেনা নাম্বার থেকে কাউকে ফোন দিয়ে মজা করাটাই হচ্ছে প্র্যাংক কল। এই আইডিয়াটা কাজে লাগিয়ে একটা ওয়েবসাইট বানিয়েছিলেন ফাহিম। এই সাইটে অনেকগুলো রেকর্ড করা অডিও ক্লিপ ছিল। সাইটের ব্যবহারকারীরা সেগুলো থেকে যেকোনো একটা অডিও ক্লিপ পছন্দ করে নিয়ে কারো সঙ্গে মজা করতে পারতেন। শুরুতে এই সাইট ব্যবহারকারীদের জন্য ফ্রি হলেও পরে চাহিদা বেড়ে যাওযায় ফাহিম সাইটটিকে পেইড সার্ভিসে রূপান্তরিত করেন। এই সার্ভিস থেকে কয়েক বছরের মধ্যে তিনি মিলিয়ন ডলারেরও বেশি আয় করেছিলেন।

পাঠাও

২০১৪ সালে বাংলাদেশে এসেছিলেন ফাহিম। ওই সময়ে যুক্ত হন রাইড শেয়ারিং কোম্পানি পাঠাওয়ের সঙ্গে। পাঠাওয়ের তিনজন প্রতিষ্ঠাতার একজন ফাহিম সালেহ। ২০১৫ সালে যখন বাইক রাইড শেয়ারিং নিয়ে কারো তেমন কোন ধারণাই ছিল না, তখন মাত্র ১০০টি বাইক নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল পাঠাও। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাঠাও এখন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠান। পাঠাওয়ের বাজার মূল্য প্রায় চার হাজার কোটি টাকা।

গোকাডা

পাঠাওয়ের সফলতার পর ফাহিম বিশ্বব্যাপী রাইড শেয়ারিং ব্যবসা বিস্তৃতকরণের কাজে মনোযোগ দেন। তার মূল উদ্দেশ্য ছিল আফ্রিকার বাজার ধরা। এর অংশ হিসেবে ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে নাইজেরিয়ায় ‘গোকাডা’ নামে একটি রাইড শেয়ারিং সার্ভিস চালু করেন। তার সাথে সহপ্রতিষ্ঠাতা হিসেবে আরো একজন ছিলেন। কিন্তু প্রতিষ্ঠার এক বছরের মাথায় নাইজেরিয়ার সরকার মোটরসাইকেলে রাইড শেয়ারিং নিষিদ্ধ করায় খানিকটা সংকটে পড়ে গোকাডা।

তবে সংকটে পড়ার আগে এক বছরেই ‘গোকাডা’ ৫৩ লাখ মার্কিন ডলার আয় করে। যাত্রী পরিবহন নিষিদ্ধ হয়ে গেলেও ‘গোকাডা’ পার্সেল ডেলিভারি সার্ভিস চালু করে। বর্তমানে নাইজেরিয়ার রাজধানী লেগোসে তাদের ১ হাজার মোটরসাইকেল রয়েছে।

নেপথ্যের নায়ক

নিজের যোগ্যতা, মেধা আর আত্মবিশ্বাসের সমন্বয়ে তিনি নিজের ভাগ্য গড়ে নিয়েছিলেন। মাত্র তেত্রিশ বছর বয়সে তিনি সাফল্যের যে চূড়ায় উঠেছিলেন, সেটা অনেকের কাছেই ছিল স্বপ্নের মতো। তবে তিনি বরাবরই ছিলেন নেপথ্যের নায়ক। পর্দার পিছনে থেকে কাজ করতে ভালোবাসতেন। তাইতো খুন হওয়ার আগ পর্যন্ত খুব কম বাংলাদেশি তাকে চিনতেন, তার সম্পর্কে বিশদে জানতেন।

ফাহিম সালেহের এই নৃশংস খুনের ঘটনাটা অজস্র প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন— কেন খুন হতে হলো তাকে? সময়ের সাথে সাথে হয়তো এই প্রশ্নের উত্তর মিলবে। কিন্ত তাতে ফাহিম সালেহ আর ফিরে আসবেন না। মেধাবী এই তরুণ উদ্যোক্তার এভাবে অকালে হারিয়ে যাওয়াটা যে অপূরণীয় এক ক্ষতি— তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কারণ ফাহিম সালেহরা ক্ষণজন্মা। তারা প্রতিদিন জন্মান না।

 

ঢাকা/মারুফ

রাইজিংবিডি.কম


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়