ঢাকা     শনিবার   ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  পৌষ ১৩ ১৪৩১

র‌্যাগিং, র‌্যাগ ডে এলো যেভাবে

শাহিদুল ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:১৬, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২০   আপডেট: ১৭:৩৭, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২০
র‌্যাগিং, র‌্যাগ ডে এলো যেভাবে

ঢোল বাজিয়ে র‌্যাগ ডে উদযাপন

সম্প্রতি ‘র‌্যাগ ডে’ অমানবিক, নিষ্ঠুর ও নীতিবহির্ভূত উৎসব আখ্যা দিয়ে তা নিষিদ্ধ করার ঘোষণা দিয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। যদিও তীব্র আপত্তির মুখে ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে কর্তৃপক্ষ ঘোষণা প্রত্যাহার করে নেয় এবং সংশোধিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়: ‘ক্যাম্পাসে র‌্যাগ ডে উদযাপন নিষিদ্ধ নয়। তবে অনাকাঙ্ক্ষিত, অসৌজন্যমূলক, শৃঙ্খলা পরিপন্থী ঘটনায় নজর রাখবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।’

বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা শুরু হলে, অনেকেই মন্তব্য করেছেন, র‌্যাগ ডে এবং র‌্যাগিং গুলিয়ে ফেলার কারণেই এমনটি মনে হচ্ছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, র‌্যাগ ডে যতটা আনন্দ উৎসব, র‌্যাগিং একজন নবীন শিক্ষার্থীর কাছে ঠিক ততটাই ভীতিকর। কেননা শিক্ষার্থীদের কাছে র‌্যাগ ডে হচ্ছে শিক্ষা সমাপনী উৎসব। স্নাতক পর্যায় শেষ করা শিক্ষার্থীদের কাছে এটি একটি বিশেষ দিন। দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন আয়োজনের মাধ্যমে আনন্দে মেতে ওঠে। এই আনন্দ-আয়োজন অনেক সময় অতি উৎসাহীদের কারণে নিরানন্দে পরিণত হতে পারে। বা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতে পারে। তারপরও র‌্যাগ ডে বহু আগে থেকেই হয়ে আসছে।

যদিও ঠিক কীভাবে, কবে থেকে এর উৎপত্তি সে সম্পর্কে বিশদ জানা যায় না। তবে অক্সফোর্ড ডিকশনারিতে ১৮৬৪ সালের পূর্বে ‘র‌্যাগ’ শব্দটি ছিল না। এবং এ প্রসঙ্গে বেশ কয়েকটি মতামত পাওয়া যায়। একপক্ষের মত হলো- র‌্যাগ আসলে গ্রিক সংস্কৃতি থেকে এসেছে। সপ্তম-অষ্টম শতকে খেলার মাঠে খেলোয়াড়দের মনোবল বৃদ্ধির জন্য র‌্যাগিং নামক এক ধরনের উৎসবের প্রচলন শুরু হয়। ইউরোপে এর প্রচলন ঘটে অষ্টম শতকের মাঝামাঝি। ১৮২৮-১৮৪৫ সালের দিকে র‌্যাগ উইকের প্রচলন ঘটে আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। বলার অপেক্ষা রাখে না, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিভিন্ন ছাত্র সমিতি এর প্রচলন ঘটায়। মজার ব্যাপার হলো, ইউরোপ-আমেরিকায় এর যাত্রা হলেও বর্তমানে ভারতীয় উপমহাদেশে এর ব্যবহার সর্বাধিক।

আরো পড়ুন:

অন্যপক্ষের মতে ভিক্টোরিয়ান যুগে বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল ছাত্র দুস্থদের জন্য র‌্যাগ বা পুরনো কাপড় সংগ্রহ করতে শুরু করে। পড়ালেখার পাশাপাশি এই দাতব্য কাজ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি করে। এই কর্মসূচি Raise and Give, Raising and Giving, Raise and Grand (RAG) নামে পরিচালিত হতো। ধীরে ধীরে এই দাতব্য কাজ স্নাতক শেষের উৎসবে পরিণত হয়।

আফ্রিকায় সর্বপ্রথম র‌্যাগ ডে পালিত হয় দক্ষিণ আফ্রিকার পিটোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯২৫ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা স্নাতক শেষে এক বর্ণাঢ্য র‌্যালি বের করে। র‌্যালিতে তারা Raising and Giving (RAG) কর্মসূচি নামে মানুষের কাছ থেকে অর্থ উত্তোলন করে। ধারণা করা হয়, এরপর থেকে উপমহাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে র‌্যাগ ডে পালন জনপ্রিয় হতে থাকে। বর্তমানে আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্নাতক শেষে র‌্যাগ ডে পালন একটি অত্যাবশ্যকীয় অনুষঙ্গে পরিণত হয়েছে।

র‌্যাগ ডে উৎসব হলেও র‌্যাগিং সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি বিষয়। র‌্যাগিং বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চর্চা হয় বেশি। প্রচলিত ধারণায় আদব-কায়দা শেখানোর উদ্দেশ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষার্থীরা জুনিয়রদের; বিশেষ করে নতুন ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের নানা কায়দায় নিপীড়ন করে। এটিই হলো র‌্যাগিং। বিষয়টি অনেক সময় লুকিয়ে করা হয় বলে জানা যায় না বা ভয়ে পরবর্তী সময়ে এ প্রসঙ্গে কেউ মুখ খোলে না। ফলে বিষয়টি গোপন থেকে যায়। র‌্যাগিং-এর ভয়াবহ কয়েকটি ঘটনা জানাজানি হয়ে যাওয়ায় এবং বিষয়টি ব্যাপকভাবে সমালোচিত হওয়ায় ধীরে হলেও শিক্ষার্থীরা এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে শুরু করেছে। র‌্যাগিং অনেক সময় দলগতভাবেও করা হয়। নবাগত শিক্ষার্থীদের জন্য র‌্যাগিং একটি আতঙ্কের নাম।

ঢাকা/তারা

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়