খেলা শেষ তবুও গোলকিপার গোলপোস্টে দাঁড়িয়ে কেন
স্যাম বার্ট্রাম। নামটি খুব কম মানুষই জানেন। কিন্তু তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনাটি অনেকেরই জানা। ২৭ ডিসেম্বর ১৯৩৭। ক্রিসমাসের দিন খেলা হচ্ছিল চেলসি বনাম চার্লটনের মধ্যে। কিন্তু দিনটি ছিল খুবই কুয়াশাচ্ছন্ন। সময় যত যাচ্ছিল পাল্লা দিয়ে বাড়ছিল কুয়াশা। শেষ পর্যন্ত খেলা স্থগিত ঘোষণা করতে বাধ্য হন ম্যাচ রেফারি। কারণ কয়েক হাত দূরের দৃশ্যও দেখা কঠিন হয়ে পড়েছিল।
এর পরের ঘটনাকে কেউ ব্যাখ্যা করেন বার্ট্রামের দায়িত্বশীলতা অথবা তার দলের দায়িত্বজ্ঞানহীনতা হিসেবে। আসলে কী হয়েছিল সেদিন, যে কারণে বার্ট্রামকে ইতিহাস এখনও মনে রেখেছে? এমনকি এই সময়ে এসেও অন্তর্জালে মাঝে মাঝেই সেই কুয়াশাচ্ছন্ন দিনে গোলপোস্ট আগলে দাঁড়ানো বার্ট্রামের ছবি ভেসে উঠতে দেখা যায়।
ঘটনাটি হলো- খেলা শেষ তবুও গোলকিপার বার্ট্রাম দাঁড়িয়ে আছেন গোল পোস্টে। মনে নানা শঙ্কা। এই বুঝি প্রতিপক্ষ আক্রমণ করে বসলো! এই ভেবে বেচারা খুব সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছিল চারপাশ। কিন্তু কাউকে দেখতে পাচ্ছিলেন না। এমন সময় মাঠের নিরাপত্তা কাজে নিয়োজিত পুলিশ তাকে দেখতে পান। পুলিশ যখন চিৎকার করে বলেন, খেলা শেষ হয়েছে বেশ কিছুক্ষণ হলো। তুমি এখনও দাঁড়িয়ে আছো কেন? তখন সম্বিৎ ফিরে পান স্যাম বার্ট্রাম। কিন্তু ততক্ষণে বেশ কিছু সময় পেরিয়ে গেছে। বার্ট্রাম বিস্মিত হয়ে যখন হোটেলে ফিরলেন তখন দেখলেন তার দলের অন্যরা ফ্রেশ হয়ে খাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
ঘটনাটি গুরুত্ব দিয়ে ছাপা হয় অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)-এ। এখানেই কিন্তু শেষ নয়। স্যাম বার্ট্রাম আরেকবার আলোচনায় আসেন তার বিয়ের অনুষ্ঠান রেখেই খেলার মাঠে যোগ দিয়েছিলেন বলে। তবে প্রথম ঘটনাটি তিনি আত্মজীবনীতে লিখেছেন এভাবে: ‘কুয়াশা দ্রুত ঘন হতে শুরু করে। আমি আমার গোল-লাইনে গতি বাড়িয়ে দিলাম। আমি মনে মনে এই ভেবে খুশি যে চেলসির কোনো খেলোয়াড়কে দেখা যাচ্ছিল না। আমাদের খেলোয়াড়রা হয়তো তাদের অর্ধেক মাঠেই বন্দি করে রেখেছে। কিন্তু ঘন কুয়াশার কারণে রেফারি খেলা বন্ধ করে দেন। এ দিকে অনেকক্ষণ পর আমার সামনে কুয়াশার পর্দা থেকে একটি চিত্র বেরিয়ে এলো। সে একজন পুলিশ ছিল। সে আমার দিকে অবিশ্বাস্যভাবে তাকিয়ে বলল- তুমি এখনও এখানে কী করছ?’
এবার এক পলকে স্যাম বার্ট্রামের খেলোয়াড়ী জীবন পড়ে নেয়া যাক। ১৯৩৪ সালের কথা। বার্ট্রাম তখন একটি খনিতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। সেখানে শ্রমিকদের একটি খেলায় তিনি আউটফিল্ড খেলোয়াড় ছিলেন। সেসময় একজন তাকে দেখেছিলেন। লোকটি ছিল চার্লটন ক্লাবের ম্যানেজার জিমি সিডের ভাই। এরপর ফিরে তাকাতে হয়নি স্যাম বার্ট্রামকে। ২০ বছর বয়সী বার্ট্রাম চার্লটনের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেন। যদিও প্রথম খেলায় ৬ গোল হজম করতে হয়েছিল তাকে, কিন্তু পরের তিনটি খেলায় তার অসাধারণ নৈপুণ্যে জিতে যায় চার্লটন। যদিও চার্লটনে যোগদানের সময় সেখানে তার সিনিয়র গোলরক্ষক ছিল। কিন্তু নিজ যোগ্যতায় দ্রুত ক্লাবের ১ নাম্বার গোলরক্ষক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন তিনি। জীবনের পরবর্তী বাকি ২২ বছর এখানেই কাটান তিনি।
তার বিয়ের ঘটনাটি ‘দ্য মিরর’ গুরুত্বের সঙ্গে ছেপেছিল। তিনি তখন নিজের বিয়ের অনুষ্ঠানে। কিন্তু সেই শহরেই খেলা হচ্ছিল চার্লটনের। খেলার মাঝেই অসুস্থ হয়ে পড়েন গোলরক্ষক। জানতে পেরে বিয়ের কনেকে বসিয়ে রেখে খেলোয়াড়ের পোশাক পরে মাঠে নামেন তিনি এবং নিশ্চিত হারকে জয়ে পরিণত করেন। এ জন্য পরে সেই মাঠেই তার বিবাহ সংবর্ধনার আয়োজন করে চার্লটন কর্তৃপক্ষ।
স্যাম বার্ট্রাম সে সময়ের তারকা গোলরক্ষক ছিলেন। ১৯৫৬ সালের সেপ্টেম্বরে ফুটবল থেকে অবসরের পর চার্লটনে চাকরি নেন। পাশাপাশি ‘সানডে পিপল’ পত্রিকায় শুরু করেন সাংবাদিক জীবন। ৬৭ বছর বয়সে ১৯৮১ সালে এই কিংবদন্তি গোলরক্ষক মারা যান।
ঢাকা/তারা