ঢাকা     মঙ্গলবার   ০৫ নভেম্বর ২০২৪ ||  কার্তিক ২১ ১৪৩১

চাঁদে জমি কেনার উপায় 

শাহিদুল ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:০৬, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২১   আপডেট: ১৫:২২, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২১
চাঁদে জমি কেনার উপায় 

সম্প্রতি খুলনার অসীম নামে এক ব্যক্তি বিবাহ বার্ষিকীতে স্ত্রী ইশরাতকে উপহার হিসেবে চাঁদে জমি কিনে দিয়ে হইচই ফেলে দিয়েছেন। নেট দুনিয়ায় রীতিমতো ভাইরাল হয়েছে খবরটি! অসীমের দেখাদেখি নেটিজেনদের অনেকেই নিজের নামে কিংবা স্ত্রীকে চাঁদে জমি কিনে দিতে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।

এতো আলোচনার ভিড়ে একটি প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই আসে, আর তা হলো- চাঁদে কি আসলেই জমি কেনা যায় নাকি সবটাই মিথ্যা! এতোদিন এ ধরনের খবর বিদেশি পত্রিকায় পাওয়া যেত, এখন যেহেতু প্রতিবেশীও চাঁদে জমি কিনছেন তাহলে আপনিই বা  পিছিয়ে থাকবেন কেন? আর সত্যি সত্যি যদি চাঁদে জমি কিনে ভালোবাসার মানুষকে চমকে দেয়া যায় তাহলে মন্দ কি!

প্রথম কথা হচ্ছে- চাঁদে জমি কেনা যায়। শুধু চাঁদে নয়, চাইলে সৌরজগতের অন্যান্য গ্রহেও আপনি জমি কিনতে পারবেন। তবে সেই জমি হবে শুধুই কাগজে-কলমে। এ জন্য প্রথমে আপনাকে লুনার অ্যাম্বাসি ডটকম নামে একটি ওয়েবসাইটে যেতে হবে। এই ওয়েব সাইটটির নির্মাতা ডেনিস হোপ।  

ওয়েবসাইটে গিয়ে জমি কেনার জন্য আপনাকে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। সেখানে কতটুকু জমি কিনবেন, কোন অংশে কিনবেনসহ কী পরিমাণ অর্থ পরিশোধ করতে হবে ইত্যাদি উল্লেখ থাকে। রেজিস্ট্রেশন শেষ হওয়ার পর ডিজিটাল গেটওয়ে ব্যবহার করে অর্থ পরিশোধ করতে হবে। চাঁদে এক একর জমি কিনতে অবস্থান ভেদে ২৪ ডলার থেকে ৫ শ ডলার পর্যন্ত দাম পরিশোধ করতে হয়। অর্থাৎ আপনি চাঁদের কোন অংশে জমি কিনছেন তার ওপর ভিত্তি করে অর্থের পরিমাণের হেরফের হয়।

অর্থ পরিশোধের পর ই-মেইলের মাধ্যমে চাঁদের যে অংশটি আপনি কিনলেন তার একটি স্যাটেলাইট ছবি এবং জমি কেনার কাগজপত্র অর্থাৎ জমি কেনার পর ক্রেতার সঙ্গে বিক্রয় চুক্তি, জমির ভৌগলিক অবস্থান ও মৌজা-পরচার মতো আইনি নথি আপনি পাবেন। কেউ যদি আরো একটু ব্যয় করতে রাজি থাকে, তাহলে তাদের জন্য চাঁদের সম্পূর্ণ মানচিত্র এবং অন্যান্য তথ্যও সরবরাহ করা হয়।

এখন প্রশ্ন হলো কে এই ডেনিস হোপ? তারচেয়েও বড় কথা তিনি এভাবে জমি বিক্রি করতে পারেন কিনা? বিশেষ করে যেখানে আন্তর্জাতিক মহাকাশ আইনের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা একটি চুক্তিতে বলা হয়েছে- পৃথিবীর বাইরে মহাশূন্যে, চাঁদ এবং অন্যান্য যেসব বস্তু রয়েছে সেগুলো কোনো দেশ দখল বা নিজেদের একক সম্পত্তি দাবি করতে পারবে না। ১৯৬৭ সালের ২৭ জানুয়ারি ‘দ্য আউটার স্পেস ট্রিটি’ নামক এই আন্তর্জাতিক চুক্তি করে সোভিয়েত ইউনিয়ন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য। এখন পর্যন্ত ১১০টি দেশ এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। 

এ দিকে ১৯৭৯ সালে চাঁদ এবং মহাশূন্যের অন্যান্য বস্তুতে বিভিন্ন রাষ্ট্রের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করার ক্ষেত্রে সমঝোতা প্রস্তাব আনে জাতিসংঘ। এই প্রস্তাবটি ‘মুন এগ্রিমেন্ট’ নামে পরিচিত। এর মূল বিষয় হলো, চাঁদ এবং এর যে কোনো প্রাকৃতিক সম্পত্তিতে মানব সভ্যতার সবার সমান অধিকার থাকবে। সমস্যা হলো যুক্তরাজ্য, চীন এবং রাশিয়ার মতো মহাকাশ গবেষণার প্রধান দেশগুলো চুক্তিটি সমর্থন করেনি। এই চুক্তির ফাঁক কাজে লাগিয়ে চাঁদে জমি বিক্রি করছেন ডেনিস হোপ। তারই প্রতিষ্ঠান লুনার এম্বেসি কমিশন। এ ছাড়াও দ্য লুনার রেজিস্ট্রি এবং লুনার ল্যান্ডসহ আরো কিছু প্রতিষ্ঠান চাঁদে জমি বিক্রির অফার দিচ্ছে।

ডেনিস হোপ মার্কিন নাগরিক। পেশায় খণ্ডকালীন গাড়ি বিক্রেতা। তিনি ১৯৮০ সাল থেকে নিজেকে চাঁদ এবং সৌর জগতের সব গ্রহের মালিক দাবি করে আসছেন। হোপসহ বেশ কিছু চক্র অনলাইনে চাঁদ এবং অন্যান্য গ্রহ-উপগ্রহের জমি বিক্রির নাম করে পয়সা হাতিয়ে নিচ্ছে। তাদের মিথ্যা প্রলোভন ও চটকদার কথাবার্তায় মজে কিছু মানুষ চাঁদে জমি কিনতে গিয়ে শুভঙ্করের ফাঁকিতে পড়ছেন। খোয়াচ্ছেন মোটা অঙ্কের অর্থ। 

ঢাকা/তারা


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়