ঢাকা     সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  পৌষ ৯ ১৪৩১

‘ধানমন্ডির ৩২’ যেন মুক্তিকামী মানুষের তীর্থকেন্দ্র

শাহ মতিন টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:১১, ১৮ মার্চ ২০২২   আপডেট: ১৩:২৪, ১৮ মার্চ ২০২২
‘ধানমন্ডির ৩২’ যেন মুক্তিকামী মানুষের তীর্থকেন্দ্র

একাত্তরের মার্চে ৩২ ধানমন্ডিতে একটি প্রেস ব্রিফিংয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

একদিকে সংগ্রামের প্রস্তুতি, অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু-ইয়াহিয়ার ওয়ান টু ওয়ান আলোচনা- এই ছিল অগ্নিগর্ভ একাত্তরের ১৮ মার্চের দৃশ্যপট। একপর্যায়ে এটাই স্পষ্ট হয়ে ওঠে- আসলে আলোচনার নামে সময়ক্ষেপণ চলছে। ওই আলোচনাতেই শাসকশ্রেণির বিরুদ্ধে আলোচনার নামে প্রহসনের অভিযোগ আনেন বঙ্গবন্ধু। স্বাধীনতার দাবিতে অটল থেকেই আলোচনায় অংশগ্রহণ করছিলেন তিনি।

এদিকে দিনটি ছিল লাগাতার চলতে থাকা অসহযোগ আন্দোলনের ১৭তম দিন। বঙ্গবন্ধুর বাসভবন ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে ঢল নামে প্রবীণ-নবীন নির্বিশেষে সমাজের সর্বস্তরের শ্রেণি-পেশার মানুষের। বাসভবনটি হয়ে ওঠে বাংলার মুক্তিকামী মানুষের তীর্থকেন্দ্র। 

নেতার বাসভবনের সামনে ভোর থেকে গভীর রাত অবধি লাখো জনতার ভিড়। মুখরিত মিছিলে-স্লোগানে। ছাত্র-ছাত্রী, যুবক-যুবতী, শিক্ষক, চিকিৎসক, সাংবাদিক, কর্মচারী, শ্রমিক, কৃষক, নার্স, ব্যবসায়ী, পেশাজীবীদের সংগঠনসমূহ অসহযোগ আন্দোলনের প্রতি অকুণ্ঠ আস্থা জ্ঞাপনপূর্বক নেতার আশীর্বাদ কামনা করেন। 

আরো পড়ুন:

নেতার বাসভবনে সমাগত বিদেশি সাংবাদিকদের এসব মিছিলের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে আবেগভরা কণ্ঠে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘বিদেশি বন্ধুরা দেখুন। আমার দেশের মানুষ আজ প্রতিজ্ঞায় কী অটল, সংগ্রাম আর ত্যাগের মন্ত্রে কত উজ্জীবিত। কার সাধ্য এদের রোখে? আমার দেশ আজ জেগেছে, জনগণ আজ জেগেছে। জীবন দিতে শিখেছে। স্বাধীনতার জন্য জীবনদানের অগ্নিশপথে দৃপ্ত জাগ্রত জনতার এ জীবন জোয়ারকে, প্রচণ্ড এ গণবিস্ফোরণকে স্তব্ধ করতে পারে এমন শক্তি মেশিনগানেরও আজ আর নেই। ভোর ৫টা হতে রাত পর্যন্ত আপনারা কেবল একই দৃশ্য দেখতে পাবেন।' 

অন্যদিকে একাত্তরের এ দিনটি ছিল বৃহস্পতিবার। গত মঙ্গলবার ও বুধবার প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হলেও আজ কোন বৈঠক হয়নি। তবে আগামীকাল পুনরায় তৃতীয় দফা বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা যায়। 

একাত্তরের এ দিনেই বিমানবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত বাঙালী সৈনিকরা স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য প্রকাশ্যে ঘোষণা দেন। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের কর্মীরা বাংলাদেশে অবসরপ্রাপ্ত সৈনিকদের স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে একাত্ম করতে বিভিন্নস্থানে মতবিনিময় চালিয়ে যেতে থাকে। দেশের বিভিন্নস্থানে সাধারণ মানুষ সামরিক প্রশিক্ষণের প্রস্তুতি নিতে থাকে। মহিলা পরিষদের মেয়েরাও পিছিয়ে ছিল না। তাদেরও বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।

এদিকে পাকিস্তানি শাসকরা স্বাধীনতার আন্দোলন দমাতে এভাবে একটু একটু করে প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছিল।  সামরিক ঘাঁটি শক্তিশালী করতে গোপনে গোলাবারুদ আর সৈনিক জড়ো করার আভাস আকাশে-বাতাসে। এদিন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সদস্যরা তেজগাঁও-মহাখালীতে শ্রমিকদের ট্রাকে হামলা চালায়। আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম সংবাদপত্রে প্রদত্ত এক বিবৃতিতে বলেন, ‘এ ধরণের উস্কানি আর সহ্য করা হবে না।’

‘বীর বাঙালী অস্ত্র ধর, বাংলাদেশ স্বাধীন কর’ বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে জনতা সারাদিন মিছিলের পর মিছিল করে চলমান আন্দোলনের সঙ্গে তাদের অকুণ্ঠ সমর্থন ও একাত্মতা ব্যক্ত করে। মিছিলকারীদের উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘তোমরা ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল। জনগণের রক্তের সঙ্গে আমি বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারি না।’

স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ এক বিবৃতিতে আমেরিকা, ব্রিটেন, রাশিয়া, চীন প্রভৃতি শক্তির প্রতি তাদের সরবরাহকৃত অস্ত্রের দ্বারা বাঙালী হত্যার অপচেষ্টা বন্ধ করার আবেদন জানায়। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ অপর এক বিবৃতিতে বিভিন্ন দেশের সরকার, বিশ্ববিদ্যালয় এবং বুদ্ধিজীবীদের কাছে তারবার্তা পাঠিয়ে আসন্ন গণহত্যা ও যুদ্ধ থেকে পশ্চিম পাকিস্তানিদের নিবৃত্ত করার অনুরোধ জানান।

ঢাকা/টিপু

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়