ঢাকা     সোমবার   ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  পৌষ ২ ১৪৩১

মুহম্মদ জাফর ইকবালের ৭১ বছরে পা 

শাহ মতিন টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:০৭, ২৩ ডিসেম্বর ২০২২   আপডেট: ১০:০৮, ২৩ ডিসেম্বর ২০২২
মুহম্মদ জাফর ইকবালের ৭১ বছরে পা 

মুহম্মদ জাফর ইকবাল। তার অনেকগুলো কিশোর উপন্যাস বাংলা কিশোর-সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে। কয়েকটি উপন্যাস থেকে নির্মিত হয়েছে সফল চলচ্চিত্রও। তিনি কলামিস্ট হিসেবেও জনপ্রিয়। আজ ৭১ বছরে পা দিলেন জনপ্রিয় এই কথাসাহিত্যিক। 

১৯৫২ সালের ২৩ ডিসেম্বর নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুর গ্রামে তার জন্ম। বাবা মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ফয়জুর রহমান আহমদ এবং মা আয়েশা আখতার খাতুন। বাবা ফয়জুর রহমান আহমদের পুলিশের চাকরির সুবাদে তার ছোটবেলা কেটেছে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায়। বাবা লেখালেখির চর্চা করতেন। পরিবারের এই সাহিত্যমনস্ক পরিবেশে জাফর ইকবাল খুব অল্প বয়স থেকেই লিখতে শুরু করেন। প্রথম বিজ্ঞান কল্পকাহিনী লেখেন সাত বছর বয়সে। 

জাফর ইকবাল ১৯৬৮ সালে বগুড়া জিলা স্কুল থেকে এসএসসি এবং ১৯৭০ সালে ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। তিনি ১৯৭২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন।  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৮২ তে ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচ.ডি সম্পন্ন করে ১৯৮২ থেকে ১৯৮৮ পর্যন্ত ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে সাফল্যের সাথে ডক্টরেটোত্তর গবেষণা সম্পন্ন করেন। ১৯৮৮ তে তিনি বিখ্যাত বেল কমিউনিকেশন্স রিসার্চ (বেলকোর) এ গবেষক হিসাবে যোগদান করেন এবং ১৯৯৪ পর্যন্ত সেখানেই কাজ করেন। ওই বছরেই তিনি দেশে ফিরে আসেন এবং সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে যোগদান করেন। একসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠন শিক্ষক সমিতির সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন। সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক এবং তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক্স প্রকৌশল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত থেকে অবসর গ্রহণ করেন।

২০১৮ সালে ৩ মার্চ বিকেলে সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবালকে ছুরিকাঘাত করা হয়। ওই সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে ইলেকট্রিকাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) উৎসবের রোবটিক প্রতিযোগিতার সমাপনী অনুষ্ঠান চলছিলো। 

যুক্তরাষ্ট্রে পড়ার সময় জাফর ইকবাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠী ড. ইয়াসমিন হকের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। ইয়াসমিন হক শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষকতা করছেন। তাঁদের দুই ছেলে নাবিল ইকবাল ও মেয়ে ইয়েশিম ইকবাল।

জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ তার বড় ভাই এবং রম্য ম্যাগাজিন উন্মাদের সম্পাদক ও কার্টুনিস্ট, সাহিত্যিক আহসান হাবীব তার ছোট ভাই। তার বোন তিনজন- সুফিয়া হায়দার, মমতাজ শহীদ ও রুখসানা আহমেদ। কন্যা ইয়েশিম ইকবাল তার কিশোর উপন্যাস আমার বন্ধু রাশেদ ইংরেজিতে রূপান্তর করেছেন Rashed, my friend নামে।

ব্যক্তিগত জীবন তিনি অনেক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। বাংলা একাডেমি পুরস্কার (২০০৪), শ্রেষ্ঠ নাট্যকার হিসেবে মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার (২০০৫), কাজী মাহবুবুল্লা জেবুন্নেছা পদক (২০০২), খালেদা চৌধুরী সাহিত্য পদক (বাংলা ১৪১০), শেলটেক সাহিত্য পদক (২০০৩), ইউরো শিশুসাহিত্য পদক (২০০৪), মোহা. মুদাব্বর-হুসনে আরা সাহিত্য পদক (২০০৫), মার্কেন্টাইল ব্যাংক সম্মাননা পদক (২০০৫), আমেরিকা অ্যাল্যাইমনি অ্যাসোসিয়েশন পদক (২০০৫), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালাইমনি অ্যাসোসিয়েশন পদক (২০০৫)।

মুহম্মদ জাফর ইকবালের প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা দেড় শতাধিক। তার উল্লেখযোগ্য রচনাবলী হচ্ছে- উপন্যাস : আকাশ বাড়িয়ে দাও (১৯৮৭), বিবর্ণ তুষার (১৯৯৩), দুঃস্বপ্নের দ্বিতীয় প্রহর (১৯৯৪), কাচসমুদ্র(১৯৯৯), সবুজ ভেলভেট (২০০৩), ক্যাম্প (২০০৪), মহব্বত আলীর একদিন (২০০৬) ছোট গল্প : একজন দুর্বল মানুষ (১৯৯২), ক্যাম্প, ছেলেমানুষী (১৯৯৩), নুরূল ও তার নোটবই (১৯৯৬), মধ্যরাত্রিতে তিন দূর্ভাগা তরুণ (২০০৪ )।

/টিপু/


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়