ঢাকা     শনিবার   ২১ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  পৌষ ৬ ১৪৩১

রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে আইনসভায় সোচ্চার ছিলেন আনোয়ারা খাতুন

আফরিন শাহনাজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:১৭, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩   আপডেট: ১৫:৪২, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে আইনসভায় সোচ্চার ছিলেন আনোয়ারা খাতুন

১৯৪৮ সালে গঠিত হওয়া রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের অন্যতম সদস্য ছিলেন আনোয়ারা খাতুন। তিনি  ১৯৪৬ সালে বঙ্গীয় আইনসভায় প্রথম মুসলিম নারী সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত ভাষা আন্দোলনের বেশ কয়েকটি গোপন বৈঠকে তিনি সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। এই বৈঠকগুলোর বেশিরভাগই তাঁর ঢাকাস্থ ২৩ নম্বর গ্রিন রোডের বাসাভবনে অনুষ্ঠিত হয়। 

১৯৪৯ সালের ২৩ জুন আওয়ামী লীগের অর্থাৎ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের জন্মলগ্ন থেকেই তিনি এই দলের সঙ্গে যুক্ত হন। পূর্ববঙ্গ আইন পরিষদের সদস্য হিসেবে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে আইনসভার ভেতরে ও বাইরেও আনোয়ারা খাতুন সোচ্চার ছিলেন। ১৯৪৮ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি করাচীতে পাকিস্তান গণপরিষদের বৈঠকে উর্দু ইংরেজির পাশাপাশি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি উত্থাপন করেন ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত। কিন্ত তা নাকচ হয়ে যায়। পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর খাজা নাজিমউদ্দীন এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে বক্তৃতায় বলেন, ‘পূর্ব বাংলার অধিকাংশ মানুষ চায় রাষ্ট্রভাষা উর্দু হোক’। 

তারপর ২ মার্চ ফজলুল হক মিলনায়তনে এর প্রতিবাদে এক বৈঠক হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন দুজন নারী। তাদের একজন আনোয়ারা খাতুন ও অপরজন লিলি খান। আনোয়ারা খান তমদ্দুন মজলিসের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন। ১৯৪৮ সালের ২ মার্চ বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে তমদ্দুন মজলিস ও পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ মিলে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে। আনোয়ারা এই সংগ্রাম পরিষদের অন্যতম সদস্য ছিলেন। এ পরিষদ গঠনের বৈঠকে তিনি উপস্থিত ছিলেন। ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ ঢাকাসহ সারা পূর্ব পাকিস্তানে হরতাল পালিত হয়। তিনি  সে সময় আন্দোলনের অর্থ সংগ্রহসহ বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন এবং নারীদের রাজপথে আন্দোলনে নিয়ে আসার ক্ষেত্রেও অগ্রণী ছিলেন। 

আরো পড়ুন:

১৯৫২ সালের ৩১ জানুয়ারি মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর সভাপতিত্বে হওয়া সর্বদলীয় সভায় আনোয়ারা খাতুন সক্রিয় ভূমিকায় ছিলেন। এরপর কাজী গোলাম মাহবুবকে আহ্বায়ক করে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয় । সেই কমিটিতেও আনোয়ারা খাতুন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ’৫২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের উত্তাল দিনগুলোতে রাজপথে সোচ্চার ছিলেন আনোয়ারা। ২২ ফেব্রুয়ারি বিধান-পরিষদের সভায় আনোয়ারা খাতুনের বক্তব্য ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। বিধান সভায় দাঁড়িয়ে তিনি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নুরুল আমীনের উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে প্রকাশ্য সমর্থনের সমালোচনা করেন।  ছাত্রদের ওপর পুলিশি অত্যাচার ও হত্যার প্রতিবাদ করেন। তিনি সেই বক্তৃতায় বলেন, “...পুলিশের লাঠিচার্জে মেয়েরা wounded হয়েছে। আমি তাদের মধ্যে দু’জনার নাম দিচ্ছি। একজন হলো ঢাকা হাইকোর্টের জাস্টিস ইব্রাহিম সাহেবের মেয়ে মিস সুফিয়া ইব্রাহিম। আর একজন হলো মিস রওসন আরা, থার্ড ইয়ার বি. এ.। মেয়েদের total wounded এর সংখ্যা হলো ৮ জন। মন্ত্রিসভা এমন একটা আবহাওয়ার সৃষ্টি করেছেন, যাতে নাকি মেয়েরা পর্যন্ত লাঞ্ছিত হয়েছে। এ সমস্ত ঘটনা যে আমাদের কোথায় নিয়ে যাচ্ছে, তা চিন্তা করে বুঝে উঠতে পারছি না। (সূত্র: East Pakistan Legistative Assembly Proceedings, 22 February 1952)।” 

এই অধিবেশনে আনোয়ারা কয়েকটি প্রস্তাব গ্রহণ করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। প্রস্তাবগুলো হলো: ১. ভাষা আন্দোলন সূত্রে বন্দিদের শর্তহীন মুক্তি; ২. হতাহতদের ক্ষতিপূরণ প্রদান; ৩. হত্যা, নির্যাতন ও অপকর্মের জন্য দায়ী অফিসারদের প্রকাশ্য বিচার করা; ৪. সরকার কর্তৃক অন্যদের উপর নির্যাতনের নীতি বন্ধ করা

আনোয়ারা খাতুন ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনেও জয় লাভ করেন। তাঁর স্বামী ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সহসভাপতি আলী আমজাদ খান। 

লেখক: গবেষক ও গণমাধ্যমকর্মী

তারা//


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়