ঢাকা     শনিবার   ০৬ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২২ ১৪৩১

কবি ফররুখ আহমদের ৪৯ তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

শাহ মতিন টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৪২, ১৯ অক্টোবর ২০২৩  
কবি ফররুখ আহমদের ৪৯ তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

‘রাত পোহাবার কত দেরি পাঞ্জেরি?/এখনো তোমার আসমান ভরা মেঘে?/সেতারা, হেলাল এখনো ওঠেনি জেগে?/তুমি মাস্তলে, আমি দাঁড় টানি ভুলে;/অসীম কুয়াশা জাগে শূন্যতা ঘেরি।/রাত পোহাবার কত দেরি পাঞ্জেরি?’

‘পাঞ্জেরি’ শিরোনামের এই কবিতার স্রষ্টা ফররুখ আহমদ-এর ৪৯ তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৯৭৪ সালের ১৯ অক্টোবর কবি ঢাকার ইস্কাটন গার্ডেনে তার নিজ বাসভবনে ইন্তেকাল করেন। 

ফররুখ আহমদের জন্ম ১৯১৮ সালের ১০ জুন মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার মাঝাইল গ্রামে। তার বাবা সৈয়দ হাতেম আলী ছিলেন একজন পুলিশ ইন্সপেক্টর। ফররুখ আহমদের মায়ের নাম রওশন আখতার।

তিনি খুলনা জিলা স্কুল থেকে ১৯৩৭ সালে ম্যাট্রিক এবং কলকাতার রিপন কলেজ থেকে ১৯৩৯ সালে আই.এ. পাস করেন। এরপর স্কটিশ চার্চ কলেজে দর্শন এবং ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা করেন। 

১৯৪২ সালের নভেম্বর মাসে আপন খালাতো বোন সৈয়দা তৈয়বা খাতুন (লিলি)-এর সঙ্গে ফররুখ আহমদের বিয়ে হয়। তার নিজের বিয়ে উপলক্ষে ফররুখ 'উপহার' নামে একটি কবিতা লেখেন যা 'সওগাত' পত্রিকায় অগ্রহায়ণ ১৩৪৯ সংখ্যায় ছাপা হয়।

ফররুখ আহমদের কর্মজীবন শুরু হয় কোলকাতায়। ১৯৪৩ সালে আই.জি.প্রিজন অফিসে, ১৯৪৪ সালে সিভিল সাপ্লাইতে এবং ১৯৪৬ সালে জলপাইগুড়িতে একটি ফার্মে চাকরি করেন। ১৯৪৫ সালে তিনি মাসিক 'মোহাম্মদী'-র ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। তবে শেষ পর্যন্ত স্থায়ীভাবে চাকরি করেন ঢাকা বেতারে। প্রথমে অনিয়মিত হিসেবে এবং পরে নিয়মিত স্টাফ আর্টিস্ট হিসেবে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন।

তার উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- ‘সাত সাগরের মাঝি’, ‘সিরাজাম মুনীরা’, ‘নৌফেল ও হাতেম’, ‘মুহূর্তের কবিতা’, ‘ধোলাই কাব্য’, ‘হাতেম তায়ী’, ‘নতুন লেখা’, ‘হাবিদা মরুর কাহিনী’, ‘সিন্দাবাদ’, ‘দিলরুবা’ ইত্যাদি।

ফররুখ-এর অনেক পরিচয়। কেউ বলেন- রেনেসাঁর কবি, কেউ বলেন মানবতার কবি, কেউ ফুল-পাখিদের কবি। আসলে তিনি ছিলেন ছোট-বড় সবার কবি। শিশুদের জন্য তিনি লিখেছেন অনেক মজার মজার ছড়া কবিতা, গান, গল্প ও নাটক-নাটিকা। ‘পাখির বাসা’, ‘হরফের ছড়া’, ‘ছড়ার আসর’, ‘নয়া জামাত’, ‘চিড়িয়াখানা’, ‘কাফেলা’, ‘আলোকলতা’, ‘খুশীর ছড়া’, ‘ছড়াছবির দেশে’, ‘পাখির ছড়া’, ‘রঙমশাল’ ইত্যাদি তার লেখা উল্লেখযোগ্য শিশুতোষ গ্রন্থ।

ফররুখ আহমদ কিছু সনেট রচনারও করেছেন তার রচনায় ধর্মীয় ভাবধারার প্রভাব দেখা যায়। ফররুখ আহমদের ‘হাতেম তা’য়ী’ কাব্যটি অমিত্রাক্ষর ছন্দে রচিত এক অমূল্য সম্পদ। ‘হাতেম তা’য়ী’ কাব্যটিকে অনেকে ‘মহাকাব্য’ বলে আখ্যায়িত করেন। 

কবি সাহিত্যে তার অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। ১৯৬০ সালে ফররুখ আহমদ বাংলা একাডেমি পুরস্কার, ১৯৬৫ সনে প্রেসিডেন্ট পদক ‘প্রাইড অব পারফরমেন্স’ এবং ১৯৬৬ সালে পান আদমজী পুরস্কার ও ইউনেস্কো পুরস্কার। ১৯৭৭ ও ১৯৮০ সালে তাকে যথাক্রমে মরণোত্তর একুশে পদক ও স্বাধীনতা পদক দেওয়া হয়।

/টিপু/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়