ঢাকা শহরে যেভাবে এলো রিকশা
ছবি: ইন্টারনেট
প্রাক মুঘল যুগে ঢাকা শহর পরিচিত ছিল ‘বাহান্ন বাজার তিপান্ন গলি’ হিসেবে। মুঘল আমল, ব্রিটিশ আমল আর পাকিস্তান আমল পর্যন্ত বলা হতো মসজিদের শহর ঢাকা। সেই মসজিদের শহর রুপ নিয়েছে রিকশার শহর হিসেবে।
ইদানীং বলা হয় যানযটের শহর। যানযটের সাথে রিকশার আধিক্য ওতপ্রোতভাবে জড়িত। প্রতিদিন ঢাকায় চলে প্রায় ১০ লাখের মতো রিকশা। এ গলি ও গলি যেতে রিকশার চেয়ে ভালো বাহন আর নেই ঢাকায়।
নগর জীবনের কবি। শামসুল রাহমান। তিনি ‘আমার শহর’ কবিতায় লিখেছেন,
‘ঢাকা শহর, আমার শহর,
সব শহরের সেরা।
ধুলো দিয়ে মোড়া এবং
রিকশা দিয়ে ঘেরা।’
রিকশার শহর হিসেবে পরিচিত ঢাকায় কিভাবে এলো রিকশা? ঢাকা কিভাবে হয়ে উঠলো রিকশার শহর। আসুন জেনে নিই সেই ইতিহাস।
ইতিহাস ঘেটে জানা যায়, ১৯৩৬ বা ১৯৩৭ সালে মৌলভীবাজারের দুজন উদ্যোগী লোক পশ্চিমবঙ্গের ফরাসি উপনিবেশ থেকে দুইখানা রিকশা আনলেন। ঢাকা শহরে এ সর্বপ্রথম রিকশা এসে গেলো। দুইখানা সাইকেল রিকশা। এই দুই রিকশার দাম পড়েছিল ১৮০ টাকা। এই ব্যক্তি কারা তাদের নাম পরিচয় সেভাবে জানা না গেলেও জানা যায় এদের মধ্যে একজন ছিলেন ডাক্তার। মৌলভিবাজারে মাংসপট্টির সামনেই ছিল তার ডিসপেনসারি। ঢাকায় রিকশা চালুর ব্যাপারে তারাই পথপ্রদর্শক।
ব্যবসা করার উদ্দেশে রিকশা আনলেও প্রথমদিকে ব্যবসাটা সুখকর হয়নি। ব্যবসাটা জমাতে বেশ বেগ পেতে হয় তাদের। অন্যের ঘাড়ে চেপে চলতে এখানকার লোকেরা প্রথমে লজ্জা পেতো। কেউ রিকশা চেপে চললে রাস্তার ছেলেরা হল্লে করে পিছনে ছুটতো।
মৌলভীবাজারের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে অনেকেই রিকশা আমদানি করতে থাকেন। স্থানীয় মুসলিম ও স্থানীয় বসাকরা এ বিষয়ে সবচেয়ে উদ্যোগী ছিল। একেবারে প্রথম দিকে যারা রিকশাচালকের বৃত্তি গ্রহণ করেছিলেন তারা হলেন ফরসাগঞ্জ লেনের সোনা মিয়া মালাকারটোলার হীরেন্দ্র সাহাসহ অনেকেই। সে সময়ে রিকশাচালক দিনে ৩ টাকা থেকে সাড়ে তিন টাকা উপার্জন করতেন। সদরঘাট থেকে চাকবাজার যেতে মাথা প্রতি লাগতো দুই আনা করে।
শুরুর দিকে ঢাকায় কলকাতার মতো টানা রিকশার প্রচলন অল্প দিন চললেও সাইকেল রিকশার আড়ালে হারিয়ে যায় সেই টানা রিকশা। ঢাকার মিস্ত্রীরা আস্তে ধীরে রিকশা বানানোতে হাত দিলো। এ বিষয়ে সুনাম রয়েছে ঢাকার রিকশা মিস্ত্রীদের। যেসব মিস্ত্রীরা আগে সাইকেল সারাইয়ের কাজ করতেন তারাই পরর্বতীতে এ কাজ শুরু করেন। স্থানীয় মুসলিম ও বসাকরা এই কাজে পারদর্শী ছিলেন। অল্প সময়েই তারা নতুন জিনিস আয়ত্ব করে নিতেন। বিশেষ করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় রিকশা তৈরির কাজ ব্যাপকভাবে চলতে থাকে। কারণ সে সময় বাইরে থেকে রিকশা আনা সম্ভব ছিলো না। রিকশা মিস্ত্রী হিসেবে প্রথমযুগে যাদের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য তারা হলেন গোপাল মিস্ত্রী, রাজেন্দ্র বসাক ও কাসেম মিয়া। রিকশায় বাহারি রঙ করে আকর্ষণীয় করে তুলতে শুরু হয় পেইন্টিংয়ের কাজ।
ঢাকা শহরের অলি গলিতে ঘুরার স্বাদ নিতে চাইলে রিকশায় হতে পারে সেরা বাহন। রিকশায় ঘুরার আনন্দ অন্যরকম।
তথ্যসূত্র:
১। ঢাকা পাঠা, আনিস রহমান
২। ঢাকার ইতিকথা-সত্যেন সেন
/এসবি/