ঢাকা     শুক্রবার   ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  পৌষ ১২ ১৪৩১

নৌকা প্রতীকের ৭০ বছর

ইমাম মেহেদী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:০৫, ৮ জানুয়ারি ২০২৪  
নৌকা প্রতীকের ৭০ বছর

আবহমান গ্রামবাংলার চিরচেনা নদীপথের অন্যতম বাহন হলো নৌকা। নৌকা যেমন দুই পাড়ের জনমানুষের মধ্যে সেতুবন্ধন করে ঠিক তেমনি সৌর্ন্দযের অনন্য প্রতীক। নৌকা নিয়ে আবহমান গ্রমাবাংলায় বহু গান, কবিতা রচিত হয়েছে। পাল তোলা সারি সারি নৌকা নিয়ে বাঙালির বহু ইতিহাস ঐতিহ্য ও গান রয়েছে। রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘কাগজের নৌকা’ কবিতায় লিখেছেন, 
‘ছুঁটি হলে রোজ ভাসাই জলে
কাগজ- নৌকাখানি।
লিখে রাখি তাতে আপনার নাম
লিখি আমাদের বাড়ি কোন্ গ্রাম
-----------------------
আমার নৌকা সাজাই যতনে
শিউলি বকুলে ভরি।’

পূর্ববাংলার রাজনীতিতে নৌকা প্রতীকের ইতিহাসও পুরানো। যুক্তফ্রন্ট নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রথমে ভোটের লড়াই শুরু করে ১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে। সেই সময় যুক্তফ্রন্টের সবচেয়ে বড় শরিক দল ছিল আওয়ামী মুসলিম লীগ। ১৯৫৪ সালের ৮ থেকে ১২ মার্চ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত পূর্ব পাকিস্তান পরিষদের নির্বাচনে ২৩৭টি মুসলিম আসনের মধ্যে যুক্তফ্রন্টের প্রার্থীরা ২২৩টি আসনে বিজয়ী হন। এর মধ্যে ১৪৩টি পেয়েছিল মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী মুসলিম লীগ, ৪৮টি পেয়েছিল শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের কৃষক শ্রমিক পার্টি। নেজামী ইসলাম পার্টি জয়ী হয় ২২টি আসনে। এছাড়া গণতন্ত্রী দল ১৩টি এবং খেলাফত-ই-রাব্বানী দুটি আসনে জয়ী হয়। আওয়ামী মুসলিম লীগ, কৃষক শ্রমিক পার্টি, পাকিস্তান গণতন্ত্রী দল ও পাকিস্তান খেলাফত পার্টির সঙ্গে মিলে ১৯৫৩ সালের ৪ ডিসেম্বর যুক্তফ্রন্ট গঠন করা হয়। শরিক হিসেবে যুক্তফ্রন্টে আরও ছিল মাওলানা আতাহার আলীর নেজামে ইসলাম পার্টি, বামপন্থী গণতন্ত্রী দলের নেতা ছিলেন হাজী মোহাম্মদ দানেশ এবং মাহমুদ আলী সিলেটী। (প্রথম আলো, ০৬ ডিসেম্বর, ২০১৮)।

হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও মওলানা ভাসানীর আওয়ামী মুসলিম লীগ, শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের কৃষক শ্রমিক পার্টি, মাওলানা আতাহার আলীর নেজামে ইসলাম পার্টি ও হাজী মোহাম্মদ দানেশের গণতন্ত্রী দল মিলে ১৯৫৩ সালের ৪ ডিসেম্বর গঠন করা হয় যুক্তফ্রন্ট। এই যুক্তফ্রন্টই ১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে প্রথম নৌকা প্রতীক নিয়ে ভোটের লড়াই শুরু করে। তবে নৌকার আগে লাঙল প্রতীক চেয়েছিল যুক্তফ্রন্ট। কিন্তু নির্বাচন কমিশন যুক্তফ্রন্টকে লাঙ্গল দেয়নি। কারণ লাঙ্গল ছিল শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের অবিভক্ত ভারতের কৃষক প্রজা পার্টির প্রতীক। পরে নৌকাকেই প্রতীক হিসেবে বেছে নেয় যুক্তফ্রন্ট। কে বা কারা নৌকা প্রতীক নির্বাচিত করেছিল তার ইতিহাস অনেকটা অজানা। (কালেরকণ্ঠ, ১২ জানুয়ারি, ২০২০)।

আরো পড়ুন:

পরবর্তীতে রাজনৈতিক সমীকরণে যুক্তফ্রন্ট ভেঙে গেলে জোটের সব থেকে বৃহৎ রাজনৈতিক দল ও বেশি আসনে বিজয়ী হিসেবে নৌকা প্রতীক আওয়ামী মুসলিম লীগের পক্ষেই থেকে যায়। ১৯৫৭ সালে দলের নাম থেকে ‘মুসলিম’ বাদ যাওয়ার পরও আওয়ামী লীগের পক্ষে নৌকা প্রতীক থেকে যায়। পরবর্তীতে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করতে আওয়ামী লীগকে আরও অপেক্ষা করতে হয় আরো তেরো বছর। পাকিস্তানের ১৯৭০ সালের নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নৌকা প্রতীক নিয়ে রাজনৈতিক দল হিসেবে অংশগ্রহণ করে সাধারণ পরিষদে ১৬০ এবং প্রাদেশিক পরিষদে ২৮৮ আসনে বিজয়ী হয়। নৌকা প্রতীকে রয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীকার থেকে স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাস।

স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭৩ সালের সাধারণ নির্বাচনেও বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক ছিলো নৌকা। এভাবেই নৌকা প্রতীকে আছে আওয়ামী লীগ। যুক্তফ্রন্ট হয়ে নৌকা প্রতীক এখন ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বাংলাদেশের আওয়ামী লীগের পরিচয় ও নির্বাচনের প্রতীক হিসেবে জনসাধারণের কাছে সমাদৃত হয়েছে। এই নৌকা প্রতীকের সাথে রয়েছে বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার ইতিহাস।

সদ্য ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়ে গেল স্বাধীন বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নৌকা প্রতীকের মাধ্যমে নির্বাচন করে বৃহত্তম দল হিসেবে বিজয় নিশ্চিত করলো। ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন থেকে ২০২৪ সালের প্রায় ৭০ বছরের ইতিহাসে পা রাখলো নৌকা প্রতীক। 

লেখক: লেখক ও গবেষক

/এসবি/


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়