ঢাকা     বুধবার   ০৩ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৯ ১৪৩১

দেখেছি টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া 

সাজ্জাদ হোসেন চিশতী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:০১, ২০ জানুয়ারি ২০২৪  
দেখেছি টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া 

আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা ঢাকায়। কর্মজীবনের ব্যস্ততার মধ্যেও ঘুরে বেড়িয়েছি এক জেলা থেকে অন্য জেলায়। দেখেছি পাহাড়-পর্বত, সমুদ্র। মুগ্ধ হয়েছি বিভিন্ন জেলার নানান সংস্কৃতি দেখে।উপভোগ করেছি বিভিন্ন জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার। এভাবে সফর করতে করতে ৬৪ জেলার পাশাপাশি ভ্রমণ করেছি বিশ্বের ২৮টি দেশ। 

সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত থাকায় কাজের সুবাদে প্রায়ই রাজধানীর বাইরে যেতে হতো। এ ছাড়া জেলা ও বিভাগীয় শহরগুলোতে প্রতিনিধি সম্মেলনে যেতাম। এভাবে যেতে যেতে একসময় দেখলাম আমার অনেকগুলো জেলা সফর করা হয়ে গেছে। তারপর ইচ্ছে হলো একেক জেলার সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও খাবারের স্বাদ নেওয়ার। এভাবে যেতে যেতে একদিন খেয়াল করলাম আমার ৬২ জেলা ঘোরা শেষ। বাকি ছিল শুধু কুষ্টিয়া ও মেহেরপুর। একদিন এই দুটি জেলাও ঘুরে দেখলাম। এভাবে আমার ৬৪ জেলায় ভ্রমণ সম্পন্ন হলো। 

২০১১-২০২৩ সালের ভেতর আমি সবগুলো জেলা ঘুরে দেখেছি। কর্মজীবনের দায়িত্বের জন্য অন্য জেলায় যাওয়া আর পারিবারিক ট্যুর মিলে সর্বমোট ১২ বছর সময় লেগেছে। তবে আমার সফরসঙ্গী কোনো বন্ধুবান্ধব ছিল না। প্রাতিষ্ঠানিক ও পারিবারিক সফরটাই বেশি ছিল। সেই হিসেবে আমার সহকর্মী ও পরিবারকেই সফরসঙ্গী হিসেবে বেশি পেয়েছি। আমার মৃত মা, ভাই, বোন ও সহধর্মিণীকে নিয়েও অনেক জেলায় ঘুরেছি। যেমন উত্তরবঙ্গ পুরোটাই শীতের মাঝে পারিবার  নিয়ে ঘুরে শেষ করেছি। খাবার নিয়ে যেমন বিড়ম্বনা হয়েছে তেমনই নতুন নতুন অভিজ্ঞতাও হয়েছে। 

আমার সব থেকে সুন্দর স্মৃতি হচ্ছে সিলেটে। ইচ্ছে ছিল হযরত শাহজালাল (রাঃ) এর মাজার জিয়ারত করে, আল্লাহর কাছে দাম্পত্য জীবনে সুখের জন্য দোয়া চাইবো। তাই বিয়ের একদিন পরেই নববধূকে সঙ্গে নিয়ে সেখানে চলে যাই। খুব ভোরবেলা পৌঁছে গিয়েছিলাম। ঘড়ির কাঁটায় তখন ভোর ৪টা। চারদিকে তখনও ঘুটঘুটে অন্ধকার। গা ছমছমে পরিবেশ। গিয়ে শুনি ৬টার আগে প্রধান ফটক খুলবে না। তবুও আমরা সেখানেই অবস্থান করি। ৬টায় দরজা খুলল। আমরা মাজার জিয়ারত করে হোটেলে আসি।

আমার সবচেয়ে প্রিয় জেলা কক্সবাজার। ২০০৫ সালে আমি প্রথম কক্সবাজার যাই। ২০০৫-২০২৩ সাল পর্যন্ত মোট ৬৭ বার কক্সবাজার গিয়েছি। যতবার সেখানে যাই মনে হয় নতুন কোন ঠিকানায়, নতুন পরিবেশে এসেছি।

আমার কাছে উত্তরবঙ্গের মানুষের আন্তরিকতা বেশি মনে হয়েছে। তারা খুবই মিশুক। তাদের খাবারও সুস্বাদু। সহজ-সরল ও সুন্দর মনের মানুষ তারা। আমি সংবাদকর্মী হিসেবে আমার কর্মজীবন ভীষণ উপভোগ করি। জেলা বা বিভাগীয় সম্মেলনে যখন যাই অনেক প্রতিনিধিরা দেখা করতে আসে। তাদের সঙ্গে আলাপ করে ভালোই লাগে। তাদের জেলা-উপজেলা সম্পর্কে নতুন কিছু জানা, তাদের চাওয়া-পাওয়া, আবেগ, উচ্ছ্বাস আমাকে খুব টানে। ব্যক্তিগত সফর থেকেও কর্মময় জীবনের ঘোরাঘুরি আমি বেশি উপভোগ করি।

আমি এখন পর্যন্ত বিশ্বের ২৮টি দেশ ভ্রমণ করেছি। আমার কাছে সব থেকে বেশি ভালো লেগেছে মক্কা-মদিনা। কেউ যদি আমাকে জিজ্ঞেস করেন- আপনি কতবার সেখানে যেতে চান? আমি বলবো বারবার মক্কা-মদিনার মাটিতেই যেতে চাই। এটা ভ্রমণের জন্য হোক বা ধর্মীয় কারণে কিংবা আমার ওমরার জন্যই হোক না কেন। মক্কা-মদিনার পর আমার কাছে সবচেয়ে ভালো লেগেছে ভারত। সময় পেলেই আমি সেখানে ছুটে যাই। কারণ তাদের একেকটি প্রদেশ একেকটি দেশের মতো। যেমন মুম্বাইতে একরকম লাগবে, দিল্লি মনে হয় আরেক রকম। দুটি প্রদেশের ভাষা হিন্দি হলেও উচ্চারণে পার্থক্য আছে। আবার কলকাতায় গেলে বাংলা ভাষা শুনে ভালো লাগবে। আমাদের বাংলার সাথে মিল আছে। ঘুরে দেখার মতো পাহাড়-নদী অনেক কিছু আছে। একেকটি প্রদেশের একেক রকম সৌন্দর্য। 

দার্জিলিংয়ের পাহাড় ভালো লাগবে। শিমলা-মানালির পাহাড় দেখেও মুগ্ধ হয়েছি। আর কাশ্মীরের সৌন্দর্যটা দুই রকম। একটা হচ্ছে শীতকালে, আরেকটা গরমকালে। গরমকালে পুরোটা সবুজ, শীতকালে পুরোটা বরফে ঢাকা সাদা চাদরের মতো। সব মিলিয়ে মক্কা-মদিনার পর আমার কাছে ভারত ভালো লাগে।

কিছুদিন আগে আমার গর্ভধারাণী মা মারা গেছেন। তবে আলহামদুলিল্লাহ আমার মা মারা যাওয়ার আগে মাকে নিয়ে ওমরা হজ্ব পালন করেছি। আমার মায়ের বয়স যখন ৬২ বছর ঠিক ওই সময় আমি আমার মাকে নিয়ে ঢাকা থেকে তেঁতুলিয়া তারপর তেঁতুলিয়া থেকে টেকনাফ আবার টেকনাফ থেকে ঢাকা এসেছি। ১৮৪৫ কিলোমিটার লং জার্নি আমি এবং আমার মা খুব উপভোগ করেছিলাম।

তারা//

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ