ঢাকা     সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  পৌষ ৮ ১৪৩১

জাহ্নবী চৌধূরাণীর সন্তোষ ভাসানীর গল্প বলে

এস এম জাহিদ হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:০৯, ৬ মার্চ ২০২৪   আপডেট: ০৯:১৪, ৬ মার্চ ২০২৪
জাহ্নবী চৌধূরাণীর সন্তোষ ভাসানীর গল্প বলে

শ্রীমতি জাহ্নবী চৌধূরাণীর জমিদারিত্বের প্রতীক হয়ে প্রায় ২০০ বছর ধরে দাঁড়িয়ে রয়েছে সন্তোষ জাহ্নবী উচ্চ বিদ্যালয়। এটি ১৮৭০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ব্রিটিশ স্থাপত্য নৈপূণ্যে তৈরি এই স্কুলের নিজস্ব বৈশিষ্ট হচ্ছে- এর কোনো জানলা নেই, ৯৯টি দরজা রয়েছে। তবে বেশ কয়েকটি দরজা স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবু আলোর অভাব হয় না। স্কুল ভবনের দৈর্ঘ্য প্রায় তিনশো ফুট। এর দেয়াল ২২ ইঞ্চি পুরু। ছাদের উচ্চতা ২২ ফুট ।

জানা যায়, জাহ্নবী চৌধুরাণী মাত্র ১৩ বছর বয়সে বিধবা হয়েছিলেন। স্বামী গোলকনাথ রায় চৌধুরীর মৃত্যুর পরে তিনি ছয় আনা জমিদারির মালিকানা লাভ করেন। এরপরে তৎকালীন বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার দ্বিতীয় ইংরেজি (এমই) বিদ্যালয় হিসেবে সন্তোষ জাহ্নবী উচ্চ বিদ্যালয় স্থাপন করেন। টাঙ্গাইলের যে কয়টি পুরনো-ঐতিহ্যবাহী স্কুল রয়েছে সন্তোষ উচ্চ বিদ্যালয় তার মধ্যে একটি। সেই হিসেবেই একদিন স্কুলটি দেখতে যাওয়া। 

সন্তোষে গিয়ে দেখে এলাম এই স্কুলের ঐতিহ্যবাহী ভবন,  কাগমারী সম্মেলনের স্মৃতি বিজড়িত স্থান আর মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর মাজার। 

আরো পড়ুন:

ভাসানীর স্বপ্ন পুরন হওয়া— না হওয়ার সাক্ষী এই সন্তোষ। তিনি ১৯৫৭ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কাগমারী সাংস্কৃতিক সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন।  এর অংশ হিসেবে ১৯৭০ সালের ৮ সেপ্টেম্বর ‘আমার পরিকল্পনায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়’ শিরোনামে লিখিত নিবন্ধের মাধ্যমে তার প্রস্তাবিত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের চূড়ান্ত প্রস্তাব করেন। দীর্ঘ প্রচেষ্টার পরেও এখানে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে যেতে পারেন নি। তবে মাওলানা ভাসানীর মৃত্যুর পর ১৯৯৯ সালে এই মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। 

মাওলানা ভাসানীর রাজনৈতিক স্মৃতি স্বরূপ সন্তোষে রয়েছে একটি ট্রাকটর। যা তিনি ১৯৬৭ সালে চিন সফর করাকালে রাজনৈতিক নেতা মাও সে তুঙ— এর কাছ থেকে উপঢৌকন হিসেবে পেয়েছিলেন। ট্রাকটরটি সযত্নে রাখা আছে।

ভক্ত, অনুসারীরা যত্নে রেখেছেন মাওলানা ভাসানী এবং তার স্ত্রী বেগম আলেমা খাতুন ভাসানীর মাজারও । ভাসানীর ভক্তরা সরগরম রাখে এই মাজার প্রাঙ্গন। ভক্তিতে, শ্রদ্ধায় স্মরণ করা হয় ভাসানীকে।

জানা যায়, মাওলানা ভাসানীর জীবদ্দশায়ও ওরশ পালন করা হতো। এখনও অনেকে আছেন, যারা মনস্কামনা পুরন করার জন্য ভাসানীর মাজারে ওরশ করেন, দান করেন এবং মিলাদ দেন।  আগরবাতি জ্বালিয়ে রাখার ফলে মাজার প্রাঙ্গনে ছড়িয়ে থাকে পবিত্র ও আধ্যাত্মিক আবহ। অনেকে দুইহাত তুলে দোয়া করেন। টাঙ্গাইলের উপকণ্ঠেই এই ঐতিহ্যবাহী সন্তোষ। মূল শহর থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরত্বে। এটি এখন টাঙ্গাইল পৌরসভার মধ্যেই পরেছে। এখানে অনেকেই ঘুরতে আসেন। বিশেষ উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় মাওলানা ভাসানীর ভক্ত ও মুরীদদের। 

মাওলানা ভাসানীর মাজারটি একটি কমিটি পর্যায়ক্রমে দেখাশোনা করেন। এখানে প্রবেশের জন্য কোনো টাকা পয়সা লাগে না। যেকোন সময় মাজারে প্রবেশ করা যায়। তবে বিকেল পাঁচটার আগে যাওয়াই ভালো।

/লিপি

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়