ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  পৌষ ১০ ১৪৩১

পৃথিবী জুড়ে নারীর গৌরবমূলক ইতিহাস ও অর্জনের সময়রেখা

অদিতি ফাল্গুনী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:৩৬, ৮ মার্চ ২০২৪   আপডেট: ১২:৩৭, ৯ মার্চ ২০২৪
পৃথিবী জুড়ে নারীর গৌরবমূলক ইতিহাস ও অর্জনের সময়রেখা

খ্রিষ্টপূর্ব ৬৩০-৬১২ অব্দ: গ্রিসের লেসবস দ্বীপে প্রাচীন গ্রিক নারী কবি স্যাফোর জন্ম। নারী ও পুরুষ—উভয় লিঙ্গের মানুষের জন্যই প্রেম ও আবেগই স্যাফোর কবিতার কেন্দ্রবিন্দু। আজকের যুগের ‘লেসবিয়ান’ শব্দটি স্যাফোর জন্মস্থানের নাম থেকে গৃহীত। 

খ্রিষ্টপূর্ব ৬৯ অব্দ: ক্লিওপেট্রার জন্ম। তিনিই ছিলেন মিশরের শেষ ’ফারাও।’ তার মৃত্যুর পর মিশর রোমক সাম্রাজ্যের নিছকই এক প্রদেশ হয়ে ওঠে। 

খ্রিষ্টপূর্ব ৬০-৬১ অব্দ: বৌডিকা, ইসেনির রাণী (নরফোকের একটি কেল্টিক জনগোষ্ঠি) রোমের গভর্নরের বিরুদ্ধে একটি বিদ্রোহ সংঘটিত করেন এবং পরাজিত হওয়ার আগে কোলচেস্টার এবং লন্ডন জ্বালিয়ে দেন। পরাজয়ের পর বৌডিকা ও তার কন্যারা আত্মহত্যা করেন। 

খ্রিষ্টপূর্ব ২৪০ অব্দ: জেনোবিয়া ছিলেন তৃতীয় শতকের এক সিরীয় রাণী, যিনি রোমক সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে একটি বিখ্যাত বিদ্রোহ সংঘটিত করেন। ২৬৯ অব্দ নাগাদ তিনি মিশর জয় করেন এবং উৎখাত হয়ে নির্মূল হওয়ার আগ পর্যন্ত পাঁচ বছর তিনি মিশর শাসন করেন। 

৯১২ খ্রিষ্টাব্দ: রাজা আলফ্রেডের জ্যেষ্ঠ কন্যা এ্যাথেলফ্লেড ভাইকিংদের সঙ্গে এক যুদ্ধে তার স্বামীর মৃত্যুর পর একজন রাজনৈতিক ও সামরিক নেত্রী হয়ে ওঠেন। বাবার মৃত্যুর পর তিনি সে সময় মার্সিয়া নামে পরিচিত দেশের মধ্যবর্তী এলাকাগুলো শাসন করতে যান। এ্যাথেলফ্লেড দুর্দান্ত সমরকুশলী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। 

৯৬০ খ্রিষ্টাব্দ: গুদিত ছিলেন আফ্রিকীয় রাণী, যিনি গোটা ইথিওপিয়ায় প্রবল তাণ্ডব চালিয়ে নানা সৌধ ও গির্জা ধ্বংস করেন। ক্ষমতাসীন রাজবংশকে বিতাড়িত করেন এবং ইথিওপিয়ার তদানীন্তন সম্রাটকে হত্যার পর তিনি সিংহাসন দখল করেন এবং ৪০ বছর রাজত্ব চালান। 

১১৪১ খ্রিষ্টাব্দ: রোমক সাম্রাজ্যের সম্রাজ্ঞী এবং ইংল্যান্ডের রাজা হেনরি প্রথমের কন্যা মাতিলদার বিতর্কিত শাসন। মাতিলদার বাবা তার মেয়েকেই সিংহাসনের উত্তরাধিকারী ঘোষণা করে গেলেও মাতিলদার এক তুতো ভাই স্টিফেন পরে সিংহাসন দখল করেন। মাতিলদা ও স্টিফেনের ভেতরে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর কারাগারে বন্দি হন। পরে কারাগার থেকে পালিয়ে বরফের ওপর একটি সাদা পোশাকে পালিয়ে যাওয়ার জন্য মাতিলদা আজো বিখ্যাত হয়ে আছেন। ১১৫৩ সালে স্টিফেন মাতিলদার ছেলে হেনরিকে তার উত্তরাধিকারী হিসেবে ঘোষণা করতে রাজি হন।

১৪১২ সালের ৬ জানুয়ারি জোয়ান অফ আর্ক (সন্ত, সামরিক নেতা, রহস্যময়ী) জন্মগ্রহণ করেন। ১৪৩১ সালে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের মধ্যবর্তী শত বর্ষব্যাপী যুদ্ধে ফ্রান্সের রাজাকে সিংহাসনে অধিষ্ঠিত করতে জোয়ানের সাহায্যের ১৯ বছর পর তাকে খুঁটিতে বেঁধে পোড়ানো হয়। 

১৪৮০ খ্রিষ্টাব্দ: ঠিক এই সময়েই ইউরোপে মধ্যযুগের ডাইনি হত্যা শুরু হয়। ১৪৮০ থেকে ১৭০০ সাল নাগাদ ৪০ হাজার থেকে ১ লাখ নারীকে ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় ডাইনি বিদ্যাচর্চার বিচার প্রক্রিয়ায় হত্যা করা হয়। 

১৫৫৩ (১০-১৯ জুলাই) ক্যাথলিক রাজকুমারী মেরীর বৈরীরা লেডি জেন গ্রে-কে সিংহাসনে বসালে তিনি নয় দিন রাজত্ব করেন। মাত্র ১৬ বা ১৭ বছর বয়সে তাকে হত্যা করা হয়। 

১৫৫৩-১৫৫৮: রাণী প্রথম মেরীর রাজত্বকাল। 

১৫৫৮-১৬০৪: রাণী প্রথম এলিজাবেথের রাজত্বকাল। 

১৬২৫ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি ’লা লিবারেজিওন দ্যু হু¹িয়েরো’ নামে প্রথম কোনো নারী রচিত অপেরা ইতালির ফ্লোরেন্সে প্রথম মঞ্চায়িত হয়। এই অপেরার কম্পোজার ছিলেন ৩৮ বছর বয়স্ক ফ্রান্সেস্কা কাচ্চিনি— এক ইতালীয় নারী কম্পোজার, গায়িকা, বীণাবাদিকা, কবি ও সঙ্গীতের শিক্ষিকা। সে সময়ের বিখ্যাততম এবং সবচেয়ে প্রভাবশালী ইউরোপীয় নারী কম্পোজারদের তিনি ছিলেন একজন, যিনি তার জীবদ্দশায় নিজের রচিত কাজের মোট ১৬টি মঞ্চায়ন দেখে যেতে পেরেছেন। 

১৬৪৫: ম্যাথিউ হপকিন্স, ’ডাইনি অনুসন্ধানকারী জেনারেল’ হিসেবে পরবর্তী সময়ে কুখ্যাত এই ব্যক্তি এলিজাবেথ ক্লার্ক নামের এক আশি বছরের, মাত্র একটি পা থাকা নারীকে, ডাইনিবিদ্যা চর্চার অপরাধে গ্রেপ্তার করেন। এসেক্সেও ম্যাননিংট্রিতে তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়। 

১৬৮৯-১৬৯৪: রাণী দ্বিতীয় মেরী এবং উইলিয়াম অব অরেঞ্জের যৌথ শাসনকাল। 

১৭০২-১৭১৪: রাণী এ্যানের শাসনকাল। ১৭০৭ সালের ’অ্যাক্ট অব ইউনিয়ন’ তাকে গ্রেট ব্রিটেনের রাণী হিসেবে নির্বাচিত করে। 

১৭৯২ সালে মেরির ওলস্ট্যানক্র্যাফট ’আ ভিন্ডিকেশন অব দ্য রাইটস অব ওম্যান’ প্রকাশ করেন। 

১৮০৫ সালে মেরি সিকোলের জন্ম। জ্যামাইকায় জন্ম নেওয়া মেরির মা ছিলেন জ্যামাইকান নার্স, যিনি যুদ্ধে আহত, অচল সৈন্যদের জন্য একটি বোর্ডিং হাউস খুলেছিলেন। মেরির বাবা নিজেই ছিলেন স্কটিশ সৈনিক। মায়ের কাছ থেকে সেবিকা হিসেবে প্রশিক্ষণ লাভের পর মেরি নিজেই জ্যামাইকায় অসুস্থ সৈন্যদের জন্য একটি অতিথিশালা খোলেন। কিন্তু, ইউরোপে যখন ’ব্ল্যাক সী’র চারপাশে ক্রিমিয় যুদ্ধ শুরু হয়, মেরি তখন যুদ্ধে সেবিকা হিসেবে কাজ করতে মনস্থির করেন। কিন্তু, ব্রিটিশ ওয়্যার অফিস’ তার সেবা গ্রহণের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করলে সিকোলে নিজেই তার অতিথিশালা স্থাপন করেন, যেখানে যুদ্ধে অসুস্থ সৈনিকেরা কিছুদিন বিশ্রাম গ্রহণের মাধ্যমে ক্রমে সুস্থ হয়ে ওঠেন। মেরি এ সময় আহত সৈনিকদের সেবা করার জন্য আগুনে জ্বলতে থাকা রণাঙ্গনগুলো পরিদর্শনও করে ’মাদার সিকোলে’ নামে পরিচিতও হয়ে ওঠেন। তার খ্যাতি ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের খ্যাতির প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠে। 

১৮১৬ সালের ৮ জানুয়ারি সোফি জর্মেইন ফরাসী বিজ্ঞান একাডেমি কর্তৃক ’কম্পনের গণিত’ বিষয়ক কাজের জন্য ’গ্র্যান্ড প্রাইজ’ লাভ করেন। সোফির এই কাজই আজকের দিনের আকাশচুম্বী অট্টালিকা নির্মাণের ভিত্তি। 

১৮৩৭-১৯০১: মহারাণী ভিক্টোরিয়ার শাসনকাল। 

১৮৬৭: জন স্টুয়ার্ট মিল সংসদে উপস্থাপিত তার এক আবেদনে ’রিফর্ম অ্যাক্ট-১৮৬৭’-তে নারীর ভোটাধিকার অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আবেদন জানান।

১৮৭৩ সালে মার্গারেট বন্ডফিল্ড জন্মগ্রহণ করেন। ’জাতীয় অবসর ভাতা পরিষদ’ বা ’ন্যাশনাল পেনশন্স কমিটি’র সদস্য হিসেবে তিনি পেনশন বা অবসরভাতার জন্য প্রচার চালান, যার ফলে ১৯০৮ সালে ’ওল্ড এইজ পেনশন অ্যাক্ট’ বা ’বৃদ্ধ বয়সের অবসর আইন’ প্রণীত হয়। এটি পৃথিবীতে প্রথম পেনশন-বিষয়ক আইন। 

১৮৭৯ সালের ৩০ মে ভানেসা বেল জন্মগ্রহণ করেন, যিনি বিশ শতকের ব্রিটিশ প্রতিকৃতি এবং ভূ-চিত্র অঙ্কণের অন্যতম প্রধান পথিকৃৎ ছিলেন।

১৮৮০ সালে মেরি ম্যাকআর্থার জন্মগ্রহণ করেন। মেয়েদের ভোটাধিকারের লক্ষ্যে অক্লান্ত প্রচারণা চালান এবং একইসাথে যুদ্ধবিরোধী প্রচারণায়ও তিনি অংশ নিয়েছিলেন। 

১৮৮২ সালের ২৫ জানুয়ারি লেখক, প্রাবন্ধিক, প্রকাশক এবং ছোটগল্প রচয়িতা ভার্জিনিয়া উলফ জন্মগ্রহণ করেন। বিশ শতকের আধুনিকতাবাদী সাহিত্যিকদের অন্যতম প্রধান হিসেবে তিনি বিবেচিত। 

১৯০৩ সালে মেরি ক্যুরি তেজষ্ক্রিয়তাবিষয়ক গবেষণা ও রেডিয়াম আবিষ্কারের জন্য নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন।
১৯০৩ সালে এমেলিন পাঙ্কহার্স্ট তার দুই মেয়ে সিলভিয়া এবং ক্রিস্টাবেলকে নিয়ে ’ওমেন্স সোশ্যাল অ্যান্ড পলিটিক্যাল ইউনিয়ন’ প্রতিষ্ঠা করেন। 

১৯০৫ সালের ১০ অক্টোবর ক্রিস্টাবেল পাঙ্কহার্স্ট এবং এ্যানি কেনেয়ি নারীর ভোটাধিকারের প্রশ্নে লড়াই করতে গিয়ে প্রথম কারাবন্দি হন। 

১৯০৬ সালে মেরি ম্যাকআর্থার ’ন্যাশনাল ফেডারেশন অব ওমেন ওয়ার্কার্স’ প্রতিষ্ঠা করেন। 

১৯০৮: ১০ নং ডাউনিং স্ট্রিটের সামনে নারীর ভোটাধিকারের পক্ষে আন্দোলনকারী নারীরা নিজেদের শেকলে আবদ্ধ করে প্রতিবাদ জানান। 

১৯১৩: নারীর ভোটাধিকারের পক্ষে সংগ্রামরত এমিলি উইল্ডিং ডেভিসন এপসম ডার্বিতে রাজার ঘোড়ার সামনে নিজেকে ছুঁড়ে দিয়ে আত্মহত্যা করে মেয়েদের ভোটাধিকারের দাবি তুলে ধরেন। 

১৯১৮ সালে ত্রিশোর্ধ্ব নারীরা ভোটাধিকার পান (ব্রিটেন)। 

১৯১৯ সালে ন্যান্সী এ্যাস্টর সংসদে প্রথম নারী সাংসদ হিসেবে তার আসন গ্রহণ করেন। 

১৯২৮ সালে পুরুষের সমশর্তেই নারীরা ভোট দান করেন (ব্রিটেন)। 

১৯২৮ সালে সমকামী সম্পর্ক বিষয়ে র‌্যাডক্লিফে হলের বিতর্কিত উপন্যাস ’নিঃসঙ্গতার কূপ’ বা ’দ্য ওয়েল অব লোনলিলেস’ প্রকাশিত হয়। কয়েক সপ্তাহ না যেতেই উপন্যাসটিকে অশালীন বলে ঘোষণা করা হয় এবং সমস্ত বইয়ের দোকানের শেলফ থেকে সরিয়ে ফেলা হয়। লেখককে অশালীনতার অভিযোগে কাঠগড়ার মুখোমুখি হতে হয়। 

১৯৩৮ ভার্জিনিয়া উলফের ভূমিধ্বস ঘটানো এবং নারীবাদী, যুদ্ধবিরোধী প্রবন্ধ ’দ্য থ্রি গিনিস’ (তিন পয়সা) প্রকাশিত হয়। মূলত, তিনটি প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে উলফ এই প্রবন্ধটি রচনা করেন। তিনটি প্রশ্নই তিন ভিন্ন ভিন্ন সমাজ থেকে লেখা: এক যুদ্ধবিরোধী সমাজ থেকে প্রশ্ন: ’কিভাবে যুদ্ধ প্রতিহত করা যায়?’ মেয়েদের জন্য একটি কলেজ প্রতিষ্ঠার তহবিল থেকে: ’সরকার কেন মেয়েদের শিক্ষার বিষয়টিতে যথেষ্ট পরিমাণ সাহায্য করে না?’ (সত্যি বলতে এই তহবিলটি প্রতিটি পরিবারের ব্যক্তিগত তহবিলের প্রতি ইঙ্গিতপূর্ণ ছিল যে, তহবিল থেকে মেয়েদের বদলে বাড়ির ছেলেদের কলেজে পড়তে পাঠানো হতো। উলফ এই চর্চা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং কর্মজীবী নারীদের জন্য কর্মসংস্থানকে তরান্বিত করার লক্ষ্যে তিনি বলেন: ’মেয়েরা কেন পেশাগত কাজে অংশ নিতে অনুমতি পায় না?’ 

১৯৪১ সালে ’দ্য ন্যাশনাল সার্ভিস অ্যাক্ট’ প্রণীত হয়, যা ২০-৩০ বছর বয়সী অবিবাহিত নারীদের সৈন্যদলে বাধ্যতামূলক যোগদানকে অনুমোদন করে। 

১৯৪৫ সালের ১৯ জুন মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেত্রী এবং নোবেল শান্তি পুরষ্কার বিজয়ী অং সান সূচি জন্মগ্রহণ করেন। 

১৯৪৭ নব্য স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ভারত এই মর্মে ডিক্রি জারি করে যে, শুধুমাত্র লিঙ্গ পরিচয়ের কারণে নারীর প্রতি কোনো বৈষম্য করা যাবে না। 

১৯৪৯- সিমন দ্যু ব্যুঁভোয়া তার ’দ্য সেকেন্ড সেক্স’ প্রকাশ করেন। 

১৯৫২: রাণী এলিজাবেথ দ্বিতীয়ের সিংহাসনে অভিষেক। 

১৯৫৫ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আলাবামার মন্টোগোমারিতে রোজা পার্ক যখন একজন শ্বেতাঙ্গ পুরুষের জন্য তার নিজের বাসের আসন ছেড়ে দিতে অস্বীকৃতি জানান, তখন নিজের অজান্তেই তিনি ’কালো মানুষের নাগরিক অধিকার আন্দোলন’-এর অগ্নিকণিকা সর্বত্র ছড়িয়ে দেন। 

১৯৫৯: তিব্বতি নারীদের বিদ্রোহ। ১৯৫৯ সালের ১২ মার্চ, তিব্বতের ’জাতীয় বিদ্রোহ দিবস’-এর এক দিন পর হাজার হাজার তিব্বতি নারী লাসায় চীনের অবৈধ দখলদারিত্বের প্রতিবাদে পোটালা প্রাসাদের সামনে সমবেত হয়। চৈনিক কর্তৃপক্ষ উত্তরে নিষ্ঠুর বলপ্রয়োগের মাধ্যমে এই আন্দোলনের নেত্রীদের গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তার হন বহু সাধারণ ও নিরীহ নারীও। এই নারীদের অনেকেই অনির্দিষ্টকালের জন্য কারাবন্দি হন এবং অনেককেই নিষ্ঠুরভাবে পিটিয়ে মারা হয়। যাহোক, এসব নিষ্ঠুর পন্থা অবলম্বন করে মেয়েদের সাহসে চিড় ধরানো যায়নি। চৈনিক কর্তৃপক্ষের কাছে তারা ভয়ে মাথা নিচু করেননি। এই ঐতিহাসিক ঘটনাই মুক্তির জন্য তিব্বতি নারীদের আন্দোলনের অগ্নিশিখাকে আরো ছড়িয়ে দেয়। প্রতি বছর ১২ মার্চ তিব্বতি নারীদের ’বিদ্রোহ দিবস’ ভারত, নেপাল এবং বহির্বিশ্বের সর্বত্র ’টিবেটান ওমেন্স অ্যাসোসিয়েশন- কর্তৃক পালিত হয়। প্রতি বছরই জাতীয় স্বার্থে জীবন দেওয়া নারীদের স্মরণ করে প্রার্থনা করা হয়। এই তারিখে টিডব্লিউএ প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা ছাড়াও মোমবাতি জ্বালানো, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ, শান্তির জন্য পদযাত্রা, অনশন, স্লোগান দেওয়া, ব্যানার প্রদর্শন, লিফলেট বিতরণ এবং নানা এলাকায় সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে থাকে। জাতিসংঘ, জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন এবং গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের রাষ্ট্রপতির কাছেও আবেদনপত্র জমা দেওয়া হয়।  

১৯৬১ সালে মেরী স্টোপস ক্লিনিক অবিবাহিত নারীদের জন্য জন্ম নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে পরামর্শ এবং অভিগম্যতা অর্জনে সেশন নেওয়া শুরু করে, অতীতে যা একটি ’ট্যাবু’ বা নিষিদ্ধ বিষয় হিসেবে বিবেচিত হতো। 

১৯৬৩ সালে ভ্যালেন্তিনা তেরেসকোভা মহাশূন্যে প্রথম নভোচারী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন, যখন ’ভস্টক-৬’ পৃথিবীকে ৩৮ বার প্রদক্ষিণ করে। 

১৯৬৩ সালে বেটি ফ্রাইডান তার ধ্রুপদী নারীবাদী গ্রন্থ ’দ্য ফেমিনিন মিস্টিক’ প্রকাশ করেন। 

১৯৬৭ সালে ’গর্ভপাত আইন’ বা ’দ্য অ্যাবরশন অ্যাক্ট’ আইন হিসেবে প্রণীত হয়, যা কিছু বিশেষ শর্তের আওতাধীনে গর্ভপাতকে আইনসিদ্ধ করে। 

১৯৬৯ সালে বৈবাহিক কোনো ভুলের দরকার নেই, বিবাহবিচ্ছেদ কোনো ছাড়াই হতে পারে বলে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। 
১৯৭০- জর্মেইন গ্রিয়ারের ’মহিলা নপুংসক’ প্রকাশিত হয়। 

১৯৭৫ সালে ব্রিটেনে ’লিঙ্গবৈষম্য আইন’ এবং ’সমান মজুরি আইন’ প্রবর্তিত হয়। 

১৯৭৬ সালে জয়াবেন দেশাই উত্তর-পশ্চিম লন্ডনে ’গ্রুনউইক ফিল্ম প্রসেসিং ফ্যাক্টরি’তে বর্ণবাদী কাজের অনুশীলনের বিরুদ্ধে ধর্মঘটকারী শ্রমিকদের একটি গোষ্ঠির মূল কণ্ঠস্বরে পরিণত হন। এটা বিএমই কর্মীদের প্রথম ধর্মঘট, যা মূলধারার শ্রম সংগঠনগুলোর দ্বারাও সমর্থিত হয়। যাহোক, যখন একবার ধর্মঘটকারী ইউনিয়নের ওপর প্রবল পুলিশি নিপীড়ন কৌশল ব্যবহৃত হওয়া শুরু হয়, তখন ইউনিয়নের প্রতি সমর্থন যেন হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। তবু, এই সংগ্রাম আরো দুই বছর চলেছিল। ধর্মঘটের শেষে দেশাই এক জাতীয় ব্যক্তিত্বে পরিণত হন এবং কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গ বৈষম্য ও বর্ণবাদের প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর হয়ে ওঠেন। 

১৯৭৭ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ’এপিস্কোপাল চার্চ’ কর্তৃক জ্যাকুলিন মিন্স প্রথম পুরোহিত হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। 

১৯৭৯ সালের ৪ মে মার্গারেট থেচার রক্ষণশীল দলের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হন। 

১৯৮১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর ’দ্য গ্রিনহ্যাম কমন ওমেন্স পিস ক্যাম্প’ প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৮১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর, ’ওমেন ফর লাইফ অন আর্থ’ গ্রুপটি ইংল্যান্ডের বার্কশায়ারে ’গ্রিনহ্যাম কমন’-এ উপস্থিত হয়। প্রায় ৯৬টি ক্রুজ মিসাইল স্থাপনের বিরোধিতার লক্ষ্যে তারা কার্ডিফ থেকে পদযাত্রা শুরু করেন। এই নারীরা বেস কমান্ডারের কাছে এই মর্মে চিঠিও দেন যে, ’আমরা শিশুদের ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তিত এবং সজীব পৃথিবীর ভবিষ্যতের জন্যও আমরা আশঙ্কিত, যা সকল জীবনের ভিত্তি।’ 

১৯৯১ সালের বিয়ের আওতায় ধর্ষণকে অবশেষে বেআইনি ঘোষণা করা হয়। 

১৯৯৭ সালের লেবার দলের নির্বাচনে বিজয় সংসদে নারী এমপিদের সংখ্যাকে দ্বিগুণ করে, যা নারী সাংসদদের শতাংশ হার ৯ থেকে ১৮ শতাংশে উত্তীর্ণ করে। 

২০০৭ সালের জ্যাকি স্মিথ ইতিহাসের প্রথম নারী স্বরাষ্ট্র সচিব হন। 

২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আল্ডারমাস্টন নারী শান্তি প্রচারকর্মীরা তাদের আইনি বিরোধিতা চালানোর অধিকার অর্জন করে। 

২০১০ সালে ব্রিটিশ সংসদে রুশনারা আলী, শাবানা মাহমুদ এবং ইয়াসমীন কুরেইশিসহ মোট তিনজন নারী সাংসদ যোগ দেন। 

ঢাকা/রফিক


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়