মুসলিম স্থাপত্যের আদি নিদর্শন ষাট গম্বুজ মসজিদ
মুসলিম স্থাপত্যের আদি ও অন্যতম নিদর্শন ষাট গম্বুজ মসজিদ। মিথ আর সত্যের মায়াজালে ঘেরা এ স্থাপত্য তার রহস্যভেদ করতে না দিয়েই পর্যটককে মোহিত করে।
একাশিটি গম্বুজ বিশিষ্ট এ মসজিদের নাম কেন ষাট গম্বুজ হলো, এই নিয়ে নানারকম ব্যাখ্যা আছে। কিন্তু এর সৌন্দর্য আর গাম্ভীর্য নিয়ে কোনো দ্বিমত নেই! খুলনার বাগেরহাটে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এই স্থাপনা।
সম্প্রতি খুলনায় গিয়েছিলাম। আর খুলনায় গিয়ে ষাট গম্বুজ মসজিদ দেখে আসবো না, এমনটাতো হতে পারে না।
বাগেরহাট জেলায় খান জাহান আলী (রা.) এর মাজার থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে ষাট গম্বুজ মসজিদ। আমি খুলনা থেকে গিয়েছিলাম বলে প্রথমেই মসজিদ দেখলাম। লাল পোড়ামাটির উপর লতাপাতা, ফুল, শাখা, ফুলদানির অলংকরণে এই স্থাপনা নির্মিত। মসজিদের ভেতরে বিশাল-বিশাল ছয়টি স্তম্ভ আছে। সেগুলো পাথরের ব্লক দ্বারা ঘেরা। এই সোন্দর্য অসাধারণ।
নানা রকম মিথও শোনা যায় এই মসজিদ নিয়ে। জনশ্রুতি আছে, মসজিদ নির্মাণের পাথরগুলো নদীপথে ভেসে ভেসে এসেছিল!
ভেতরে প্রাকৃতিক এবং স্থাপত্য কৌশলের কারণেই খুব ঠাণ্ডা। যদিও মসজিদটাকে ষাট গম্বজ বলা হয়। কিন্তু গম্বুজের সংখ্যা মোট ৮১টি।
মসজিদের নামকরণ নিয়ে দুইটি মতবাদ প্রচলিত রয়েছে। আভিধানিকভাবে ‘ষাটগম্বুজ’ অর্থ হলো ষাটটি গম্বুজ সম্বলিত মসজির। এ মসজিদটিতে একাশিটি গম্বুজ দেখা যায়। গম্বুজগুলো মসজিদের ছাদে সাতাত্তরটি এবং বাকি চারটি চার কোণের কর্ণার টাওয়ারের উপর অবস্থিত। কেন্দ্রীয় নেভের উপর স্থাপিত সাতটি চৌচালা ভল্ট মসজিদটিকে ‘সাতগম্বুজ’ মসজিদ হিসেবে পরিচিত করে। কালক্রমে ‘সাতগম্বুজ’ই ‘ষাটগম্বুজ’ হিসেবে পরিচিতি পায় অথবা রূপান্তরিত হয়।
তবে এই মত সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য নয়। সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা হচ্ছে, মসজিদ অভ্যন্তরের ষাটটি স্তম্ভ থাকায় ‘ষাট খামবাজ’ (খামবাজ অর্থ স্তম্ভ) হিসেবে পরিচিত হয়েছিল। এই ‘খামবাজ’ শব্দটিই পরবর্তীতে বিকৃতরূপে ‘গম্বুজ’-এ পরিণত হয়ে মসজিদটিকে ষাটগম্বুজ হিসেবে জনপ্রিয় করে তুলেছে।
মসজিদের বাইরে খোলা জায়গা, সবুজ ঘাস; আর বড় বড় খেজুর ও নারকেল গাছ দাঁড়িয়ে রয়েছে। সবমিলিয়ে যেন সুনশান নিরবতা ঘিরে রেখেছে জায়গাটি। পুরনো এই স্থাপনার সামনে দাঁড়িয়ে ধর্মীয় বোধ জাগ্রত হয়, আবার এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মনে এক ধরনের প্রশান্তি দেয়।
এখানে একটি জাদুঘরও আছে। সেখানে প্রাচীন কিছু মুদ্রা এবং ঐ সময়ে ব্যবহৃত অনেক জিনিসপত্র রাখা আছে। সেগুলো দেখলাম।
এরপর এখান থেকে বের হয়ে বাগেরহাটের দিকে প্রায় দেড় কিলোমিটারের মতো গেলাম। সেখানে খান জাহান আলী (রা.) এর মাজার সংলগ্ন বিশাল একটি দীঘি রয়েছে। দীঘিটি অনেক বড় এবং কচুরিপনা দিয়ে ভর্তি, যে কারণে পুরোটা দেখা সম্ভব হয়নি। সেখানে একটি কুমিরও দেখলাম। দীঘির পাড়ে শুয়ে ছিল।
বিচিত্র কাজে ব্যস্ত ছিল মাজারে আসা মানুষেরা। কেউ কুমিরের খাবার দিতে ব্যস্ত আবার কেউ মিলাদের সরঞ্জাম কিনতে ব্যস্ত। কেউ প্রার্থনা করছে, কেউবা হাসছে, কেউ কাঁদছে। আগরবাতির ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়েছে পুরো মাজার প্রাঙ্গনে।
এ এক অপার্থিব ঘ্র্রাণ!
/লিপি