ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  পৌষ ৯ ১৪৩১

রোজার পূর্ণ প্রতিদান পেতে করণীয়

প্রকাশিত: ১০:১৫, ১৩ মার্চ ২০২৪   আপডেট: ১০:৩৬, ১৩ মার্চ ২০২৪
রোজার পূর্ণ প্রতিদান পেতে করণীয়

রহমত, বরকত ও নাজাতের মাস মাহে রমজান। রমজানে আল্লাহ তা’আলা অবারিত বরকত দান করেন। জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেন। জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেন। আবু হোরায়রা রা. বর্ণনা করেন, নবীজি সা. বলেছেন, রমজান শুরুর সাথে সাথে জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়। জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং শয়তানকে করা হয় শৃঙ্খলাবদ্ধ। (বুখারী ও মুসলিম শরীফ)

’এত বড় সুযোগ পাওয়ার পরও রোজার ফজিলত না পাওয়াটা হতভগ্য হওয়া ছাড়া আর কিছুই হতে পারে না। ফযিলত পেতে হলে যে কাজটুকু করতে হবে:
রোজার সমস্ত বিধান পালন করে রোজা রাখতে হবে। বিশিষ্ট সাহাবি আবু হোরায়রা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবীজি সা. বলেছেন, রোজা হলো ঢালস্বরূপ। তোমরা এটাকে ত্রুটিযুক্ত করো না, রোজাকে ভুলে যেও না। কেউ যদি রোজাদারের সাথে ঝগড়ায় লিপ্ত হয় অথবা তাকে গালমন্দ করে তবে সে অন্তত দুইবার বলবে, আমি রোজাদার। (বোখারী)

আবু হোরায়রা রা. অন্য এক বর্ণনায় বলেন, রাসূল সা. বলেছেন, রোজা হলো ঢালস্বরূপ। যতক্ষণ না তোমরা তাকে ছিদ্র করে ফেলো। কেউ জিজ্ঞাসা করলেন, কোন জিনিস সেটাকে ফুটো করে দেয়? তিনি উত্তর দিলেন- মিথ্যা কথা কিংবা অন্য কোন অবাধ্যতা। (আল মু’জামুল আওসাত, হাদীস নং-৭৮১৪)

আরো পড়ুন:

উল্লেখিত হাদীসসমূহের বর্ণনা প্রমাণ করে রোজাকে পরিপূর্ণভাবে আদায় করতে গুনাহ ছাড়ার কোনো বিকল্প নেই। চোখ দিয়ে ইসলাম-নিষিদ্ধ কোনো কিছু দেখা যাবে না, হাত দিয়ে নিষিদ্ধ কোনো কাজ করা যাবে না, মুখ দিয়ে মিথ্যা বলা কিংবা ধোঁকাবাজী করা যাবে না। এক কথায় সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গুনাহ মুক্ত রাখতে হবে। এ জন্য দরকার প্রবল ইচ্ছাশক্তি ও ব্যাপক সাধনা। আমরা যদি গুনাহের ক্ষতির কথা সবসময় মনে রাখতে পারি, তবেই আমাদের পক্ষে গুনাহ ছেড়ে দেওয়া সহজ হবে। দেখুন, মানুষ দুনিয়ার সামান্য ভয়ের কথা স্মরণ করেই অনেক আকাঙ্খিত কাজ ও বস্তু ছেড়ে দেয়। 

গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার এক চমৎকার ঘটনা: 

কোনো এক আলেম বুজুর্গের কাছে এক যুবক এসে বলল, শায়েখ! আপনি বারবার গুনাহের কাজ বর্জন করতে বলেন। কিন্তু আমি শত ইচ্ছা থাকা সত্তেও তা ছাড়তে পারি না। আমি আমার চোখ গুনাহ মুক্ত করতে পারি না। বুজুর্গ ব্যক্তি বললেন, ঠিক আাছে, তুমি আগামী কাল আমার নিকট আসবে। কথামত যুবক পরের দিন গেলে শায়েখ তাকে বললেন, এই বাজারের অপর প্রান্তে আমার এক বন্ধু আছে। তার নিকটে এই এক পেয়ালা দুধ দিয়ে আসতে হবে। যুবক বলল, এটা কোনো কাজ হলো! আমি দিয়ে আসবো। আলেম বললেন, সাবধান! একফোঁটা দুধ যেন না পড়ে। যুবক বলল, হ্যাঁ, পড়বে না। আলেম যুবককে জানিয়ে দিলেন, তোমার সাথে আমি একজন লোক দিচ্ছি, যদি এক ফোঁটা দুধ পেয়ালা থেকে পড়ে, তবে লোকটি বাজারের মধ্যেই সাথে সাথে তোমার গালে থাপ্পর দেবে। 

এবার যুবকটি সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ল। সে খুব সতর্কতার সাথে বাজার অতিক্রম করে আলেমের বন্ধুর নিকট দুধের পেয়ালা পৌঁছে দিয়ে হাসি মুখে আলেমের নিকট হাজির হলো। সম্মানিত আলেম ব্যক্তিটি যুবককে তার কাজ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে সে উচ্ছ্বসিত হয়ে জানালো, আমি ভালোভাবে পূর্ণ দায়িত্বের সাথে আপনার নির্দেশ পালন করেছি। একফোঁটা দুধও পড়েনি আর আমার গালে চপেটাঘাতও লাগেনি। আলেম বললেন, বাহ! বলো তো- রাস্তায় কতজন মেয়ের সাথে সাক্ষাত হয়েছে? তাদের চেহারা কেমন? যবক বলল, বলেন কি! আপনি যে শাস্তির কথা বলেছেন, আমি তো এক মুহূর্তের  জন্যেও দুধের পেয়ালা থেকে অমনোযোগী হইনি। একটি বারের জন্যেও মাথা উপরে তোলার সময় ও সাহস পাইনি। আলেম বললেন, সামান্য এক চপেটাঘাতের ভয়ে যদি একবারও তুমি চোখের খেয়ানত করতে না পারো, তাহলে জাহান্নামের সুনিশ্চিত আজাবের কথা জেনেও কীভাবে দৈনন্দিন জীবনে প্রতিনিয়ত নিষিদ্ধ দিকে দৃষ্টিপাত করো?

ভেবে দেখুন! আমরা যদি আমাদের অন্তরে সামান্যতম আল্লাহর ভয় স্থির করতে পারতাম, আল্লাহ তা’আলা সর্বদা আমাকে দেখছেন- এ খেয়াল করতে পারতাম তবে আমাদের দ্বারা জীবন গেলেও কোনো গুনাহের কাজ হতে পারতো না। রমজান মাসে রোজা আমাদের উপর এজন্যই ফরজ করা হয়েছে, যেন আমরা মুত্তাকী হতে পারি। আসুন আমরা গুণাহ মুক্ত জীবন গড়তে অভ্যস্ত হই। এর মাধ্যমে আমাদের সিয়াম সাধনাকে পূর্ণতায় উত্তীর্ণ করতে সচেষ্ট হই। আল্লাহ তা’আলা আমাদের তৌফিক দান করুন, আমীন।

শাহেদ//

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়