ধনীর সম্পদে গরিবের অংশ আছে
মাওলানা শেখ মু. ফজলে বারী মাসউদ || রাইজিংবিডি.কম
ইসলামের মৌলিক পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে যাকাত একটি। ভারসাম্যপূর্ণ অর্থব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা ও দারিদ্র্য দূর করার জন্য যাকাতের গুরুত্ব অপরিসীম। এ সময়ে বিশ্বের নানান সমস্যার মধ্যে অন্যতম একটি হলো ‘অর্থনৈতিক বৈষম্য’। ধনী-গরিবের আনুপাতিক দূরত্ব প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে। বিশ্বের ৯০ ভাগ সম্পদ ৫ ভাগ মানুষের কুক্ষিগত হচ্ছে। এটা মানব সভ্যতার জন্য চরম অশনি সংকেত। মানুষের জন্য এটা লজ্জাজনক ও হতাশাব্যাঞ্জকও বটে।
মানব জাতি যেন কখনও এ সংকটে পতীত না হয় সে জন্য যাকাত ফরজ করা হয়েছে। ইসলামী অর্থনীতির অন্যতম একটি লক্ষ্য হিসেবে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ ইরশাদ করেছেন: ‘যাতে ধন-সম্পদ কেবল তোমাদের বিত্তশালীদের মধ্যে পুঞ্জীভূত না হয়ে যায়’। (সূরা হাশর: ০৭)
অপরদিকে সম্পদশালীকে মাথায় রাখতে হবে, সে যে সম্পদ অর্জন করেছে বা পেয়েছে এটা নাও পেতে পারতো। কেউ কেবল বুদ্ধি বা জ্ঞান অথবা পরিশ্রমের কারণে ধনী হয়েছে বিষয়টা এমন নয়। সম্পদ আল্লাহ প্রদান করেন নানা উসিলায়। আবার তিনি তা নিয়েও যান নানা কারণে। কাজেই ধনীর প্রাপ্ত সম্পদ নিয়ে অহঙ্কার করার অধিকার নেই।
আবার সে যেন এটা মনে না করে এ সম্পদ তাকে এককভাবে ভোগ করার জন্য দেওয়া হয়েছে। না। বরং এর মধ্যে কিছুটা অংশ অন্যের রয়েছে। আল্লাহ তা’আলা তার সম্পদের মধ্যে অন্যের অংশটুকুও দিয়ে রেখেছেন। আল্লাহ বলেছেন: ‘তাদের (ধনীদের) সম্পদের মধ্যে সম্পদ প্রার্থনাকারী ও বঞ্চিতদের অংশ রয়েছে’। (সূরা যারিয়াত: ১৯) কাজেই গরিবকে তার অংশটুকু পৌঁছে দেওয়া সম্পদশালীর দায়িত্ব। বিষয়টা এমন নয় যে, ধনী-গরিবের দুয়ারে এসে লাইন দিবে তারপর তাকে দিতে হবে। বরং যত তাড়াতাড়ি গরিবের টাকা তাকে পৌঁছে দেয়া হবে তত তাড়াতাড়ি ধনীর সম্পদ নিরাপদ ও পবিত্র হবে।
যাকাতের অর্থ: ১. বৃদ্ধি করা ২. পবিত্র করা/ বিশুদ্ধ করা। কোনো ব্যক্তি প্রয়োজনীয় খরচের অতিরিক্ত নির্ধারিত সম্পদের মালিক হলে বছরান্তে তার সম্পদের শতকরা ২.৫ হারে ইসলাম নির্ধারিত নির্দিষ্ট খাতে প্রদান করাকে ‘যাকাত’ বলা হয়। এটি একটি ফরজ বিধান। কুরআনে যত জায়গায় নামাজের কথা এসেছে তার অধিকাংশ জায়গাতেই যাকাতের আলোচনা আছে। হাদীসে নবীজি (সা.) যাকাত সম্পর্কে বিশদ আলোচনা করেছেন। হযরত ছিদ্দিকে আকবার আবু বকর (রা.) যাকাত প্রদানে অস্বীকৃতি জ্ঞাপনকারীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন।
যাকাত ফরজ হওয়ার শর্ত:
১. মুসলিম হতে হবে
২. আকেল (পাগল না হওয়া) হওয়া
৩. প্রাপ্তবয়স্ক (বালেগ) হওয়া
৪. স্বাধীন হওয়া
৫. নেছাব পরিমান সম্পদ থাকা
৬. প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ হওয়া
৭. সম্পদ তার নিকট এক বছর অতিক্রম হওয়া
৮. ঋণগ্রস্ত না হওয়া। এগুলোর বিস্তারিত ব্যাখ্যা রয়েছে।
যেসব মালের উপর যাকাত হবে:
১. স্বর্ণ (সাড়ে ৭ ভরি)
২. রুপা (সাড়ে ৫২ ভরি)
৩. স্বর্ণের মূল্য মানের নগদ অর্থ
৪. ব্যবসার মাল
৫. গবাদী পশু
৬. উৎপাদিত ফসল
৭. ব্যক্তি মালিকানা খনিজ সম্পদ
যে সব সম্পদের যাকাত হবে না:
১. বসবাসের বাড়ি
২. ব্যবহারের গাড়ি
৩. ব্যবহারের আসবাবপত্র
৪. কলকারখানার যন্ত্রপাতি
৫. ভাড়ায় খাটানো জিনিস
৬. শাকসবজি ইত্যাদি
যাকাতের ফজিলত বা উপকারিতা:
যাকাতের দ্বারা সম্পদ বাড়ে। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে: যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে যাকাত প্রদান করবে আল্লাহ তার সম্পদ বৃদ্ধি করে দেবেন। (সূরা যারিয়াত: ৩৯) অপর দিকে যারা যাকাত দেবেন না তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি। অতএব, আমাদের দায়িত্ব যাকাতের যথাযথভাবে মাসআলাগুলো জেনে সে অনুযায়ী যথানিয়মে যাকাত প্রদান করা। আল্লাহ আমাদের তৌফিক দিন, আমীন।
শাহেদ//