ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  পৌষ ১১ ১৪৩১

বাংলাদেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থার ইতিহাস

সাতসতেরো ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৩৫, ৪ মে ২০২৪   আপডেট: ১৩:১৩, ৪ মে ২০২৪
বাংলাদেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থার ইতিহাস

বাংলাদেশ ব্যাংক কারেন্সি মিউজিয়াম। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। স্বাধীন বাংলাদেশের সরকার বিদেশি ব্যাংক ব্যতীত বাংলাদেশে কার্যরত সকল পাকিস্তানি মালিকানাধীন ব্যাংক অধিগ্রহণ করে ব্যাংকিং ব্যবস্থা বিকাশের পথ তৈরি করে। বাংলাপিডিয়া এবং উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী জানিয়ে দিচ্ছি বিস্তারিত।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস জানতে হলে দৃষ্টি দিতে হবে অবিভক্ত ভারতের ব্যাংক ব্যবস্থার দিকে। ব্যাংক অব ক্যালকাটা অবিভক্ত ভারতের প্রথম ব্যাংক। এটি বর্তমানে ভারতীয় স্টেট ব্যাংক। এ ব্যাংকের কার্যক্রম শুরু হয়েছিল টিপু সুলতান ও মারাঠাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জেনারেল ওয়েলেসলিকে অর্থ সাহায্যের জন্য। ১৮০৬ সালের ২ জুন তারিখে ব্যাংক অব ক্যালকাটা প্রতিষ্ঠিত হয়। পরে ১৮০৯ সালের ২ জানুয়ারি তারিখে এই ব্যাংকের নাম পাল্টে রাখা হয় ব্যাংক অব বেঙ্গল।

এরপরে ১৮৪০ সালে ব্যাংক অব বোম্বে এবং ১৮৪৩ সালে ব্যাংক অব মাদ্রাজ নামে ৩টি প্রেসিডেন্সি ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়।  ১৯২১ সালে এসব ব্যাংকের সমন্বয়ে দি ইম্পেরিয়াল ব্যাংক অব ইন্ডিয়া প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯৩৫ সালে ভারতীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির আগ পর্যন্ত এই ব্যাংক ব্রিটিশ ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে কাজ করে।

আরো পড়ুন:

বাংলা অঞ্চলসহ ব্রিটিশ ভারতে আরও কয়েকটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান কার্যরত ছিল। ব্রিটিশ আমলে বাংলাদেশ এলাকায় লোন অফিস নামে প্রতিষ্ঠিত আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের অবস্থান ছিল। এগুলো হচ্ছে ফরিদপুর (১৮৬৫), বগুড়া (১৮৭২), বরিশাল (১৮৭৩), ময়মনসিংহ (১৮৭৩), নাসিরাবাদ (১৮৭৫), যশোর (১৮৭৬), মুন্সিগঞ্জ (১৮৭৬), ঢাকা (১৮৭৮), সিলেট (১৮৮১), পাবনা (১৮৮২), কিশোরগঞ্জ (১৮৮৩), নোয়াখালী (১৮৮৫), খুলনা (১৮৮৭), মাদারীপুর (১৮৮৭), টাঙ্গাইল (১৮৮৭), নীলফামারী (১৮৯৪) এবং রংপুরে (১৮৯৪)। অপরদিকে ব্যাংকসমূহের মধ্যে ছিল কুড়িগ্রাম ব্যাংক (১৮৮৭), কুমারখালী ব্যাংক (১৮৯৬), মহালক্ষ্মী ব্যাংক, চট্টগ্রাম ব্যাংক (১৯১০), দিনাজপুর ব্যাংক (১৯১৪), কুমিল্লা ব্যাংকিং কর্পোরেশন (১৯১৪) এবং কুমিল্লা ইউনিয়ন ব্যাংক (১৯২২)। যে সকল ভারতীয় ব্যাংকের এতদঞ্চলে শাখা ছিল সেগুলি হচ্ছে: ন্যাশনাল ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (১৮৬৪), বেঙ্গল সেন্ট্রাল ব্যাংক (১৯১৮), নিউ স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক (১৯২০), ইম্পেরিয়াল ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (১৯২১), হাবিব ব্যাংক (১৯৪১) এবং ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড (১৯৪২)।

দেশ ভাগের পরের বছর অর্থাৎ ১৯৪৮ সালে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপরে ১৯৪৯ সালে ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান নামে একটি বাণিজ্যিক ব্যাংক প্রতিষ্ঠা লাভ করে। পাকিস্তানে সর্বমোট ৩৬টি বাণিজ্যিক ব্যাংক কার্যরত ছিল যার মধ্যে সে সময় পূর্ব পাকিস্তানে শুধু ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান, হাবিব ব্যাংক এবং অস্ট্রেলেশিয়া ব্যাংকের একটি করে শাখা ছিল। ওই সময়ে দি ইউনাইটেড ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক এবং কমার্স ব্যাংক নামক চারটি পাকিস্তানি ব্যাংক ১৯৫৯-১৯৬৫ সময়কালে বাংলাদেশ অঞ্চলে ব্যাংকিং ব্যবসায় পরিচালনা করে। পূর্ব পাকিস্তানের নাগরিকদের মালিকানাধীন ঢাকায় প্রধান কার্যালয়সহ মাত্র ২টি ব্যাংক ছিল। ব্যাংক দুটি হচ্ছে ইস্টার্ন মার্কেন্টাইল ব্যাংক লি. যা বর্তমানে পূবালী ব্যাংক লিমিটেড এবং ইস্টার্ন ব্যাংকিং কর্পোরেশন লিমিটেড  যা বর্তমানে উত্তরা ব্যাংক লিমিটেড। এ ব্যাংক দুটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল যথাক্রমে ১৯৫৯ এবং ১৯৬৫ সালে।

ব্রিটিশ এবং পাকিস্তান আমলে বাংলাদেশ অঞ্চলে ব্যাংকিং ব্যবস্থা ধীরে বিকাশ লাভ করে। এ অঞ্চলে ১৯০১ সালে বিভিন্ন ব্যাংকের মাত্র ২৫টি শাখা ছিল যা ১৯৪৬ সালে ৬৬৮টিতে উন্নীত হয়। পাকিস্তান সৃষ্টির পর ব্যাংকিং সেক্টরের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয় এবং ১৯৫০ সালে ব্যাংক শাখার সংখ্যা ১৪৮টিতে নেমে আসে। ১৯৬৫ সালে এ সংখ্যা আবার ৫৪৫টিতে উন্নীত হয়। ১৯৬৫ সালের পরবর্তী সময়ে পরিস্থিতির নাটকীয় পরিবর্তন সাধিত হয় এবং ব্যাংকের শাখার সংখ্যা ১৯৭০ সালে ১,০৭৫টিতে দাঁড়ায়।

১৯৭২ সালের ব্যাংক জাতীয়করণ আদেশের মাধ্যমে বাংলাদেশি মালিকানাধীন ২টি ব্যাংকসহ অধিকৃত ১০টি পাকিস্তানি ব্যাংকের একত্রীকরণের মাধ্যমে ৬টি স্বতন্ত্র ব্যাংক গঠিত হয়। সেগুলোকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

বাংলাদেশে পাকিস্তান থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত ১,১৩০টি শাখা নিয়ে এর কার্যক্রম শুরু করে। নতুন নামকরণকৃত ও পুনর্গঠিত ব্যাংকগুলো হচ্ছে: সোনালী ব্যাংক (দ্য ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান, দ্য ব্যাংক অব বাহওয়ালপুর, দ্য প্রিমিয়ার ব্যাংক), অগ্রণী ব্যাংক (হাবিব ব্যাংক, কমার্স ব্যাংক), জনতা ব্যাংক (দ্য ইউনাইটেড ব্যাংক, দ্য ইউনিয়ন ব্যাংক), রূপালী ব্যাংক (দ্য মুসলিম কমার্শিয়াল ব্যাংক, দ্য স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক), পূবালী ব্যাংক (দ্য অস্ট্রেলেশিয়া ব্যাংক, দ্য ইস্টার্ন মার্কেন্টাইল ব্যাংক) এবং উত্তরা ব্যাংক (দ্য ইস্টার্ন ব্যাংকিং কর্পোরেশন)।

বাংলাদেশ ব্যাংক  দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং এটি বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার, ১৯৭২ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়। স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তান-এর ঢাকাস্থ ডেপুটি গভর্নরের অফিসকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে এর সমস্ত দায় ও সম্পদ গ্রহণপূর্বক বাংলাদেশ ব্যাংকরূপে পূর্ণ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মর্যাদায় উন্নীত করা হয়। 

/লিপি


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়