ঢাকা     শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪ ||  অগ্রহায়ণ ৭ ১৪৩১

মাকে মনে পড়ে

এস এম জাহিদ হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৪৬, ১১ মে ২০২৪   আপডেট: ১৯:৪৯, ১৩ মে ২০২৪
মাকে মনে পড়ে

ছবিতে মায়ের বামে দাঁড়ানো লেখক

শামসুর রাহমানের কবিতা ‘কখনো আমার মাকে’ পড়তে পড়তে মনে হয় এ যেন আমারই মায়ের ছবি। সত্যিইতো আমার মা জাহানারা বেগমকে কখনও কোনো গান গাইতে শুনিনি। মা ছিলেন নেপথ্যচারিণী। কোনদিন জানা হয়নি মা কখনো চুল বাঁধতে বাঁধতে গান গাইতেন কি না।  আমি ছিলাম মায়ের দীর্ঘ কাঙিক্ষত সন্তান। মায়ের বিয়ের পাঁচ বছর পর আমার জন্ম। শুনেছি ওই সময়টুকুতে মা হতে না পারার জন্য মাকে অনেক লাঞ্ছনা, গঞ্জনা সহ্য করতে হয়েছে। আমার জন্মের পর মা যেন নারী জীবনের পূর্ণতা অর্জন করেন। তখনকার সমাজ ব্যবস্থায় নারী মা হতে না পারলে তার সামাজিক আর মানসিক অশান্তির শেষ সীমা ছিল না। যারা মাকে ‘বাজা’বলে গালি দিতেন, তাদের মুখ বন্ধ হলো। পুত্র সন্তান জন্ম দিয়ে মা সংসারে, সমাজে আট-দশজন নারীর মতো সমাদৃত হলেন। এই গল্প মা নানাভাবে, নানা সময়ে বলতেন।

ছোটো বেলায় মা আমাকে চোখে চোখে রাখতেন। বড়বেলায় কোথাও গেলে আমি না ফেরা পর্যন্ত মা কখনো ঘুমাতেন না। যতক্ষণ না আসতাম তার দোয়ার মধ্যে থাকতাম। মায়েরাতো এমনই হয়। মা আমাকে পেয়ে কতটুকু সুখী হয়েছিলেন জানি না, কিন্তু আমি আমার মায়ের সন্তান হতে পেরে গর্বিত। মমতাময়ী মায়ের হাতের রান্না সব সন্তানেরই প্রিয়। আমিও ব্যতিক্রম নই। এখন কত রকম খাবার খাই কিন্তু মায়ের হাতের রান্নার সেই স্বাদ গন্ধ আর কোথাও পাই না। মায়ের হাতের মসুরের ডাল খেলে মনে হতো অমৃত খাচ্ছি।

একটুখানি জ্বর এলেই মা অস্থির হয়ে পড়তেন। সে সময় জ্বর  হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের কাছে নেওয়া হতো না। বাড়িতেই প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হতো। মা বার্লি রান্না করে দিতেন। অনেক সময় সেই বার্লি খেয়েই সুস্থ হয়ে যেতাম। মা গভীর মনোযোগ দিয়ে জামা সেলাই করতেন। মায়ের সেলাই করা জামা পড়ে আমার শৈশব আরও রঙিন হয়ে উঠতো। 

আরো পড়ুন:

মা নিয়মিত নামাজ আদায় করতেন। এক ওয়াক্ত নামাজও বাদ দিতেন না এমনকি পারতপক্ষে কাজাও করতেন না। মা যেদিন আমাদেরকে ছেড়ে চলে গেলেন সেদিনও তিনি আসরের নামাজ পড়ার জন্য ওযু করে এসেছিলেন। হঠাৎ অসুস্থতা বোধ করেন। আমার স্ত্রী, কন্যা বুঝতে পেরে মাকে খাটে শুইয়ে দেয়। আমি তখন বাড়িতে ছিলাম না। মা বলেছিলেন, জাহিদকে খবর দাও। মা ধীরে ধীরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন। একটি দিনও মাকে ভুগতে হয়নি, হাসপাতালে শুয়ে থাকতে হয়নি। মায়ের এই চলে যাওয়া আমাকে অপার শূন্যতায় ভাসিয়ে দিয়ে গেছে।

মাকে কোথাও খুঁজে পাই না আর...। স্রষ্টা আমার মাকে ভালো রাখুন, সব মায়েদের ভালো রাখুন।

/লিপি/

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়